নামাজ মুসলিম সমাজের কেন্দ্রীয় ইবাদত। এতে শিশুদের অংশগ্রহণ শুধু তাদের ইমান-চেতনা গড়ে তোলে না, বরং পরিবারের সামগ্রিক ধর্মীয় পরিবেশকেও সুন্দর করে। তবে একটি প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে—ছোট বাচ্চারা কি বড়দের কাতারে দাঁড়াতে পারবে? তারা কাতার নষ্ট করবে কি না? ইসলামি ফিকহ এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।

শিশুর নামাজের গ্রহণযোগ্যতা

যে শিশুর বয়স সাত বছর পেরিয়েছে, তাকে নামাজ শেখাতে এবং নামাজে দাঁড় করাতে নবীজি (স.

) উৎসাহ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও…" (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)। অতএব, সাত বছরের পর শিশুকে নিয়মিত নামাজে দাঁড়ানো শেখানো সুন্নাহ।

আরও পড়ুনশিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচাতে১৫ আগস্ট ২০২৫

ছোটরা কাতারে দাঁড়ালে কাতার নষ্ট হয় কি?

আলেমদের মতে, বুদ্ধিবৃত্তি-উপলব্ধিসম্পন্ন শিশু (যে বুঝে নামাজ পড়তে পারে) যদি কাতারে দাঁড়ায়, তাহলে কাতার নষ্ট হয় না।

হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) তাঁর দৌহিত্র হুসাইন (র.)-কে জামাতে সঙ্গে রেখেছেন, এমনকি তাকে কাঁধে নিয়েও নামাজ পড়েছেন। (সুনানে নাসাই, হাদিস: ১১৪১)

এটি প্রমাণ করে—শিশুর উপস্থিতি কাতারকে ভঙ্গ করে না।

ছোটদের অবস্থান, কোথায় দাঁড়াবে তারা

১. সবচেয়ে উত্তম হলো শিশুকে কাতারের এক প্রান্তে দাঁড় করানো।

২. যদি কাতার পূর্ণ থাকে এবং শিশু বড়দের সঙ্গে কাতারে দাঁড়ায়, তা বৈধ।

৩. ছোট্ট বাচ্চারা কাতারের মাঝখানে দৌড়াদৌড়ি করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, এতে প্রাপ্তবয়স্কদের খুশু নষ্ট হতে পারে। সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো তাদের পাশে রাখা বা প্রয়োজন হলে শেষ কাতারে রাখা।

ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ (রহ.)-এর মতে, বড়রা যদি উপস্থিত থাকে, তবে শিশুদের তাদের পরেই দাঁড়ানো উত্তম, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়।

একেবারে ছোট শিশু কাতারে দাঁড়ালে

যে শিশু তামিজের বয়সে পৌঁছায়নি, অর্থাৎ, যে সঠিকভাবে রুকু, সিজদা, তাকবির ইত্যাদি করতে পারে না, তাকে কাতারের মাঝে দাঁড় করানো উচিত নয়। কারণ এতে কাতার বিশৃঙ্খল হয়।

তবে তারা যদি মায়ের সঙ্গে নারীদের কাতারে, অথবা বাবার পাশে বাড়িতে দাঁড়ায়—এটি জায়েয।

আরও পড়ুন‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’১৭ অক্টোবর ২০২৫

শিশুকে কাতার থেকে সরিয়ে দেওয়া কি ঠিক?

আলেমগণ বলেন, শিশুকে ধমকানো বা অপমান করা ঠিক নয়। কারণ:

১. এতে শিশুর মনে মসজিদের প্রতি ভয় ও অনীহা জন্মায়।

২. নবীজি (স.) শিশুদের প্রতি অত্যন্ত কোমল ছিলেন।

মসজিদে শিশুর কান্নার কারণে নবী (স.) নিজে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৮)

অতএব, তাদের প্রতি করুণা দেখানোই সুন্নাহ।

শিশুদের মসজিদে আনার উপকারিতা

১. ধীরে ধীরে নামাজের অভ্যাস তৈরি হয়।

২. মসজিদকে ভালোবাসতে শেখে।

৩. শৃঙ্খলা, ভদ্রতা ও ধৈর্যের মতো গুণ তৈরি হয়।

৪. বাবা-মায়ের আমল তাদের অনুকরণে সহজ হয়।

নবী (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামাজে শিশুদের ভালোবাসে, আল্লাহ তাকে রহমত করেন।" (দালায়েলুন নুবুওয়াহ)

মোটকথা

সাত বছরের বেশি শিশুদের কাতারে দাঁড়ানো সুন্নাহ।

শিশুর কারণে কাতার ভঙ্গ হয় না—যদি সে সঠিকভাবে নামাজ পড়তে পারে।

শিশুদের কাতারের এক পাশে রাখা উত্তম, তবে বাধ্যতামূলক নয়।

একেবারে ছোট শিশুদের মাঝখানে দাঁড়ানো অনুচিত, কারণ এতে বিশৃঙ্খলা হয়।

শিশুকে অপমান বা ধমক দেয়া বৈধ নয়—বরং কোমলভাবে শেখাতে হবে।

শিশুরা আমাদের আমলের উত্তরসূরি। তাদের নামাজে দাঁড়ানো শুধু তাদের ইমানই গঠন করে না; বরং আমাদের পরিবারের জন্যও বরকতের দরজা খুলে দেয়।

আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ত বছর মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ছোটদের নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর বিধান

নামাজ মুসলিম সমাজের কেন্দ্রীয় ইবাদত। এতে শিশুদের অংশগ্রহণ শুধু তাদের ইমান-চেতনা গড়ে তোলে না, বরং পরিবারের সামগ্রিক ধর্মীয় পরিবেশকেও সুন্দর করে। তবে একটি প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে—ছোট বাচ্চারা কি বড়দের কাতারে দাঁড়াতে পারবে? তারা কাতার নষ্ট করবে কি না? ইসলামি ফিকহ এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।

শিশুর নামাজের গ্রহণযোগ্যতা

যে শিশুর বয়স সাত বছর পেরিয়েছে, তাকে নামাজ শেখাতে এবং নামাজে দাঁড় করাতে নবীজি (স.) উৎসাহ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও…" (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)। অতএব, সাত বছরের পর শিশুকে নিয়মিত নামাজে দাঁড়ানো শেখানো সুন্নাহ।

আরও পড়ুনশিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচাতে১৫ আগস্ট ২০২৫

ছোটরা কাতারে দাঁড়ালে কাতার নষ্ট হয় কি?

আলেমদের মতে, বুদ্ধিবৃত্তি-উপলব্ধিসম্পন্ন শিশু (যে বুঝে নামাজ পড়তে পারে) যদি কাতারে দাঁড়ায়, তাহলে কাতার নষ্ট হয় না।

হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) তাঁর দৌহিত্র হুসাইন (র.)-কে জামাতে সঙ্গে রেখেছেন, এমনকি তাকে কাঁধে নিয়েও নামাজ পড়েছেন। (সুনানে নাসাই, হাদিস: ১১৪১)

এটি প্রমাণ করে—শিশুর উপস্থিতি কাতারকে ভঙ্গ করে না।

ছোটদের অবস্থান, কোথায় দাঁড়াবে তারা

১. সবচেয়ে উত্তম হলো শিশুকে কাতারের এক প্রান্তে দাঁড় করানো।

২. যদি কাতার পূর্ণ থাকে এবং শিশু বড়দের সঙ্গে কাতারে দাঁড়ায়, তা বৈধ।

৩. ছোট্ট বাচ্চারা কাতারের মাঝখানে দৌড়াদৌড়ি করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, এতে প্রাপ্তবয়স্কদের খুশু নষ্ট হতে পারে। সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো তাদের পাশে রাখা বা প্রয়োজন হলে শেষ কাতারে রাখা।

ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ (রহ.)-এর মতে, বড়রা যদি উপস্থিত থাকে, তবে শিশুদের তাদের পরেই দাঁড়ানো উত্তম, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়।

একেবারে ছোট শিশু কাতারে দাঁড়ালে

যে শিশু তামিজের বয়সে পৌঁছায়নি, অর্থাৎ, যে সঠিকভাবে রুকু, সিজদা, তাকবির ইত্যাদি করতে পারে না, তাকে কাতারের মাঝে দাঁড় করানো উচিত নয়। কারণ এতে কাতার বিশৃঙ্খল হয়।

তবে তারা যদি মায়ের সঙ্গে নারীদের কাতারে, অথবা বাবার পাশে বাড়িতে দাঁড়ায়—এটি জায়েয।

আরও পড়ুন‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’১৭ অক্টোবর ২০২৫

শিশুকে কাতার থেকে সরিয়ে দেওয়া কি ঠিক?

আলেমগণ বলেন, শিশুকে ধমকানো বা অপমান করা ঠিক নয়। কারণ:

১. এতে শিশুর মনে মসজিদের প্রতি ভয় ও অনীহা জন্মায়।

২. নবীজি (স.) শিশুদের প্রতি অত্যন্ত কোমল ছিলেন।

মসজিদে শিশুর কান্নার কারণে নবী (স.) নিজে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭০৮)

অতএব, তাদের প্রতি করুণা দেখানোই সুন্নাহ।

শিশুদের মসজিদে আনার উপকারিতা

১. ধীরে ধীরে নামাজের অভ্যাস তৈরি হয়।

২. মসজিদকে ভালোবাসতে শেখে।

৩. শৃঙ্খলা, ভদ্রতা ও ধৈর্যের মতো গুণ তৈরি হয়।

৪. বাবা-মায়ের আমল তাদের অনুকরণে সহজ হয়।

নবী (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামাজে শিশুদের ভালোবাসে, আল্লাহ তাকে রহমত করেন।" (দালায়েলুন নুবুওয়াহ)

মোটকথা

সাত বছরের বেশি শিশুদের কাতারে দাঁড়ানো সুন্নাহ।

শিশুর কারণে কাতার ভঙ্গ হয় না—যদি সে সঠিকভাবে নামাজ পড়তে পারে।

শিশুদের কাতারের এক পাশে রাখা উত্তম, তবে বাধ্যতামূলক নয়।

একেবারে ছোট শিশুদের মাঝখানে দাঁড়ানো অনুচিত, কারণ এতে বিশৃঙ্খলা হয়।

শিশুকে অপমান বা ধমক দেয়া বৈধ নয়—বরং কোমলভাবে শেখাতে হবে।

শিশুরা আমাদের আমলের উত্তরসূরি। তাদের নামাজে দাঁড়ানো শুধু তাদের ইমানই গঠন করে না; বরং আমাদের পরিবারের জন্যও বরকতের দরজা খুলে দেয়।

আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ