কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে মানবসভ্যতার কৌতূহল বহু পুরোনো; কিন্তু আজকের মতো এমন বাস্তব ও ব্যাপক উদ্বেগ এর আগে কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং এখন আর সায়েন্স ফিকশনের বিষয় নয়; এগুলো বিশ্ব অর্থনীতি, সমাজ, সর্বোপরি কর্মসংস্থানের কাঠামোকে ভেতর থেকে বদলে দিচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সর্বশেষ ‘ফিউচার অব জবস রিপোর্ট ২০২৫’ আমাদের একটি নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী একদিকে যেমন আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯২ মিলিয়ন চাকরি বিলুপ্ত হওয়ার পথে, তেমনই অন্যদিকে ১৭০ মিলিয়ন নতুন ধরনের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। অর্থাৎ নিট হিসাবে ৭৮ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান যুক্ত হতে চলেছে। এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, এটি এক প্রবল পেশাগত রদবদলের ইঙ্গিত, যেখানে টিকে থাকার চাবিকাঠি হবে অভিযোজন ও নতুন দক্ষতা অর্জন।

এই পরিবর্তনকে শুধু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আরেকটি ধাপ ভাবলে ভুল হবে। আগের শিল্পবিপ্লবগুলো মানুষের শারীরিক শ্রমকে যন্ত্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করেছিল; কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরাসরি মানুষের কগনিটিভ বা জ্ঞানীয় দক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তাই এবার আঘাত আসছে ‘হোয়াইট কলার’ বা বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাগুলোর ওপরও। তবে শুধু প্রযুক্তিই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ, ভূরাজনৈতিক বিভাজন এবং জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনও এই রূপান্তরে বড় ভূমিকা রাখছে।

যেসব পেশা ঝুঁকির মুখে: বিলুপ্তির পথে রুটিন কাজ

প্রথমেই বোঝা দরকার, এআই ঠিক কোন ধরনের কাজকে প্রতিস্থাপন করছে। মূলত, যে কাজগুলো পুনরাবৃত্তিমূলক, নিয়মভিত্তিক এবং যেখানে খুব বেশি সৃজনশীলতা বা পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় না, সেগুলোই সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
• অফিস ও প্রশাসনিক কাজ: ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, ব্যাংক টেলার, পোস্টাল সার্ভিস ক্লার্ক এবং সাধারণ ক্লার্কের মতো পদগুলো দ্রুত প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে। অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন (ওসিআর) এবং রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন সফটওয়্যারগুলো এখন নিমেষেই হাজার হাজার ডকুমেন্ট স্ক্যান, ডেটা এন্ট্রি ও ফাইল ব্যবস্থাপনার কাজ করতে পারে, যা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভুল ও দ্রুত।
• গ্রাহকসেবা: সাধারণ গ্রাহকসেবা প্রতিনিধি বা কল সেন্টারের কর্মীদের একটি বড় অংশ চ্যাটবট ও ভয়েসবেসড এআই দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। আজকের ভার্চু৵য়াল অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো শুধু নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরই দেয় না; বরং গ্রাহকের আবেগ বিশ্লেষণ করে কথোপকথন চালিয়ে যেতেও সক্ষম। ফলে কেবল জটিল ও সংবেদনশীল সমস্যা সমাধানের জন্যই মানুষের প্রয়োজন পড়ছে।

• উৎপাদন ও শিল্প: কারখানার অ্যাসেম্বলি লাইনে কর্মীদের জায়গা রোবট বহু আগেই নিতে শুরু করেছিল। এখন এআই-চালিত সিস্টেমের মাধ্যমে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, মাননিয়ন্ত্রণ এবং প্রেডিক্টিভ মেইন্টেন্যান্সের মাধ্যমে যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণও স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ সাধারণ শ্রমিকের চাহিদা কমছে।
• ফাইন্যান্স ও অ্যাকাউন্টিং: বুককিপিং, ইনভয়েসিং এবং সাধারণ অ্যাকাউন্টিংয়ের কাজগুলো এখন এআই–চালিত সফটওয়্যার সহজেই করে দিচ্ছে। এমনকি বেসিক অডিটিং এবং আর্থিক জালিয়াতি শনাক্তকরণের মতো কাজও অ্যালগরিদম দিয়ে করানো সম্ভব হচ্ছে, যা আগে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের একচেটিয়া দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হতো।
• পরিবহন: চালকবিহীন গাড়ি বা অটোনোমাস ভেহিকল এখনো পুরোপুরি রাস্তায় নামেনি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ট্রাক, ট্যাক্সি ও ডেলিভারি চালকদের পেশা যে বড় ঝুঁকির মুখে, তা নিয়ে প্রযুক্তিবিদেরা একমত।

তবে এর অর্থ এই নয় যে এই ক্ষেত্রগুলোতে মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে; বরং কাজের ধরন বদলে যাবে। যেমন গ্রাহকসেবা প্রতিনিধির জায়গায় আসবেন ‘এআই ট্রেনার’ বা ‘কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স স্ট্র্যাটেজিস্ট’, যাঁরা এআই সিস্টেমকে আরও উন্নত করবেন এবং গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে নতুনভাবে ডিজাইন করবেন।

প্রতিষ্ঠানের কৌশল: মানবকেন্দ্রিক উৎপাদনশীলতার উত্থান

এই পরিবর্তনের মুখে করপোরেট জগৎ বসে নেই। মার্সারের ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট ট্রেন্ডস ২০২৪–২৫’ রিপোর্ট অনুযায়ী, আজকের পৃথিবীতে মানব সম্ভাবনাকে উন্মোচন করার জন্য মানুষকে অবশ্যই রূপান্তরের কেন্দ্রে রাখতে হবে। ৪১ শতাংশ নির্বাহী কর্মকর্তার মতে, কর্মীদের দক্ষতার ঘাটতি তাঁদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।

এ কারণে ২০২৫ সালের জন্য মানবসম্পদ বিভাগগুলোর প্রধান অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে 'পিপল ম্যানেজারদের দক্ষতা বৃদ্ধি’। যার মধ্যে সহানুভূতিশীল এবং অনুপ্রেরণাদায়ক নেতৃত্বের মতো সফট স্কিল অন্তর্ভুক্ত। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বুঝতে পারছে, শুধু প্রযুক্তি প্রয়োগ করলেই উৎপাদনশীলতা বাড়বে না; বরং মানবকেন্দ্রিক কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে। এর অর্থ হলো কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য, কাজের সন্তুষ্টি ও দক্ষতার উন্নয়নকে সমান গুরুত্ব দেওয়া।

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত: ভবিষ্যতের উজ্জ্বল পেশা

ঝুঁকির কালো মেঘের আড়ালেই লুকিয়ে আছে সম্ভাবনার বিশাল আকাশ। এআই-চালিত অর্থনীতিতে যে নতুন পেশাগুলোর চাহিদা বাড়বে, সেগুলো মূলত প্রযুক্তি, কৌশল এবং মানবিকতার মেলবন্ধনে তৈরি হবে। এই নতুন ভূমিকাগুলো কেবল প্রযুক্তি তৈরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং প্রযুক্তিকে পরিচালনা করা, এর নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনার কাজ করবে। ডেটা বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে পরিবেশ সুরক্ষা—সব ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞরা হবেন ভবিষ্যতের মূল চালিকাশক্তি।
• প্রযুক্তিকেন্দ্রিক ভূমিকা: ডেটা সায়েন্টিস্ট, এআই ও মেশিন লার্নিং স্পেশালিস্ট, ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যানালিস্টদের চাহিদা বাড়বে দ্রুতগতিতে। ডেটাকে বলা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর জ্বালানি; আর এই জ্বালানিকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার কারিগর হলেন ডেটা বিজ্ঞানীরা।
• পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন: জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় এআই একটি বড় হাতিয়ার। ফলে অটোনোমাস ও ইলেকট্রিক ভেহিকেল স্পেশালিস্ট, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার এবং রিনিউয়েবল এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়ছে। এমনকি কৃষিক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ব্যবহারে বিপুল সংখ্যক নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।
• কৌশল ও নৈতিকতা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার যত বাড়বে, ততই এর নৈতিক ও আইনি কাঠামো তৈরির প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। এআই এথিসিস্ট, গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট এবং প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারদের মতো ভূমিকাগুলো এই শূন্যস্থান পূরণ করবে।
• মানবকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা: ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে মানুষ ও এআই একসঙ্গে একটি দল হিসেবে কাজ করবে। এই মিশ্র দলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য ‘হিউম্যান-মেশিন টিমিং ম্যানেজার’ প্রয়োজন হবে, যিনি মানুষের সৃজনশীলতা এবং যন্ত্রের নির্ভুলতার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারবেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও লিঙ্গবৈষম্য: ঝুঁকিতে নারী কর্মীরা

বর্তমান যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের কর্মক্ষেত্রের চেহারা দ্রুত বদলে দিচ্ছে। যদিও প্রযুক্তিগত এই উন্নতি মানবসভ্যতার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, তবে তা সবার জন্য সমান সুযোগ নিয়ে আসছে না। জাতিসংঘ প্রকাশিত ‘জেন্ডার স্ন্যাপশট ২০২৫’ রিপোর্ট অনুযায়ী, এআইয়ের কারণে বিশ্বজুড়ে নারী কর্মীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নারী কর্মীর প্রায় ২৮ শতাংশ এআই দ্বারা প্রতিস্থাপনের ঝুঁকিতে রয়েছেন, যেখানে পুরুষ কর্মীদের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় ২১ শতাংশ। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো নারীরা এখনো মূলত এমন কিছু পেশায় নিয়োজিত, যেমন প্রশাসনিক কাজ ও গ্রাহকসেবা, যা সহজেই অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব।

এআইয়ের উৎকর্ষের এ সময়ে যখন প্রযুক্তি লিঙ্গসমতা আনার একটি সম্ভাবনাময় হাতিয়ার হতে পারত, তখন সঠিক নীতিনির্ধারণের অভাবে বরং তা বিপরীত ফলও বয়ে আনতে পারে। যদি নারী কর্মীদের জন্য প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে ঢোকার উপযুক্ত সুযোগ তৈরি না করা হয়, তবে এআই–বিপ্লব বিদ্যমান লিঙ্গবৈষম্যকে আরও গভীর করে তুলবে।

এখনই সময়, যখন সরকার, নীতিনির্ধারক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ডিজিটাল প্রশিক্ষণে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, সায়েন্স, টেকনোলোজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথ (এসটিইএম) শিক্ষা খাতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং নীতিনির্ধারণে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো ছাড়া এই বৈষম্য কমানো সহজ হবে না।

যেখানে যন্ত্র নয়, মানুষই শেষ কথা

প্রযুক্তির এত অগ্রগতির পরেও কিছু মানবিক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে যন্ত্রের প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। এই ক্ষেত্রগুলো টিকে থাকবে সহানুভূতি, সৃজনশীলতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তার ওপর ভিত্তি করে।
• স্বাস্থ্যসেবা: এআই হয়তো নির্ভুলভাবে রোগনির্ণয় করতে পারবে; কিন্তু একজন চিকিৎসকের সহানুভূতির স্পর্শ, রোগীর পরিবারকে ভরসা দেওয়া বা জটিল পরিস্থিতিতে নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজটি যন্ত্রের পক্ষে সম্ভব নয়। নার্স, থেরাপিস্ট এবং মনোবিজ্ঞানীদের মতো পেশা তাই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
• শিক্ষা: একজন শিক্ষক শুধু তথ্য দেন না, তিনি ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রেরণা জোগান, তাঁদের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করেন। এআই ব্যক্তিগত টিউটর হতে পারে; কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষকের বিকল্প হতে পারে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দক্ষ শিক্ষকের চাহিদা বিপুল হারে বাড়বে।
• সৃজনশীল শিল্প ও কৌশল: এআই হয়তো ছবি আঁকতে বা কবিতা লিখতে পারে; কিন্তু মৌলিক শিল্পকর্মের পেছনে যে জীবনদর্শন, অভিজ্ঞতা ও আবেগ কাজ করে, তার উৎস মানুষ। শিল্পী, লেখক, কৌশলবিদ এবং শীর্ষ পর্যায়ের পরিচালকদের ভূমিকা হবে এআইকে একটি টুল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের সৃজনশীলতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।

ভবিষ্যতের মুদ্রা দক্ষতা, ডিগ্রি নয়

ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান কোনো নির্দিষ্ট ডিগ্রির ওপর নির্ভর করবে না; বরং নির্ভর করবে একগুচ্ছ দক্ষতার ওপর। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী, নিয়োগকর্তারা এখন সফট স্কিলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
• শীর্ষস্থানে থাকা দক্ষতা: নিয়োগকর্তাদের মতে, আগামী পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো হলো বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনা। এর পরেই রয়েছে সহনশীলতা ও দ্রুত মননশীলতা, কৌতূহল ও আজীবন শেখার আগ্রহ এবং প্রযুক্তিগত সাক্ষরতা।
• প্রযুক্তিগত দক্ষতার চাহিদা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বিগ ডেটা ব্যবহারের দক্ষতা সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর সঙ্গে নেটওয়ার্ক ও সাইবার নিরাপত্তার জ্ঞানও অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
• নেতৃত্বের নতুন সংজ্ঞা: আজকের নেতাদের শুধু নির্দেশ দিলেই চলবে না, তাদের মধ্যে সহানুভূতি, সামাজিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা এবং প্রতিভা ব্যবস্থাপনার দক্ষতাও থাকতে হবে।

কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো একসময় যেসব দক্ষতাকে অপরিহার্য ভাবা হতো, যেমন দ্রুত পড়া, লেখা বা গণিতের দক্ষতা; সেগুলোর গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকছে। কারণ, এই কাজগুলো এআই সহজেই করতে পারে। এর বিপরীতে, পরিবেশগত দায়বদ্ধতার মতো দক্ষতা প্রথমবারের মতো শীর্ষ দশে উঠে এসেছে।

উপসংহার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগমনকে চাকরির বাজারের শেষ হিসেবে দেখার কোনো কারণ নেই। এটি আসলে একটি যুগের অবসান এবং নতুন এক যুগের সূচনা। সর্বশেষ তথ্য বলছে, চাকরির বাজার সংকুচিত হওয়ার বদলে নিট হিসাবে বড় হচ্ছে। রুটিনমাফিক ও বিরক্তিকর কাজগুলো যন্ত্রের হাতে ছেড়ে দিয়ে মানুষ আরও বেশি সৃজনশীল, কৌশলগত এবং মানবিক কাজে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ পাবে। ঝুঁকি তাদেরই, যারা পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন না। আর সম্ভাবনা তাদের জন্য, যারা নতুনকে স্বাগত জানিয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে মনোযোগী হবেন। জয় শেষ পর্যন্ত তাঁদেরই হবে, যাঁরা যন্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে, যন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের মানবিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবেন।

সুতরাং, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হলে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সরকারি—এই তিন স্তরেই সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। ব্যক্তিকে হতে হবে একজন আজীবন শিক্ষার্থী, নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে হবে এবং নিজের মানবিক দক্ষতা, যেমন সৃজনশীলতা ও সহানুভূতিকে শাণিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজাতে হবে, মুখস্থনির্ভর শিক্ষার বদলে সমস্যা সমাধান ও সমালোচনামূলক চিন্তার ওপর জোর দিতে হবে। আর সরকার ও নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব হবে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে নারী-পুরুষনির্বিশেষে কর্মীরা সহজেই নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন এবং চাকরি পরিবর্তনের কঠিন সময়ে সামাজিক সুরক্ষা পাবেন। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাই নিশ্চিত করবে যে প্রযুক্তি যেন মানবতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে না যায়; বরং মানব সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

কাজী হাসান রবিন, শিক্ষক ও গবেষক। রিজিওনাল অ্যাম্বাসেডর (সাউথ এশিয়া), অ্যালামনাই ইউ কে, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত র প র ট অন য য় ন শ চ ত কর গ র হকস ব কর ম দ র সহ ন ভ ত ব যবহ র স জনশ ল প রব ন ক জ কর নত ন দ ম নব ক কর ম র পর ব শ র কর ম র জন য র ওপর ব যবস আজক র সহজ ই

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে নিহত ১, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে গেছে। এতে নিচে থাকা একজন পথচারী নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

এর আগেও গত বছর সেপ্টেম্বরে ফার্মগেট এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে গিয়েছিল।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক জানান, বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন বলে তাঁরা শুনেছেন। তবে তাঁর নাম, পরিচয় জানা যায়নি।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনার কারণে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথেই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কখন চালু হবে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। এর ফলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। এ ঘটনায় বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয়বার বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছে।

মেট্রোরেলের লাইনের নিচে উড়াল পথের পিলারের সঙ্গে রাবারের এসব বিয়ারিং প্যাড থাকে। এগুলোর প্রতিটির ওজন আনুমানিক ১৪০ বা ১৫০ কেজি। এসব বিয়ারিং প্যাড ছাড়া ট্রেন চালালে উড়াল পথ দেবে যাওয়া কিংবা স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্যেই মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ