প্যারাগুয়ের চুরির ভিডিওকে ভারতে বাংলাদেশির বলে প্রচার
Published: 27th, October 2025 GMT
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায় এক ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে একটি বাড়ির কাঁটাতারের প্রাচীর পেরিয়ে আঙিনায় ঢুকে সাইকেল চুরি করছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে প্রচার করা হয়েছে যে এটি ভারতের একটি চুরির ঘটনা, যেখানে একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিন্দু ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে সাইকেল চুরি করেছে।
২৩ অক্টোবর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল @RealBababanaras ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মোহাম্মদ জুবায়ের একজন হিন্দু ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে চুরি করার সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ ধরনের অবৈধ রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
একই দাবি করে আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকেও পোস্ট হয় একই ভিডিও।
লিংক: এখানে, এখানে, এখানে
তবে ভিডিওটি যাচাই করে দেখা যায় যে দাবি অনুযায়ী ভিডিওটির সঙ্গে ভারতের কোনো সম্পর্ক নেই। ভিডিওটি প্যারাগুয়ের রাজধানী আসুনসিওনে সংঘটিত একটি চুরির ঘটনা। তা–ও ছয় মাসের আগের।
আলোচিত দাবিটি যাচাইয়ে ভিডিওটি ইনভিড টুলের মাধ্যমে কি-ফ্রেম বিশ্লেষণ করে গুগল লেন্সে সার্চ করা হলে দেখা যায়, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে প্যারাগুয়ে-ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল Radio Caritas UC তাদের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে একই ভিডিও শেয়ার করেছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে উল্লেখ ছিল যে আসুনসিওনের একটি বাড়িতে এক ব্যক্তি বেড়ার ধারালো কাঁটতারের প্রাচীর পেরিয়ে প্রবেশ করে এবং সাইকেল চুরি করে।
লিংক: এখানে
গুগল লেন্স খোঁজ করে আরও দেখা যায়, SNT Paraguay নামের প্যারাগুয়ে–ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে একজন সাংবাদিক ভাইরাল ভিডিওটির ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।
ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিও থেকে জানা যায়, এটি আসুনসিওনের Barrios Jara, Bella Vista এলাকায় ঘটেছে। ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি বাড়ির উঠান থেকে দুটি সাইকেল চুরি করেছে। প্রতিবেশীরা নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি করছেন।’
লিংক: এখানে
Unicanal নামে প্যারাগুয়ের টিভি চ্যানেল চলতি বছরে ১ মে এই ভিডিওটি তাদের ফেসবুক পেইজে আপলোড করে।
লিংক: এখানে
যাচাইয়ের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয় যে ভিডিওটি ভারতে সংঘটিত কোনো চুরির ঘটনার নয়। এটি প্যারাগুয়ে শহরের স্থানীয় ঘটনার ভিডিও। ভারতে বাংলাদেশি অভিবাসীর সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।