আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত হয়েছে। সংখ্যাটি আগের বারের চেয়ে ৬১১টি বেশি, তবে ভোটকক্ষ কমছে ১৬ হাজারের মতো।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে এবার ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত সংখ্যাটি জানান।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন জানিয়ে আখতার আহমেদ বলেন, প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১।

দেশের ৬৪টি জেলার ৩০০ আসনে এ ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুরুষদের জন্য ভোটকক্ষ থাকবে ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি। নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি। সব মিলিয়ে মোট কক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯। গড়ে তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ।

এ ছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র হিসেবে প্রাথমিকভাবে ১৪টি থাকবে বলে জানান ইসি সচিব। সেগুলোর কক্ষসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪২ হাজার ১৫০টি। ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮টি। সেই হিসেবে এবার ভোটকেন্দ্র বাড়লেও ভোটকক্ষ কমছে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। এই নির্বাচন আয়োজনে ইসি যে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে।

এ নিয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। তবে সপ্তাহের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে। এতে উদ্বেগের কিছু নেই, সময়মতো সব প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব হবে।’

আখতার আহমেদ জানান, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিয়ে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নিবন্ধন সম্পন্ন হতে পারে। পর্যবেক্ষক সংস্থার ক্ষেত্রেও কাজ দ্রুত এগোচ্ছে।

জোটের ক্ষেত্রে একদলের প্রতীক অন্য দলের ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে বিএনপির বিরোধিতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। কমিশন সবার জন্য গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নেবে।

আরও পড়ুনত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র কতটি, জানা যাবে আগামীকাল১৮ ঘণ্টা আগে

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের অধ্যাদেশের খসড়া ইতিমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিয়েছে। সংশোধিত আইনে জোট গড়লেও অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ থাকছে না। এই বিধানে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি ইসিকে চিঠি দিয়েছে।

জুলাই সনদের স্বীকৃতির জন্য গণভোট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, গণভোট সম্পর্কে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে কোনো তথ্য আসেনি। যে বিষয়ে তথ্য নেই, সে বিষয়ে মন্তব্য করার সুযোগও নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আখত র আহম দ ভ টক ন দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভোট সুষ্ঠু না হলে বাতিল করা হবে, প্রধান উপদেষ্টার কাছে এমন ঘোষণা চায় জামায়াত

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তা বাতিল করা হবে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে এমন ঘোষণা চাইছে জামায়াতে ইসলামী।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে এই আহ্বান রাখা হয় বলে আজ সোমবার এক গোলটেবিল বৈঠকে জানান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। একশনএইড বাংলাদেশ এবং প্রথম আলোর আয়োজনে এ গোলটেবিল বৈঠকটি হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে।

আবদুল্লাহ তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যাতে আলোচনায় বসা হয়। সেই আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘন না করার অঙ্গীকার করবে, সেটি টেলিভিশনে প্রচার করা হবে, দেশবাসী দেখবে। এরপরও নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে প্রধান উপদেষ্টা সেই নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেবেন, জাতিকে যেন এমন কথা বলেন। কারও মাধ্যমে নির্বাচনে ব্যত্যয় ঘটলে জনগণই এই বিষয়টি দেখবে।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যারা জিতবে তাদের গলায় মালা দেবে জামায়াত।– সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, নায়েবে আমির, জামায়াতে ইসলামী

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। দলগুলো আন্তরিক এবং প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে অবাধ নির্বাচন সম্ভব মন্তব্য করে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যারা জিতবে তাদের ‘গলায় মালা দেবে’ জামায়াত।

গত ৫৪ বছরে দেশের ‘ব্যর্থতার’ পেছনে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়াটাকে একটা বড় কারণ হিসেবে দেখান জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হবে। নির্বাচনের আচরণবিধি সব দলকে মানতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব অঙ্গীকার শুধু নয়, নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিজেদের ভিতরে পরিবর্তন আনতে হবে।

দেশে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বহু লড়াই হয়েছে, বহু পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের পরে যে নেতৃত্ব ক্ষমতায় এসেছে, তারা জনআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একমত হয়ে কাজ করেনি, বরং তারা দুর্নীতি করে, নেতিবাচক সব কাজ করে পরিবর্তনের সুযোগটা নষ্ট করেছে। তারা বৈষম্য তৈরি করেছে, সমাজে পচন ধরিয়েছে, সুশাসনের বিপরীতে বাজে শাসন দিয়েছে। মানুষ সেখান থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

তবে জুলাই অভ্যুত্থানে পরিবর্তনকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখার কথা জানান জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ তাহের। তিনি একই সঙ্গে বলেন, এই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ মানুষই কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর। অভ্যুত্থানের পরে এই শ্রেণির মানুষদের অবহেলা করা হয়েছে।

সভা পরিচালকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হলে জামায়াত কত মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে, তা উল্লেখ করেনি। তবে জামায়াত ক্ষমতায় যেতে পারলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। দুই কারণে এটি সম্ভব হবে। একটা হচ্ছে দুর্নীতি যাতে না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। দারিদ্র্যের একটা বড় কারণ দুর্নীতি। সুশাসন নিশ্চিত ও প্রশাসনের সর্বত্র জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি কমানো যাবে। জামায়াত একটা মৌলিক পরিবর্তনের জন্যই কাজ করছে।

এর আগে দেশের নয়টি জেলায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের প্রাপ্ত সুপারিশ আজকের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশ উইমেন রাইটস লিড মরিয়ম নেছা। সভা পরিচালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।

আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, ২০০৭–০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ইষ্ট ওয়েষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ