রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি দৈনিক কালবেলা ও স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশে পত্রিকার তানোর উপজেলা প্রতিনিধি।

লুৎফর রহমান যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (৫০), জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম ওরফে কুসুম (৪০) এবং তানোর পৌর বিএনপির নেতা মো.

ইয়াসিন (৫২)।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা দেখব। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

লিখিত অভিযোগে লুৎফর রহমান উল্লেখ করেন, ২৩ অক্টোবর তানোরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া এসেছিলেন। তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে সেখানে যান। এ সময় পূর্বশত্রুতার জের ধরে মিজানুর রহমান তাঁকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগালি শুরু করেন। পরে অন্য আসামিদের হুকুম দিয়ে বলেন যে, ‘...জনমের মতো সাংবাদিকতা শিখিয়ে দে।’ হুকুম পেয়ে রবিউল ইসলাম কুসুম তাঁর গালে সজোরে থাপ্পড় মারেন।

অভিযোগে সাংবাদিক লুৎফর লেখেন, ‘আমি অতর্কিত হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াসিন আমাকে এলোপাতাড়িভাবে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করেন। একপর্যায়ে রবিউল ইসলাম হুমকি দিয়ে বলেন, “গাড়ি থেকে অস্ত্র নিয়ে এসে চিরদিনের মতো শেষ করে দে। যা হয় পরে দেখা যাবে।” তখন ইয়াসিন গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করেন। তখন মিজানুর রহমান বলেন, “এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, ধরা পড়ে যাবি।” প্রায় ১০ মিনিট ধরে আসামিরা আমাকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারার পর মিজানুর রহমান আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং বলেন, “এই মুহূর্তে এলাকা ছেড়ে যাবি, নতুবা এখানেই তোর লাশ পড়ে যাবে।” পরে অনেকেই ছুটে এসে আমাকে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা করেন।’

অভিযোগে লুৎফর রহমান আরও উল্লেখ করেন, ‘চড়-থাপ্পড়ের কারণে আমি বাম কানে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলি।’ পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমিও অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও বিষয়টি জেনে আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে দেখব।’

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেদিন কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার কার্ড দেওয়া হচ্ছিল। লুৎফর রহমান বিএনপির লোক পরিচয়ে কার্ড নিতে এসেছিলেন। তখন আমাদের লোকজন জিজ্ঞেস করেন, তিনি কিসের বিএনপি। এই নিয়ে কথা-কাটাকাটি। দলের লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আমি সেখানে ছিলাম বলে তাঁকে বাঁচিয়েছি। তা না হলে তো তাকে মেরেই ফেলত।’

গত ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল ছিল। সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণ করা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়। পরে মিজানুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ন র রহম ন ল ৎফর রহম ন ব এনপ র য বদল র

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় নকল খাদ্য উৎপাদন কারখানায় অভিযান : জরিমানা ও কারাদণ্ড

ফতুল্লায় নকল খাদ্য উৎপাদন কারখানায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও র‌্যাব।

এসময় কারখানার মাকিককে এক লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এসময় অভিযানে দেখা যায়, কারখানাটি জীবন বিপন্নকারী রং এবং কেমিক্যাল মিশিয়ে বিদেশি লেভেল লাগিয়ে বিদেশি সস তৈরি করছে। এসকল সস কালীবাজার ও দিগুবাজারে সরবরাহ করা হত যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী কমিশনার মো. তারিকুল ইসলাম জানান, অভিযানে নকল সস উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ করায় কারখানার মালিক মো: ওয়াহিদকে (৪৩) নিরাপদ খাদ্য আইনে এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড এবং ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ