সংস্কারপ্রক্রিয়ায় সংবিধানের মূলনীতি থেকে সমাজতন্ত্রও বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অথচ সমাজতন্ত্র ব্যতিরেকে বৈষম্য নিরসন দুরূহ ব্যাপার। সোভিয়েত স্টাইলের সমাজতন্ত্র বিংশ শতাব্দীর ৮০ ও ৯০ দশকে পরিত্যক্ত হয়ে গেলেও ‘একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের’ নানা পরিবর্তিত মডেল বিশ্বের নানা দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করায় সফলভাবে অনুসৃত হয়ে চলেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভিয়েতনামের মডেল।

১৯৫৫ সালে মার্কিন পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দক্ষিণ ভিয়েতনামে জেঁকে বসেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ২০ বছর ধরে ভিয়েতনামে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র বনাম উত্তর ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মহা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। প্রায় ২০ লাখ ভিয়েতনামির মৃত্যুর বিনিময়ে ওই যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ভিয়েতনাম, লজ্জাজনক পরাজয় মেনে নিয়ে দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে ১৯৭৫ সালে পালাতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে।

ভিয়েতনাম বিজয় অর্জন করেছে ১৯৭৫ সালে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে ১৯৭১ সালে। দুই দশকের চরমবিধ্বংসী স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ভিয়েতনাম বাংলাদেশের মতো বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হিসেবে বিবেচিত হতো।

আরও পড়ুনবিশ্বের বিস্ময় হো চি মিনের ভিয়েতনাম১৯ মে ২০২০

১৯৭৫ সালে সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম যখন বিজয়ী দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল, তখন ‘জ্বলে পুড়ে–মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়’—সুকান্তের এই অবিস্মরণীয় কবিতার লাইনটি আক্ষরিকভাবে প্রযোজ্য ভিয়েতনামের জনগণের ক্ষেত্রে। এ সত্ত্বেও ভিয়েতনাম কখনোই কোনো দেশের কাছে মাথা নত করেনি, ভিক্ষার জন্য হাত পাতেনি। এমনকি অনুদান ও ‘সফট লোনের’ আশায় জাতিসংঘে স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতেও আবেদন করেনি। অথচ কী নিদারুণ কষ্টকর ছিল ১৯৭৫-পরবর্তী বছরগুলোতে ভিয়েতনামের জনগণের জীবন! ভিয়েতনামের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ১৯৭৪ সালে ছিল মাত্র ৬৫ ডলার।

১৯৮৬ সালে ‘দই মই’ সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের আগে ১৯৮৫ সালে তা ছিল ২৮৫ ডলার। ২০২৫ সালে আইএমএফের প্রাক্কলন মোতাবেক ভিয়েতনামের মোট জিডিপি ৪৯০ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাব মোতাবেক ২০২৫ সালে ভিয়েতনামের মাথাপিছু জিডিপি ৪ হাজার ৮০৬ ডলারে পৌঁছে গেছে, যেটাকে ‘মিরাকল’ বলা হচ্ছে। ২০২৪ সালে ভিয়েতনামের মাত্র ২ শতাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে।

১৯৮৬ সালে ‘দই মই’ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার ৩৯ বছর পর এখন পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিন্তকেরা ভিয়েতনামের অর্থনীতিকে ‘সোশ্যালিস্ট-ওরিয়েন্টেড মার্কেট ইকোনমি’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। দই মই কর্মসূচিতে ‘কালেকটিভ ফার্মিং’ নিষিদ্ধ করে জমির ওপর জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দই মই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রধান তিনটি ডাইমেনশন হলো ১.

অত্যন্ত শক্ত হাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উদারীকরণ, ২. অত্যন্ত দ্রুত অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বিনিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি হস্তক্ষেপ হ্রাসের মাধ্যমে ব্যবসা করার খরচ ও বাধাবিঘ্ন কমিয়ে ফেলা এবং ৩. রাষ্ট্রীয় খাতের বিনিয়োগ প্রবলভাবে জোরদার করার মাধ্যমে মানব উন্নয়ন (শিক্ষা) ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রথম অগ্রাধিকারে পরিণত করা। বিশেষত, প্রাইমারি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে ভিয়েতনাম ২০০০ সালের মধ্যেই তার পুরো জনসংখ্যাকে শতভাগ শিক্ষিত করে তুলেছে এবং জনগণের বিশাল একটি অংশকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনে সফল করে তুলেছে।

ভিয়েতনামের একদলীয় শাসন আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তবু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, আয়বৈষম্য নিরসন ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে কীভাবে ভিয়েতনাম অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে লাইনচ্যুত হয়ে স্বৈরশাসনে পরিণত হয়েছিল।

ভিয়েতনামের জনগণের শতভাগ ২০২৫ সালে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় সেবা পেয়ে চলেছে। জনসংখ্যা নীতির ব্যাপারে ভিয়েতনাম কঠোরভাবে ‘দুই সন্তান নীতি’ অনুসরণ করে চলেছে। আয় ও সম্পদ বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম অত্যন্ত যত্নে বৈষম্য বৃদ্ধির প্রবণতাকে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফলকে কয়েকটি নগরে কেন্দ্রীভূত না করে ভিয়েতনাম গ্রামীণ জনগণের মধে৵ উন্নয়নের সব ডাইমেনশনকে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।

বৈদেশিক বিনিয়োগকে প্রবলভাবে উৎসাহিত করে চলেছে ভিয়েতনাম। স্যামসাং, এলজি, অলিম্পাস ও পাইওনিয়ার—এসব কোম্পানির দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় হাব এখন ভিয়েতনামে। এখন ভিয়েতনামে প্রতিবছর বৈদেশিক বিনিয়োগপ্রবাহ দাঁড়াচ্ছে ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার। এই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গতিশীলতার পেছনের চাবিকাঠি হলো ভিয়েতনামে দুর্নীতির প্রকোপ অনেক কম, ভিয়েতনামের শ্রমশক্তি ও মানব পুঁজি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শিক্ষিত, দক্ষ এবং পরিশ্রমী।

আরও পড়ুনগাজা এখন ইসরায়েলের ভিয়েতনাম২২ মে ২০২৫

ভিয়েতনামের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চমকপ্রদ। বন্দর, মহাসড়ক ও সুলভ গণপরিবহনের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম দ্রুত আধুনিকায়নে সফল একটি দেশ। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম এখন বাংলাদেশকে হটিয়ে মাঝেমধ্যে গণচীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থান দখল করে নিচ্ছে।

ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানিতে এখন সিঙ্গাপুরের পর ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। চাল রপ্তানিতে থাইল্যান্ডকে হটিয়ে ভিয়েতনাম ভারতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। ব্রাজিলের পর কফি রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। সাড়ে ৯ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভিয়েতনামের মোট রপ্তানি আয় বাংলাদেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।

২০২৫ সালে ভিয়েতনামের মোট জিডিপি ৪৯০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু নমিনাল জিডিপি প্রাক্কলিত হয়েছে ৪ হাজার ৮০৬ ডলারে, যা ১৯৮৫ সালে ছিল মাত্র ২৮৫ ডলার। তুলনামূলকভাবে ২০২৫ সালের জুনে বাংলাদেশের মোট জিডিপি প্রাক্কলিত হয়েছে ৪৬২ বিলিয়ন ডলার আর মাথাপিছু জিডিপি নির্ধারিত হয়েছে ২ হাজার ৮২০ ডলার। ২০২৪ সালে ভিয়েতনামের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৪০৫ বিলিয়ন ডলার; আর বাংলাদেশের পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

ভিয়েতনামের রপ্তানি আয়ের এক-চতুর্থাংশ এনে দিচ্ছে স্যামসাং। অথচ ভিয়েতনামে যাওয়ার আগে স্যামসাং তাদের কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েছিল বাংলাদেশে, চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায়। বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে ভিয়েতনামে চলে গিয়েছিল।

ভিয়েতনামের একদলীয় শাসন আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তবু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, আয়বৈষম্য নিরসন ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে কীভাবে ভিয়েতনাম অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে লাইনচ্যুত হয়ে স্বৈরশাসনে পরিণত হয়েছিল।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়েছে যে ২০০৯–২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন আমলে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ভিয়েতনামে এ ধরনের পুঁজি পাচারের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। দেশের পুঁজি দেশেই বিনিয়োগ হয়েছে, যার সঙ্গে প্রতিবছর যুক্ত হয়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গণচীনের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে গণচীনে উৎপাদনরত অনেক শিল্পকারখানা এখন ভিয়েতনামে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সোভিয়েত স্টাইলের সমাজতন্ত্রকে যে যুগোপযোগী সংস্কার করতেই হবে, এটা বুঝে নিয়েই ভিয়েতনাম ‘দই মই’ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলে ‘একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের’ মাধ্যমে অর্থনৈতিক মিরাকল ঘটানো সম্ভব, সেটিরই অকাট্য প্রমাণ ভিয়েতনাম।

ড. মইনুল ইসলাম সাবেক অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ভ ত অবক ঠ ম ২০২৫ স ল অবস থ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবহন খাত বাঁচাতে দোষীদের ধরুন

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশের জ্বালানি–বাজার পরিকল্পিত ধ্বংসের শিকার। বছরের পর বছর ধরে জ্বালানি–বাজার একটি চক্রের কাছে কুক্ষিগত হয়ে আছে। যখন যে সরকারই থাকুক, তাদের কোনো নড়চড় হয় না। ডিপো থেকে পাম্প পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ভেজাল মিশিয়ে জ্বালানিকে যানবাহন ধ্বংসের ‘বিষে’ পরিণত করেছে চক্রটি। পুরো সরবরাহশৃঙ্খলাজুড়ে নিম্নমানের ও ভেজাল তেল মিশিয়ে কোটি কোটি ভোক্তাকে পরিকল্পিতভাবে প্রতারিত করে যাচ্ছে তারা। অথচ কর্তৃপক্ষ আশ্চর্যজনকভাবে নির্বিকার।

এই অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা কেবল ব্যক্তিগত নয়; তা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় অর্থনীতির স্তরে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে
প্রতিফলিত হচ্ছে।

শিল্প খাতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, পণ্য পরিবহনে ব্যয় বাড়ছে, জ্বালানির অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হচ্ছে। জনজীবনের প্রাত্যহিক যাতায়াত বিঘ্নিত হচ্ছে। রাষ্ট্রের ওপর জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে; জ্বালানি খাতের স্বচ্ছতার অভাবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ-বৈশিষ্ট্যও নড়বড়ে হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ভেজাল মিশিয়ে ডিপো থেকেই বাজারে যাচ্ছে নিম্নমানের তেল। ভেজাল তেলের কারণে গাড়ি ও মোটরসাইকেলের মাইলেজ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। একাধিক ভোক্তা বলেছেন, আগে প্রতি লিটারে ৮-৯ কিলোমিটার মাইলেজ পাওয়া যেত। কিন্তু দুই মাস ধরে মাইলেজ ৫-৬ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে বিএসটিআই অভিযান চালালেও তেলের মান পরীক্ষা হয় না।

আগে তেল চুরি হতো তাপমাত্রার অজুহাত দেখিয়ে। এখন তার সঙ্গে ভেজাল মেশানোর কায়দা যুক্ত হয়েছে। ডিপোতে এনে কম দামের ভেজাল তেল অকটেন-পেট্রলে মিশিয়ে কোটি কোটি টাকা লুট করা হচ্ছে। এর সঙ্গে ট্যাংকার মালিক, পাম্প মালিক সবাই জড়িত বলে শক্ত অভিযোগ আছে। কিন্তু মূল উৎস যে ডিপো, সেটিই অভিযানের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে এটিকে আর নজরদারিতে অবহেলাজনিত অপরাধ বলা যাচ্ছে না। বরং এটি কাঠামোগত সহায়তায় প্রায় অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক চুরি।

ভেজাল তেলে চলা গাড়ি ও মোটরসাইকেল কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মাইলেজ হারাচ্ছে, ট্যাংক ও কার্বুরেটর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে ধাতব ক্ষয় ধরছে এবং অনেক ক্ষেত্রে যানবাহনের কাঠামোই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর ফলে একদিকে ব্যক্তির খরচ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবহন খাতের দক্ষতা কমে যাচ্ছে। শিল্প ও বাণিজ্যে এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে।

এ জালিয়াতির বিস্তৃত প্রভাব আরও গভীর। প্রতিদিনের যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছে, রাষ্ট্রের জ্বালানিব্যবস্থার ওপর আস্থা কমছে, আর্থিক অপচয় বাড়ছে—এভাবে জাতীয় অর্থনীতিও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় তদারকির শৈথিল্য, পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা এবং অপরাধীদের প্রতি শিথিলতা এই সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে জরুরি তিনটি পদক্ষেপ অপরিহার্য। প্রথমত, ডিপো পর্যায়ে তেল পরীক্ষার জন্য আধুনিক ল্যাব ও
বাধ্যতামূলক মান নিরীক্ষা চালু করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভেজাল–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিল, আর্থিক জরিমানা ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, ভোক্তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য স্বচ্ছ ও সুলভ ব্যবস্থা গড়ে তুলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মানুষের গাড়িতে ভেজাল তেল ঢেলে অর্থনৈতিক রক্তক্ষরণ চলতে দেওয়া যায় না। জনগণের অর্থ, সময় ও নিরাপত্তা—এই তিন স্তম্ভ রক্ষার জন্যই রাষ্ট্রকে এখনই সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। এ অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ—কঠোর নজরদারি, কঠিন শাস্তি এবং নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রত্যাবর্তন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ বছরে তিব্বত ব্র্যান্ডের কোহিনূরের মুনাফা বেড়ে চার গুণ
  • যাচাই ও প্রস্তুতি ছাড়াই কেন আন্তর্জাতিক মর্যাদা
  • জুলাই সনদে ‘জুলাই’ কোথায়
  • কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে ধস: সরকারি নীতির প্রভাবে বছরে কমল ৪৩ শতাংশ
  • বিএনপি এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে: টুকু
  • নিজেদের ইতিহাস জেনে-বুঝে সংগ্রাম জারি রাখতে হবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবদের
  • ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয় ৫১৬৩ ডলার
  • ১৬ বছর বাড়িঘরে থাকতে পারি নাই, ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছি
  • পরিবহন খাত বাঁচাতে দোষীদের ধরুন