নারী সংবাদকর্মীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনা ও যৌন হয়রানির বিচার দাবি
Published: 26th, October 2025 GMT
ঢাকা স্ট্রিমের সংবাদকর্মী স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনা ও যৌন হয়রানির বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। এ ঘটনায় ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা কনটেন্ট এডিটর আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাঁর বিচার দাবি করা হয় মানববন্ধনে।
আজ রোববার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
১৯ অক্টোবর রাজধানীর একটি বাসা থেকে স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই নারী অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা স্ট্রিমে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা কনটেন্ট এডিটর আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে যৌননিপীড়নের অভিযোগকারীদের মধ্যে তিনিও ছিলেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যে জানা যায়।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘আমাদের প্রায়ই নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার ঘটনায় বিচারের দাবিতে সমবেত হতে হচ্ছে। দু-একটি ঘটনার বিচার হলেও বেশির ভাগ সহিংসতার ঘটনায় যুক্ত অপরাধীর বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো শাস্তি হতে দেখা যায় না।’
ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘বিচারব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ হতে হবে। নারীর প্রতি সংবেদনশীল আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা প্রচার করে ঠিকই, তবে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হতে দেখা যায় না। এভাবে নিজের ঘর অন্ধকার রেখে সমাজ আলোকিত করা যায় না।’
মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘অভিযুক্ত সাংবাদিক আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও এ সকল ঘটনার কোনো সুষ্ঠু বিচার হতে দেখা যায়নি। ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হলে স্বর্ণময়ীর অকালে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটত না।’
এ সময় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্তকে আশ্রয় না দিয়ে শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি ঘটনার প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীরা কর্মস্থলে, পরিবারে এবং জনপরিসরে ক্রমাগত সহিংসতার শিকার হয়েই যাচ্ছে। গণমাধ্যমে কর্মরত নারী সাংবাদিকেরা যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও এ সকল ঘটনায় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। সাংবাদিকতায় নারীর অগ্রসর হওয়াকে নিশ্চিত করতে হলে কর্মস্থলে নারীর নিরাপত্তা ও সহিংসতার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুননারী গণমাধ্যমকর্মীর আত্মহত্যা: সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি২১ অক্টোবর ২০২৫বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের শাহনাজ সুমী বলেন, যৌন নিপীড়নকারীকে শাস্তির মুখোমুখি করার পরিবর্তে যাঁরা প্রশ্রয় দিচ্ছেন, তাঁরাও সমান অপরাধী। এমন নিপীড়কের সাফাই না গেয়ে তাঁকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে আরও বক্তব্য দেন উইক্যান অ্যালায়েন্সের মারফিয়া নূরশিফা, গণসাক্ষরতা অভিযানের জয়া সরকার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি মাখদুমা নার্গিস রত্না, প্রচার ও গণমাধ্যম উপপরিষদের সদস্য সেবিকা দেবনাথ। মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
আরও পড়ুনরাজধানীতে নারী গণমাধ্যমকর্মীর লাশ উদ্ধার১৯ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে বা
পার্বত্য চট্টগ্রামে জোরপূর্বক খ্রিস্টানকরণের মাধ্যমে খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে বান্দরবানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সামনে ‘সর্বস্তরের খ্রিস্টান সম্প্রদায়’ ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন শতাধিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।
আরো পড়ুন:
ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি বেরোবি শিক্ষার্থীদের
ইসকন সদস্যদের সন্ত্রাসবাদের প্রতিবাদে বুটেক্সে মানববন্ধন
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একটি দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেই রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। খ্রিস্টান হয়ে জন্ম নেওয়া কোনো অপরাধ নয়। এটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করা হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে সব সম্প্রদায়ের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করে আসছে। বাইবেল নিয়ে ধর্মীয় উপদেশ বা সভা-সমাবেশ করা মানে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র নয়।
বক্তারা আরো বলেন, আমরা দেশের আইন মেনে চলি, জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। যে রাষ্ট্রে জন্মেছি, তাকে ধ্বংস করার কোনো ষড়যন্ত্র আমরা করতে পারি না।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য লালজার লম বম, মানবাধিকার কর্মী লেলুং খুমী, জামান সাইলুক, দিনেন্দ্র ত্রিপুরা ও জজ ত্রিপুরা। এ সময় বান্দরবানের বিভিন্ন চার্জের পাদ্রীরাও উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, এখানে স্থানীয়দের জোরপূর্বক খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তর করা হচ্ছে।
এ ধরনের অপপ্রচার পার্বত্য চট্টগ্রামের মাত্র ৩.২৬ শতাংশ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য অপমানজনক, অস্বস্তিকর এবং অপবাদমূলক। এটি তাদের অস্তিত্বকে ধ্বংসের লক্ষ্যে পরিচালিত একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
এতে আরো বলা হয়েছে, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমানভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগের সাংবিধানিক অধিকার থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্রিস্টানরা ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা সময় হয়রানির শিকার হচ্ছেন-যা সংবিধান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ঢাকা/চাই মং/মেহেদী