কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর আলোচিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে এত দিন বাইরের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করার সুযোগ ছিল না ওপেনএআইয়ের। তহবিল সংগ্রহের এ সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার নতুন চুক্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম বিনিয়োগকারী মাইক্রোসফট। চুক্তি অনুযায়ী চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআইয়ের বাজারমূল্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে পাবলিক বেনিফিট করপোরেশন হিসেবে পুনর্গঠন করতে পারবে।

চুক্তির ফলে ওপেনএআই নিজের কাজ ও উদ্ভাবনের জন্য মূলধন সংগ্রহ বিশেষ সুযোগ পাবে। ২০১৯ সাল থেকে মাইক্রোসফটের নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজস্ব মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে বারবার বাধা পেয়েছে ওপেনএআই। শুধু তাই নয়, ওপেনএআই তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা নিত মাইক্রোসফটের কাছ থেকে। চুক্তির বিষয়ে বিনিয়োগ সংস্থা ডিএ ডেভিডসনের প্রযুক্তি গবেষণাপ্রধান গিল লুরিয়া বলেন, এই চুক্তি ওপেনএআইয়ের অলাভজনক সংস্থা হিসেবে সংগঠিত হওয়ার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান করবে। মাইক্রোসফটের সঙ্গে প্রযুক্তিসংক্রান্ত মালিকানা ও অধিকার নিষ্পত্তি করবে। এই নতুন কাঠামো ওপেনএআইয়ের বিনিয়োগের পথে আরও স্পষ্টতা দেবে। এতে তহবিল সংগ্রহ আরও সহজ হবে।

চুক্তি অনুযায়ী, ওপেনএআইয়ের ২৭ শতাংশ শেয়ার থাকবে মাইক্রোসফটের, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৩৫ বিলিয়ন ডলার। ওপেনএআই আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) পর্যায়ে পৌঁছালেও মাইক্রোসফট ওপেনএআইয়ের পণ্য ও এআই মডেলের ওপর বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে। শুধু তাই নয়, ২৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মাইক্রোসফটের অ্যাজউর ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা ব্যবহার করবে ওপেনএআই।

বর্তমানে চ্যাটজিপিটির সাপ্তাহিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ কোটির বেশি। শুরুতে একটি অলাভজনক এআই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল ওপেনএআই। উন্মুক্তের পরপরই চ্যাটজিপিটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটিং চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তখন মাইক্রোসফট ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। নতুন চুক্তির বিষয়ে ওপেনএআই ফাউন্ডেশনের বোর্ড চেয়ারম্যান ব্রেট টেলর এক ব্লগ বার্তায় জানান, ওপেনএআই তার করপোরেট কাঠামো সরল করে মূলধন পুনর্গঠন সম্পন্ন করেছে। এখন আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স আসার আগে মূলধন অর্জনের জন্য একটি সরাসরি পথ তৈরি হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য স গ রহ ম লধন

এছাড়াও পড়ুন:

চ্যাটজিপিটিতে সরাসরি অ্যাডোবি ফটোশপ, এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহার করার সুযোগ

চ্যাটজিপিটিতেই এখন ব্যবহার করা যাবে অ্যাডোবির জনপ্রিয় তিন অ্যাপ—ফটোশপ, অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট। ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যৌথ ঘোষণায় অ্যাডোবি জানায়, ব্যবহারকারীরা নির্দেশ দিলেই ছবি সম্পাদনা, ডিজাইন তৈরি কিংবা পিডিএফ নথি গোছানোর মতো কাজ চ্যাটজিপিটির মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

চাইলেই ব্যবহারকারীরা চ্যাটজিপিটি থেকে অ্যাডোবির নেটিভ অ্যাপে গিয়ে আগের কাজ অব্যাহত রাখতে পারবেন। তবে চ্যাটজিপিটির ভেতরে অ্যাডোবির অ্যাপ ব্যবহার করে তৈরি বা সম্পাদিত কোনো কনটেন্ট ব্যবহারকারীর অ্যাডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড বা অ্যাক্রোব্যাট অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ হবে না।

অ্যাডোবি জানায়, অ্যাপগুলো বিনা খরচে উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং ওপেনএআইয়ের অ্যাপস এসডিকি যেসব দেশে চালু রয়েছে, সেসব দেশেই এগুলো ব্যবহার করা যাবে। তবে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবহারকারীরা আপাতত এই সুবিধার বাইরে থাকছেন। প্রতিষ্ঠানের দাবি, এই উদ্যোগের ফলে চ্যাটজিপিটির ৮০ কোটির বেশি বৈশ্বিক ব্যবহারকারী এখন সরাসরি অ্যাডোবির সৃজনশীল টুলগুলোয় প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন।

চ্যাটজিপিটিতে ফটোশপ, অ্যাক্রোব্যাট বা অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ব্যবহার শুরু করতে কেবল ‘Adobe Photoshop’, ‘Adobe Acrobat’ বা ‘Adobe Express’ লিখে নিজের অনুরোধ জানাতে হবে। অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহারের জন্য অ্যাডোবি অ্যাকাউন্টে সাইন–ইন প্রয়োজন হলেও মূল ফটোশপ–সুবিধা ব্যবহার করতে আলাদা অ্যাডোবি অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন নেই।

এর আগে ক্যানভা, ফিগমা, কোরসেরা, এক্সপিডিয়া, স্পটিফাই, পেলোটন, ট্রিপঅ্যাডভাইজার, জিলো, বুকিং ডটকম ও ইনস্টাকার্ট এ ধরনের আরও বেশ কয়েকটি অ্যাপ চ্যাটজিপিটির অ্যাপস এসডিকিতে যুক্ত হয়েছে। এসব অ্যাপ সরাসরি চ্যাটজিপিটির ভেতর থেকেই খুলে কাজ করা যায়।

অ্যাডোবি বলছে, তাদের ফায়ারফ্লাই এআই মডেল নিরাপদ ও লাইসেন্স করা ডেটায় প্রশিক্ষিত, যা বর্তমান এআই প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। ওপেনএআইয়ের সঙ্গে অংশীদারত্ব নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও অ্যাডোবি দাবি করে, তাদের লক্ষ্য সৃজনশীল পেশাজীবীদের কাজকে আরও সহজ করা, তাঁদের ভূমিকা কমিয়ে দেওয়া নয়।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, স্বতন্ত্র অ্যাপ হিসেবেই অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট প্রতি মাসে ৭০ কোটির বেশি মানুষ ব্যবহার করেন। অ্যাডোবির ধারণা, চ্যাটজিপিটির মতো ব্যবহৃত সহজ প্ল্যাটফর্মে অ্যাপগুলো যুক্ত হওয়ায় নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে এবং বিদ্যমান ব্যবহারকারীদের কাজও দ্রুত গতির হবে।

চ্যাটজিপিটিতে অ্যাডোবির অ্যাপগুলো দিয়ে যা করা যাবে—

ফটোশপ ফর চ্যাটজিপিটি: ছবি সম্পাদনা, নির্দিষ্ট অংশ সংশোধন, উজ্জ্বলতা ও কনট্রাস্ট সমন্বয়, ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন, গ্লিচ বা গ্লোর মতো সৃজনশীল ইফেক্ট যোগ করা—এসব কাজ মূল ছবির মান বজায় রেখেই করা যাবে।

অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ফর চ্যাটজিপিটি: ডিজাইন তৈরি ও কাস্টমাইজ, টেমপ্লেট পরিবর্তন, টেক্সট ছবি বদলানো, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং প্রয়োজন হলে ডিজাইনে অ্যানিমেশন যোগ করার সুযোগ থাকবে।

অ্যাক্রোব্যাট ফর চ্যাটজিপিটি: চ্যাটজিপিটির মধ্যেই পিডিএফ আপলোড করে সম্পাদনা, সংকুচিত করা, অন্য ফরম্যাটে রূপান্তর, টেক্সট বা টেবিল আলাদা করে বের করা এবং একাধিক ফাইল একত্র করা যাবে।

অ্যাডোবি জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটিতে অ্যাপগুলোর সুবিধা ধাপে ধাপে আরও সম্প্রসারণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাকে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যা, চ্যাটজিপিটি-মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে মামলা
  • চ্যাটজিপিটিতে সরাসরি অ্যাডোবি ফটোশপ, এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহার করার সুযোগ