টিউলিপের বিচারপ্রক্রিয়ার সমালোচনায় শীর্ষস্থানীয় একদল ব্রিটিশ আইনজীবী
Published: 25th, November 2025 GMT
বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে চলমান বিচারের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় একদল আইনজীবী। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক কনজারভেটিভ সরকারের একজন বিচারমন্ত্রীও রয়েছেন। আগামী ১ ডিসেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার আগে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে চিঠি পাঠিয়ে এ অবস্থান জানিয়েছেন ওই আইনজীবীরা।
গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সরকারের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া টিউলিপ সিদ্দিকের অনুপস্থিতিতেই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ মামলায় তাঁর সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড ও হাইগেট আসনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত সপ্তাহে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারের বিচারমন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড কেসি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভিসহ দেশটির খ্যাতিমান একদল আইনজীবী দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে ওই চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, বিচার চলাকালে টিউলিপ সিদ্দিকের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষা করা হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো তাঁকে জানানো হয়নি বা বিচারে তাঁর আইনি প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ব্রিটিশ আইনজীবীদের এই দলে চেরি ব্লেয়ার কে সি, ফিলিপ স্যান্ডস কে সি ও জিওফ্রে রবার্টসন কে সি রয়েছেন।
‘এ ধরনের একটি প্রক্রিয়া বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে কৃত্রিম, সাজানো ও অন্যায্য’ বলে চিঠিতে লিখেছেন তাঁরা।
গত বছর আগস্টের পর থেকে ঢাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের পাশাপাশি তাঁর খালা, মা, ভাই, বোনসহ আরও অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার চলছে।
লেবার পার্টির এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঢাকার উপকণ্ঠে মায়ের জন্য একটি প্লট নিশ্চিত করতে হাসিনার (গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত) ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। টিউলিপের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন।
অভিযোগ অস্বীকার করে টিউলিপ বলেছেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ব্রিটিশ আইনজীবীরা এমন সময়ে বাংলাদেশের বিদ্যমান ফৌজদারি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন, যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বারবার দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
চিঠিতে টিউলিপের বিষয়ে তাঁরা লিখেছেন, ‘যেহেতু তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন এবং যুক্তরাজ্যের একজন নাগরিক, সে কারণে তিনি একজন পলাতক ব্যক্তি নন। তিনি একজন নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য, যাঁর সঙ্গে হাউস অব কমন্সে যোগাযোগ করা যায় এবং তাঁর প্রত্যর্পণের পক্ষে যথাযথ যুক্তি থাকলে প্রয়োজনে অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তাঁকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা যায়।’
ব্রিটিশ আইনজীবীরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতি এসব উদ্বেগ দূর করে ন্যায়বিচার এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
লেবার পার্টি গত বছর যুক্তরাজ্যে সরকার গঠন করলে টিউলিপ সিদ্দিককে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে গত ১৪ জানুয়ারি ওই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীন পরামর্শক স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত দেন যে তিনি কোনো অনিয়ম করেননি।
তবে লরি ম্যাগনাস এ-ও বলেছিলেন, পারিবারিক সম্পর্ক থেকে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ততটা সাবধান ছিলেন না—বিষয়টি দুঃখজনক।
ব্রিটিশ আইনজীবীদের চিঠির বিষয়ে বক্তব্যের জন্য যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট উল প স দ দ ক র ব র ট শ আইনজ ব য ক তর জ য র স ট উল প র ব সরক র র য গ কর
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক আইজিপি শহীদুলের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও আক্রমণাত্মক আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। শহীদুল হকের আইনজীবীর অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্ত সংস্থার বর্তমান কো–অর্ডিনেটরের পদোন্নতি হয়নি কেন, তা সাবেক এই আইজিপির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
শহীদুল হকের আইনজীবী সিফাত মাহমুদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ আজ সোমবার এ অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগের বিরোধিতা করেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেন, যদি তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাহলে আলাদা আবেদন লাগবে। তা ছাড়া সাবেক আইজিপি শহীদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন বা অর্ডার এখন নেই, তাই এমন আবেদনের সুযোগ নেই।
দুই পক্ষের কথা শোনার পর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। একই দিন এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে। গতকাল ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
২০১৬ সালে ঢাকার কল্যাণপুরে ‘জাহাজ বাড়ি’তে জঙ্গি নাম দিয়ে ইসলামিক ভাবধারার ৯ তরুণকে হত্যার অভিযোগে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক আইজিপি শহীদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শহীদুল ছাড়াও এ মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবং ডিএমপি মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা গ্রেপ্তার আছেন।
দুই সেনার মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্যগণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর এ শুনানি হবে বলে গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশ দেন।
মামলার চার আসামির মধ্যে দুজন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম। এ দুই সেনা কর্মকর্তার পক্ষে ট্রাইব্যুনালে ভার্চ্যুয়ালি হাজিরা দেওয়ার জন্য একটি আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন। আগামী ৪ ডিসেম্বর এ আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
মামলার অপর দুই আসামি পলাতক। তাঁরা হলেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান। তাঁদের পক্ষে একজন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
‘গুলি করা ব্যক্তিদের সাক্ষী বানানোর বিষয়টি সত্য নয়’জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় গুলি করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আসামি না করে সাক্ষী বানানোর বিষয়টি সত্য নয় বলে গতকাল জেরায় উল্লেখ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। তাঁকে গতকাল আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন।
জেরায় আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আবুল হাসান চানখাঁরপুলে দুজন পুলিশ সদস্যের নাম উল্লেখ করেন। সেই দুজন পুলিশ সদস্য এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আইনজীবী আবুল হাসান বলেন, এই দুই পুলিশ সদস্যের নামে যে পরিমাণ গুলি ইস্যু করা হয়েছিল গত বছরের ৫ আগস্ট, তার চেয়ে কম গুলি তাঁরা জমা দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেই দুজন পুলিশ সদস্যকে আসামি না করে এ মামলার সাক্ষী করেছেন।
এর জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, এ কথা সত্য নয়।
ফার্মগেটের হত্যাকাণ্ডে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলগণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য ট্রাইব্যুনাল ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এ ছাড়া গণ–অভ্যুত্থানের সময় সিলেটে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।