নারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে: রাশেদা কে চৌধূরী
Published: 27th, October 2025 GMT
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নারীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সর্বস্তরে আস্থার সংকট আছে বলে মনে করছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী।
নারীদের ভোটাধিকার নিয়ে একটি উঠান বৈঠকের আলোচনার খণ্ডাংশ তুলে ধরে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বলছে, ভোট না হয় না দিলাম। কিন্তু আমার ভোটটা যদি অন্য কেউ দিয়ে দেয়? এই যে আস্থার সংকটটা, এইটা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। এটা আস্থার সংকটটা আছে মানুষের মনের মধ্যে যে, আমরা যথাযথভাবে আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবো কি না? সেটা সর্বস্তরে আছে।'
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন রাশেদা কে চৌধূরী। একশনএইড বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দেশের নয়টি জেলায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক থেকে উঠে আসা সুপারিশগুলো তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশ–এর উইমেন রাইটস লিড মরিয়ম নেছা। গোলটেবিল বৈঠকটি পরিচালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
নির্বাচনে নারীদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা না থাকলে দেশের নারীরা এগিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে না বলে উল্লেখ করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো অনেক বেশি কমিটমেন্ট বা সদিচ্ছা না দেখায়, তাহলে নারী পারবে না। মানি (অর্থ), মাসল পাওয়ারের (পেশিশক্তি) যে প্রভাব বিগত সব নির্বাচনে কম-বেশি দেখা গেছে, সেখানে নারী প্রান্তিক হয়ে যাবে।
নির্বাচনকালীন নানা শঙ্কার কথা তুলে ধরে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘একটা হচ্ছে সুষ্ঠু, আরেকটা হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক, আরেকটা হচ্ছে যে সহিংসতা। নারীর বিষয়ে আরেকটি মানে উদ্বেগের জায়গা উঠে আসে নির্বাচন পূর্বে এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জায়গা।’ সেজন্য সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতি থাকা জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগের খুবই প্রয়োজন’ উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য একেবারে লুটপাট, দুর্নীতি সবই বন্ধ করা সম্ভব, মানে একটা মিনিমাম জায়গায় আনা সম্ভব– যদি বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করে।’
বাংলাদেশে নারীরা সবচেয়ে বেশি বিচারহীনতার শিকার হচ্ছে বলে মনে করেন রাশেদা কে চৌধূরী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারাই কিন্তু বিচার পাচ্ছে না। কোথাও যখন নির্যাতিত হচ্ছে, রাস্তাঘাটে হোক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হোক অথবা কর্মস্থলে হোক, সে তো বিচার পাচ্ছে না।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, আগামী সরকারের কাছে দুটো বড় মাপের প্রত্যাশা থাকবে। সেটা হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা আর সুশাসন।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ইষ্ট ওয়েষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত অংশ নেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
এবার জনগণই ভোট পাহারা দেবে: সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জনগণ বহু বছর পর স্বাধীনভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার একটা সুযোগ পেতে যাচ্ছে। তাই এবার জনগণই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে। জনগণই ভোট পাহারা দেবে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে, মুখ্য হবে ভোটারদের ভূমিকা।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন: রাজনৈতিক দলের কাছে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। একশনএইড বাংলাদেশ এবং প্রথম আলোর আয়োজনে এ গোলটেবিল বৈঠকটি হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে।
গোলটেবিল বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অবশ্যই নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও জনগণই প্রধান অংশীজন। নির্বাচন কমিশন শুধু নির্বাচন পরিচালনা করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলা দেখে এবং সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্ব থাকে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সবাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে লক্ষ্যে বিএনপি যাবতীয় ভূমিকা রাখবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপির অঙ্গীকার ছিল ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে পারলে এরপর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা দলগুলো নির্বাচনে জয়ী হলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। এসব দফায় অনেকগুলো কমিশন গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। সেসব কমিশনের অনেকগুলো অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে। তবে সংস্কার কমিশনগুলোর মাধ্যমে যেসব বিষয় বেরিয়ে এসেছে, সেগুলো যথেষ্ট নয়। সেজন্য বিএনপি দায়িত্ব পেলে ৩১ দফায় কমিশন গঠনের বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো পুনরায় গঠন করা হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশন, বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনসহ বহু কমিশন করতে হবে। কমিশনগুলোর মধ্য দিয়ে যে সংস্কার আসবে, সেগুলো আগেই পাওয়া গেছে বলে ধরে নেওয়া হবে। এরপরও অনেক বেশি সংস্কার করতে হবে।
তখন সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করলে সেখানে সারা জাতির জন্য সেটা উন্মুক্ত থাকবে। সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের প্রস্তাব আহ্বান করা হবে। এখানে কোনো প্রস্তাব যদি জনগণের পক্ষ থেকে পাওয়া যায় যেটা রাষ্ট্রের জন্য, সমাজের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সেগুলো গ্রহণ করা হবে।
সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে এর আগে দেশের ৯টি জেলায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক থেকে করা সুপারিশগুলো আজকের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশ– এর উইমেন রাইটস লিড মরিয়মনেছা। গোলটেবিল বৈঠক পরিচালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাজিফা জান্নাত প্রমুখ ।