সব প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার ‘পোস্টাল ব্যালটের’ মাধ্যমে ভোট দেওয়ার জন্য ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। এর আগে নিবন্ধনের জন্য অঞ্চলভেদে সময়সীমা আলাদা ছিল। আজ বুধবার রাত ১২টা থেকে নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

আজ বুধবার বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এটি আগে অঞ্চলভেদে ভাগ করা থাকলেও এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটি আজ রাত ১২টায় উন্মুক্ত করা হবে। ফলে বিশ্বের যেকোনো অঞ্চল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন।

পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের জন্য এখন আর কোনো অঞ্চলভেদে পৃথক সময়সীমা থাকছে না উল্লেখ করে আখতার আহমেদ বলেন, ‘পাঁচ দিন করে ওই লিমিটেশন আর থাকছে না। এখন ওপেন। যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে করতে পারেন।’ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা সমাধানে কমিশন কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া আগামী শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ‘মক ভোটিং’ আয়োজনের কথাও জানান ইসির এই জ্যেষ্ঠ সচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী শনিবার সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ‘মক ভোটিং’ রিহার্সাল করব।.

..যেহেতু জাতীয় সংসদের নির্বাচন এবং গণভোট—দুটি একসঙ্গে হচ্ছে, কাজেই আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাকে আরেকটু ঝালাই করে নিতে চাই।’

গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হওয়ার অধ্যাদেশ জারি হয়েছে উল্লেখ করে আখতার আহমেদ বলেন, দায়িত্বের আভাস পাওয়ার পর থেকেই তাঁরা মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছেন। কাগজে-কলমে ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিও আগেই শুরু হয়েছে এবং অগ্রিম প্রস্তুতির এগিয়ে রাখছেন বলেও জানান তিনি।

নির্বাচন ঘিরে অপতথ্য রোধে ইসির সঙ্গে কাজ করবে টিকটিক

এর আগে বেলা তিনটার পর আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে গুজব, অপতথ্য ছড়ানো বন্ধে করণীয় ঠিক করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘টিকটক’–এর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ও টিকটকের নয়জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সম্মেলনকক্ষে ‘‘আ কনভারসন উইথ টিকটিক অন ইলেকশন ইন্ট্রিগ্রিট’ শীর্ষক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে টিকটকের সাউথ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ও গভর্নমেন্ট রিলেশনস হেড ফেরদৌস মুত্তাকিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করা যে আমাদের প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনী বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয় না। আমাদের একটি বড় দল রয়েছে। নির্বাচন সুরক্ষার বিষয়ে পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আমরা কয়েক মাস আগে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা তাদের বলেছি যে আমরা আপনাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব, যাতে আমাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়।’

টিকটকে অনেক ভুয়া অ্যাকাউন্ট আছে, যার মাধ্যমে গুজব, অপতথ্য ছড়ানো হয়, এগুলো রোধে কী করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌস মুত্তাকিম বলেন, ‘এসব তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের ভিন্ন ভিন্ন অনেক ব্যবস্থা আছে। আমরা সব সময়ই এসব নিয়ে কাজ করি। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, নির্বাচনের সময়ে অবশ্যই আমাদের বিশেষ নজর থাকে। কিন্তু সারা বছরই এই কাজ চলতে থাকে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ন বন ধ ক জ কর প রব স র জন য ট কটক

এছাড়াও পড়ুন:

অপতথ্য রোধে মানুষের আস্থা অর্জন জরুরি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে যেভাবে অপতথ্য ছড়াচ্ছে, তা রোধে মানুষের আস্থা অর্জন সবচেয়ে জরুরি। এ জন্য আইন, নীতি প্রণয়নে অংশীদারদের সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি এসব নীতির ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার ও সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলেই মানুষের আস্থা আসবে।

আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘কীভাবে ভুয়া তথ্য শাসনব্যবস্থার হাতিয়ার হয়ে উঠল’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন গত শনিবার শুরু হয়েছে।

ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। যারা এক যুগের বেশি সময় শাসন করেছে। এই অভ্যুত্থানে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা নিয়ে পরাজিত শক্তি বিশ্বে প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) ছড়াচ্ছে যে আন্দোলনকারীরাই এদের হত্যা করেছে। এ ধরনের বয়ান তৈরি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব নিয়ে ক্যাম্পেইন (প্রচার) চলছে। বিশ্বের অনেকেই এটা বিশ্বাস করাও শুরু করেছে যে এই অভ্যুত্থান হয়তো একটি ষড়যন্ত্র ছিল।

গণমাধ্যমে ফ্যাক্ট-চেকার থাকা নিয়ে এই সম্পাদক বলেন, একটি গণমাধ্যমের কেন ফ্যাক্ট-চেকার দরকার হবে? কারণ, প্রত্যেক প্রতিবেদক নিজেই একজন ফ্যাক্ট-চেকার। পেশাদার সাংবাদিকতায় এটার দরকার নেই।

নূরুল কবীর বলেন, বাংলাদেশে সামনে নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণা শুরু করেছে। একটি রাজনৈতিক দল যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভাবে যুদ্ধের বিপক্ষে অংশ নিয়েছিল এবং গণহত্যায় জড়িত ছিল, সেই দলের একজন নেতা এখন বলছেন, তাঁরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তারা টুইস্ট করছে। কথা হচ্ছে তারা কোন অংশে ছিল? এগুলো বলে তারা অপতথ্য ছড়াচ্ছে।

গণমাধ্যমে ফ্যাক্ট-চেকার থাকা নিয়ে এই সম্পাদক বলেন, একটি গণমাধ্যমের কেন ফ্যাক্ট-চেকার দরকার হবে? কারণ, প্রত্যেক প্রতিবেদক নিজেই একজন ফ্যাক্ট-চেকার। পেশাদার সাংবাদিকতায় এটার দরকার নেই।

কোনো রাষ্ট্রই পুরোপুরি আইন ছাড়া ভুল তথ্য প্রতিরোধ করতে পারে না উল্লেখ করে নূরুল কবীর বলেন, কিন্তু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় এ ধরনের আইন উল্টো তথ্যপ্রবাহ সীমিত করার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাই আইন গুরুত্বপূর্ণ হলেও আইন প্রণয়নের সময় জনগণ ও রাজনৈতিক অংশীদারদের সতর্ক থাকা জরুরি। তারা যেন বুঝতে পারে আইনটি সত্যিই তথ্য রক্ষা করছে, নাকি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করছে।

ইউএনডিপির লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর ডিজিটাল ডেমোক্রেসি অ্যানালিস্ট আলভারো বেলত্রানো উরুতিয়া বলেন, এখন যে অবস্থায় সবাই দাঁড়িয়েছে, তাতে গণতন্ত্রকে ও তথ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে মনোযোগ দিতে হবে। অনেকেই এসব খাতে বিনিয়োগ করছেন, নানা সমাধান তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন, কিন্তু সমস্যার মূলটা জানছেন না।

একটি রাজনৈতিক দল যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভাবে যুদ্ধের বিপক্ষে অংশ নিয়েছিল এবং গণহত্যায় জড়িত ছিল, সেই দলের একজন নেতা এখন বলছেন, তাঁরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তারা টুইস্ট করছে। কথা হচ্ছে তারা কোন অংশে ছিল?নূরুল কবীর, সম্পাদক, নিউ এজ

নির্বাচনের সময় ভুল তথ্যের বিষয়টি শুধু ভোটের দিনের বিষয় নয়, পুরো প্রক্রিয়াই ঝুঁকিতে থাকে উল্লেখ করে ইউএনডিপি বাংলাদেশের ইলেকটোরাল সাপোর্ট প্রজেক্টের প্রধান প্রযুক্তি পরামর্শক অ্যান্দ্রেস দেল কাস্তিও বলেন, নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে স্বচ্ছতা বজায় রাখা। এতে জন-আস্থা গড়ে ওঠে। নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা না থাকলে ভুল তথ্য সহজে ছড়িয়ে যায়।

সিঙ্গাপুরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়নুল আবেদিন রশিদ বলেন, তথ্যব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ না করলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। নির্বাচন কার্যকারিতা হারায়। তরুণদের কাছে একটি ভারসাম্যপূর্ণ তথ্য-পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশ বা সরকার এই চ্যালেঞ্জগুলোকে কীভাবে মোকাবিলা করে, তার ওপরই নির্ভর করবে—তথ্য খাত কোন দিকে যাবে।

বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘কীভাবে ভুয়া তথ্য শাসনব্যবস্থার হাতিয়ার হয়ে উঠল’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা। আজ রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গুজব ও অপতথ্যের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে
  • অপতথ্য রোধে মানুষের আস্থা অর্জন জরুরি