জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে আগামী ২ নভেম্বর। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দেওয়া হবে।

একই দিন গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়া হবে।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো.

মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

আজকে ট্রাইব্যুনালে হাসানুল হক ইনুকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। এর আগে ২৩ অক্টোবর এ মামলায় ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)।

দুই পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ২ নভেম্বর আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলায় একমাত্র আসামি হাসানুল হক ইনু। তাঁকে আজ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী ও কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। তাঁরা সবাই পলাতক।

তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি এ মামলা থেকে এই চার আসামির অব্যাহতির আবেদন করেন। এর আগে গতকাল সোমবার হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন। দুই পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ২ নভেম্বর আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র আস ম র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

শর্ট রুল চাইলেন খায়রুল হকের আইনজীবী, আপত্তি জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল

পৃথক পাঁচ মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের জামিন প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাঁচ মামলায় কেন তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জামিন চেয়ে খায়রুল হকের করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।

এর আগে শুনানিতে খায়রুল হকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী শর্ট (সংক্ষিপ্ত সময়ের) রুল চান। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শর্ট রুলে আপত্তির কথা জানান।

তিন মাস ধরে কারাগারে আছেন খায়রুল হক। পাঁচ মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে তিনি উচ্চ আদালতে পৃথক আবেদন করেন। আবেদনের ওপর আজ মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুনানি হয়।

আদালতে খায়রুল হকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী; সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কামরুল হক সিদ্দিকী ও আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান; সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন।

‘শর্ট রুল চাই, এর বেশি কিছু চাই না’

শুনানিতে খায়রুল হকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, প্লট বরাদ্দ নিয়ে দুদক একটি মামলা করে। আদালত বলেন, ‘কী প্লট?’ তখন মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট নিয়ে। তাঁর (খায়রুল হকের) স্বাস্থ্যগত কারণে, নানা ধরনের অসুস্থতা রয়েছে। তাঁর বয়স ৮১ বছর। শর্ট রুল চাই। এর বেশি কিছু চাই না। এক সপ্তাহের রুল দেন।’

আদালত বলেন, তিনি রুল চাচ্ছেন, রুল দেওয়া যেতে পারে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দুদকের মামলার বিষয়ে দুদকের আইনজীবী বলবেন, অন্য মামলার বিষয়ে তিনি বলবেন। রুল দেওয়া আদালতের এখতিয়ারাধীন ইস্যু। আইনেরও প্রশ্ন আছে এখানে। রুলে আপত্তি নেই; তবে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ও শর্ট রুলের বিষয়ে আপত্তি আছে।

আরও পড়ুন৫ মামলায় খায়রুল হকের জামিন কেন নয়: হাইকোর্ট৬ ঘণ্টা আগে

‘নান ইজ অ্যাবাভ দেম’

আদালত বলেন, ‘টেন ডেসের জন্য (১০ দিনের মধ্যে) দেওয়া হলে?’ অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘১০ দিনের জন্য দেওয়া হলে, অর্থাৎ ১০ দিন পরে যদি ওনারটা (খায়রুল হক) শুনতে (রুল শুনানি) পারেন, তাহলে যে নাগরিকেরা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন…নান ইজ অ্যাবাভ দেম (তাঁদের ওপরে কেউ নেই)। শর্ট রুল ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের (জামিন) বিষয়ে আপত্তি আছে। শুধু রুল (জামিন প্রশ্নে) চাইলে আপত্তি নেই।’ মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন (জামিন) আদেশ চাচ্ছেন না।

আদালত বলেন, আবেদনকারী ৮১ বছর বয়সী বলা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আশির বেশি বয়সী, এটি যেমন সত্যি, কিছু কিছু অপরাধ এবং কিছু কিছু অপরাধীদের ১৬৬১ সালের একটি উদাহারণ দিই। অলিভার ক্রমওয়েল ব্রিটিশ রাজনীতিতে প্রথম রাজতন্ত্রকে বাতিল করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পরে তিনি মারা যান। তারপর তাঁর অপরাধের বিচার করার পর প্রশ্ন আসে, ফাঁসি কীভাবে কার্যকর হবে? অলিভার ক্রমওয়েলের পচাগলা লাশ কবর থেকে তুলে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, তারপর খুলিটি আলাদা করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে ২০ বছরের বেশি (প্রায় ২৫ বছর) ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।’

খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।

রুল হলে আপত্তি নেই, তবে শর্ট রুলে আপত্তি

খায়রুল হকের জামিন আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। রুল হলে আপত্তি নেই, এটি আদালতের এখতিয়ার। তবে শর্ট রুল হলে আপত্তি আছে।

খায়রুল হকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, লোকটা খুবই অসুস্থ, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ১০ দিনের জন্য রুল দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

দুদকের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন বলেন, একটি পয়েন্টে বলা দরকার। অভিযোগ সত্য বা মিথ্যা যা–ই হোক না কেন, ঢাকা শহরে যাঁরা মিথ্যা হলফনামা দিয়ে প্লট নিয়েছেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়া প্রয়োজন। এরপর আদালত জামিন প্রশ্নে রুলসহ দিয়ে আদেশ দেন।

খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।

আরও পড়ুনএ বি এম খায়রুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে: মির্জা ফখরুল২৪ জুলাই ২০২৫

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় এক বছর পর গত ২৪ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এরপর বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে করা একটি মামলায়ও খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত রায় জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৭ আগস্ট শাহবাগ থানায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন একটি মামলা করেন। একই অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় গত ২৫ আগস্ট আরেকটি মামলা করেন নুরুল ইসলাম মোল্লা নামের এক ব্যক্তি।

এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট গ্রহণের অভিযোগে চলতি বছরের আগস্টে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। এই পাঁচ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদনগুলো গত রোববার আদালতে দাখিল করা হয় বলে জানান আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন।

আরও পড়ুনখায়রুল হকের বিচার কীভাবে হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছি: জয়নুল আবেদীন২৪ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সালমান শাহ হত্যা মামলা: আগাম জামিন চাইবেন সামিরা
  • জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ শিশু মুসাকে সঙ্গে নিয়ে সাক্ষ্য দিলেন বাবা
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ মনে করেন না রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির
  • শর্ট রুল চাইলেন খায়রুল হকের আইনজীবী, আপত্তি জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল
  • ৫ মামলায় খায়রুল হকের জামিন কেন নয়: হাইকোর্ট
  • ৫ মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে খায়রুল হকের আবেদনের শুনানি দুপুরে
  • নারীদের মাসিক ঘিরে ২৫ বছর বয়সী তরুণী কেন পাকিস্তান সরকারকে আদালতের মুখোমুখি করলেন
  • ন্যায় ব্যর্থ হলে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি
  • ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, ব্যর্থ হলে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি