একীভূত ব্যাংকের নাম হবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক
Published: 27th, October 2025 GMT
দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংক পাঁচটি থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ব্যাংকটি একীভূত হলে জনবল ও শাখা নেটওয়ার্কের ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি আমানতকারীদের চাপ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেটি নিয়েও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে একীভূত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকার গঠিত কমিটি নতুন ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর ব্যাংকটির নাম নিবন্ধন সম্পন্ন হবে। নতুন ব্যাংকটির নাম চূড়ান্ত হয়েছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সংকটে পড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে। একীভূত ব্যাংকটি অধিগ্রহণ করবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকে ২০ হাজার কোটি টাকার মূলধন জোগান দেবে সরকার। ফলে শুরুতে এটি হবে সরকারি খাতের একটি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক বছর ধরে এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে কাজ করছে। এ নিয়ে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও দায় পর্যালোচনা, ব্যাংক পাঁচটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও সময় দেওয়ার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৯ অক্টোবর পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার প্রস্তাব অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এতে সিদ্ধান্ত হয়, নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৩৫ হাজার কোটি। পরিশোধিত মূলধনের ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। যার ১০ হাজার কোটি টাকা নগদে এবং বাকি ১০ হাজার কোটি সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। শেয়ার রূপান্তরের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধনে রূপান্তর করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের গ্রাহক ও অন্যান্য পাওনাদারের ঋণের একাংশ শেয়ারে রূপান্তর হবে। পরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এই শেয়ারের অর্থ নগদায়ন করা হবে।
একীভূত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকার গঠিত কমিটি সূত্র জানায়, নতুন ব্যাংকের জন্য সংঘবিধি ও সংঘস্মারক চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে এখন। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। সেখানে অনাপত্তি পেলে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এরপর নিবন্ধনের জন্য পাঠানো হবে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি)। এরপর সরকার মূলধনের টাকা দিলে ব্যাংক পাঁচটির দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পাঁচ ব্যাংকের আমানত, ঋণ ও ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা নতুন করে নিরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংক পাঁচটির জনবল, প্রযুক্তি বিভাগ ও নেটওয়ার্কের হিসাব–নিকাশ চলছে।
একীভূত প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, অনেক জেলা শহরে পাঁচ ব্যাংকের শাখা আছে। ওই শহরে একটি বা দুটি শাখা রেখে অন্যগুলোকে অন্য উপজেলায় স্থানান্তর করা হবে। এ জন্য শাখাগুলো কোথায় স্থানান্তর করা যায়, তার সম্ভাব্য তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব শাখা পরিচালনা করতে কত জনবল প্রয়োজন, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে ব্যাংক পাঁচটির নতুন নামে নামকরণ হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। তবে একীভূত করতে যে প্রক্রিয়া মেনে চলা হবে, তা অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ব্যাংকের আমানত, ঋণ, জনবল, শাখা ও এটিএম নেটওয়ার্কের হিসাব-নিকাশ চলছে। আশা করছি শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক এক ভ ত নত ন ব য এক ভ ত ক প রক র য় অন ম দ র জন য ত কর র ইসল ম সরক র ম লধন
এছাড়াও পড়ুন:
সাপ আসে, জোয়ারের পানি উঠে , অযত্নে কমিউনিটি ক্লিনিক
কমিউনিটি ক্লিনিক এখন অযত্ন, অবহেলার শিকার। কোনো কোনোটির ছাদ ও দেয়াল খসে পড়ছে। কোনোটিতে যাওয়া-আসার রাস্তা নেই। আবার কোনোটিতে জোয়ারের পানি ঢোকে। বাস্তবতা হলো, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে না।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর এ চিত্র ধরা পড়েছে। সাংবাদিকেরা দেখেছেন, অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের গ্লুকোমিটার কাজ করে না। কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী নেই। অন্তত একটি এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতে হয়।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা গত আগস্ট মাসের শেষ দুই সপ্তাহে দেশের ৮ বিভাগের ৮ জেলার ৩২টি ক্লিনিক সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন, অনেক ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা নেই, কিছু বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে, কিছু ক্লিনিক ভাঙাচোরা, কয়েকটি ক্লিনিকের টয়লেট খারাপ, প্রায় সব ক্লিনিকের গ্লুকোমিটার যন্ত্র অলস পড়ে আছে। ক্লিনিকগুলোতে জনবলের সংকট আছে, আছে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ। বস্তুত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামের মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
এই ৮ জেলা হচ্ছে পঞ্চগড়, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও নওগাঁ। এ ছাড়া খুলনাসহ আরও কিছু জেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা জানা গেছে মুঠোফোনে কথা বলে।
প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা মানুষের মতামত নিয়েছেন, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) সঙ্গে কথা বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের বক্তব্য নিয়েছেন। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অসন্তুষ্টি দেখা গেছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর এ চিত্র ধরা পড়েছে। সাংবাদিকেরা দেখেছেন, অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের গ্লুকোমিটার কাজ করে না। কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী নেই। অন্তত একটি এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতে হয়।কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার মূল দায়িত্ব সিএইচসিপির। তাঁরা সরকারের রাজস্ব খাতের ১৬তম গ্রেডের কর্মী। সিএইচসিপিকে সহায়তা করেন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী। তাঁরাও রাজস্ব খাতের একই গ্রেডের কর্মী। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকে কোনো আয়ার পদ নেই। বিদ্যুৎ বিল সরকার দেয় না। কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য ১১ সদস্যের কমিউনিটি গ্রুপ থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, জমিদাতা, সিএইচসিপি এই গ্রুপের সদস্য। গ্রুপটি স্থানীয়ভাবে তহবিল গঠন করে আয়ার বেতন ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে।
মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। ২০০১ সালের পর কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরে ২০০৯ সালে আবার চালু হয়। সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৬০।
এসব ক্লিনিক থেকে ২২ ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দৈনিক গড়ে পাঁচ লাখ মানুষের এসব ক্লিনিক থেকে সেবা পাওয়ার কথা। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিকের নাম পাল্টে ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ করার সুপারিশ করেছে।
প্রথম আলোর পর্যবেক্ষণের বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান আগস্টে বলেছিলেন, প্রায় ১০ শতাংশ কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের অবস্থা খারাপ, এগুলোর সংস্কার দরকার। সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রতিটি ক্লিনিকে ওষুধ নিয়মিতভাবে পাঠানো হচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা গত আগস্ট মাসের শেষ দুই সপ্তাহে দেশের ৮ বিভাগের ৮ জেলার ৩২টি ক্লিনিক সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন, অনেক ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা নেই, কিছু বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে, কিছু ক্লিনিক ভাঙাচোরা, কয়েকটি ক্লিনিকের টয়লেট খারাপ, প্রায় সব ক্লিনিকের গ্লুকোমিটার যন্ত্র অলস পড়ে আছে। ক্লিনিকগুলোতে জনবলের সংকট আছে, আছে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ।তবে গতকাল শুক্রবার খুলনার দাকোপ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মে মাসের পর ওই উপজেলার ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ পৌঁছায়নি। একটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কাছে প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছু নেই। গ্রামের মানুষ এলে শুধু প্যারাসিটামল দিচ্ছেন, স্বাস্থ্যশিক্ষা দিচ্ছেন আর দুঃখ প্রকাশ করছেন।
চারদিকে পানি জমায় কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে যাওয়ার উপায় নেই। ফলে গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে চলে ক্লিনিকের কার্যক্রম। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার কায়েতকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকে