চীনের আধিপত্য মোকাবিলায় এবার যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বিরল খনিজ চুক্তি
Published: 28th, October 2025 GMT
বিরল খনিজ শিল্পে চীনের আধিপত্য মোকাবিলা করার উপায় খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই বিরল খনিজ ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
আরো পড়ুন:
আর্জেন্টিনার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের দলের বড় জয়
দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উৎপাদনে সহায়তা করার জন্য নীতি, বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং সমন্বিত বিনিয়োগের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।
টোকিওতে আজ মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও বিরল মৃত্তিকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ট্রাম্প প্রথমবারের মতো তাকাইচির সাথে দেখা করার সময় এই চুক্তিটি করা হয়। যেখানে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর আলোকপাত করা হয়েছিল।
বিবিসি বলছে, তাকাইচির জন্য প্রাথমিক পরীক্ষা হিসেবে দেখা এই বৈঠকে দুই নেতা তাদের দেশের মধ্যে জোটের জন্য একটি নতুন ‘স্বর্ণযুগের’ সূচনা করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি পণ্য রপ্তানিতে এখন ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল কিন্তু মঙ্গলবারই চূড়ান্ত হয়েছে।
টোকিওতে বৈঠকের সময় জাপানের প্রথম নারী নেতা সানা তাকাইচির প্রশংসা করেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্পের বন্ধু এবং গল্ফিং অংশীদার প্রয়াত জাপানি নেতা শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ মিত্র তাকাইচি বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করবেন।
রয়টার্সের মতে, তাকাইচি এই বছরের শুরুতে স্বাক্ষরিত ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে মার্কিন বিনিয়োগের একটি প্যাকেজ অফার করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে জাহাজ নির্মাণ এবং মার্কিন সয়াবিন, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পিকআপ ট্রাকের বর্ধিত ক্রয়।
জাপানের পর, ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় উড়ে যাবেন, যেখানে তিনি চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করবেন।
বর্তমানে বিশ্বের ৭০ শতাংশ বিরল খনিজ আহরণ এবং ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণ একাই নিয়ন্ত্রণ করে চীন। এই খনিজগুলো প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে কম্পিউটার চিপ ও গাড়ি, সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি এই খনিজ হাতে পেতে চীনা সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল, যা তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি ও দুই দেশের বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের জেরে চীন সম্প্রতি বিরল খনিজ সরবরাহ সীমিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার পর এ ঝুঁকি আরো বেড়েছে।
ওয়াশিংটন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিরল খনিজ নিয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক্স, বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়।
জাপানে প্রচুর পরিমাণে বিরল মৃত্তিকা খনিজ রয়েছে বলে জানা যায়, তবে এর বেশিরভাগই সমুদ্রের নিচে রয়েছে, যার ফলে খনন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র সরবর হ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।
শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।
আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।
রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।
চার দফা সুপারিশঅনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।