অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিপূরণ এবং বাউল সমর্থকদের ওপর হামলার নিন্দা ফখরুলে
Published: 26th, November 2025 GMT
বাউল সমর্থকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা এবং রাজধানীর করাইল বস্তির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘‘করাইল বস্তিতে কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করে। অগ্নিকাণ্ডে তারা নিঃস্ব হয়েছে—এটি দরিদ্র মানুষের ওপর এক চরম আঘাত।’’
বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে তিনটায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সরকারের কাছে দাবি জানাই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। যদি কেউ দায়ী থাকে, তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই অগ্নিকাণ্ডকে তিনি ষড়যন্ত্র মনে করছেন না। তবে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে গার্মেন্টস ও ফ্যাক্টরি কারখানায় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার ঘাটতি এবং আইন না মানার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে। যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলে এগুলো এড়ানো অনেক সহজ।’’
বাউলদ সমর্থকদের ওপর হামলা উগ্রবাদীদের কাজ উল্লেখ করে এবং বাউল সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘বাউলদের ওপর হামলা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বাউলরা বাংলাদেশের আবহমান গ্রামীণ সংস্কৃতির বাহক। তাদের ওপর হামলা উগ্রবাদী ও ধর্মান্ধ চক্রের কাজ বলে মনে করি।’’
এ ধরনের হামলা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এর আগে দুপুরের ঠাকুরগাঁও চৌরাস্তায় বাউল সমর্থকরা মানববন্ধন করার জন্য জড়ো হলে তৌহিদী জনতা তাদের ধাওয়া করে ও হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
ঢাকা/হিমেল//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পারমাণবিক জ্বালানি লোডিংয়ের দ্বারপ্রান্তে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র
পারমাণবিক ফিজিক্যাল স্টার্টআপের (জ্বালানি লোডিং) দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। জ্বালানি লোডিং প্রস্তুতির সামগ্রিক অবস্থা নিরীক্ষণের লক্ষ্যে গত ৭ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বায়েরা), রাশিয়ার শিল্প ও কর্মক্ষেত্র নিরাপত্তা তদারকি-সংক্রান্ত সংস্থা ভিও সেফটিসহ দেশটির অন্যান্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল।
বায়েরার চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হাসান বুধবার (২৬ নভেম্বর) সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) মানবসম্পদ, প্রকল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইক্যুইপমেন্ট, প্রকল্পের বিভিন্ন সিস্টেম ও ফ্যাসিলিটি এবং পরিচালন-সংক্রান্ত বিভিন্ন ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করেছে পরিদর্শন টিম।
এছাড়াও প্রতিনিধিদলটি কমিশনিং কার্যক্রমের অগ্রগতি, বিভিন্ন স্থাপনা, স্টার্টআপ ও সমন্বয় প্রটোকল এবং সনদগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। প্রকল্পের ফিজিক্যাল স্টার্টআপের বিষয়টি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাসান এবং সমন্বয় করেছেন সংস্থার প্রধান পরিদর্শক মো. ইয়ামিন আলী।
ফিজিক্যাল স্টার্টআপ এবং জ্বালানি লোডিং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ পর্যায়ে রিয়্যাক্টরে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক জ্বালানি লোড করার পর পাওয়ার স্টার্টআপের কার্যক্রম শুরু হয়। এর অধীনে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিভিন্ন সিস্টেম পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সীমিত মাত্রায় রিয়্যাক্টরে পারমাণবিক বিক্রিয়ার সূচনা করা হয়।
এ বিষয়ে এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাসান বলেছেন, এনপিসিবিএল ইতোমধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—আইএইএ কর্তৃক পরিচালিত দুই সপ্তাহব্যাপী পরীক্ষামূলক প্রি-ওসার্ট মিশন ও তিন সপ্তাহব্যাপী প্রি-ওসার্ট মিশন, সর্বশেষ দুই সপ্তাহব্যাপী বায়েরা, ভিও সেফটি এবং রাশান রেগুলেটরি সংস্থা ‘রস্টেকনাদজর’ কর্তৃক পরিচালিত যৌথ পরিদর্শন। এছাড়াও এনপিসিবিএল এবং রসএনার্গোঅ্যাটম নিয়মিতভাবে তাদের সেলফ এসেসমেন্ট বা স্ব-মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং সেফগার্ডকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বায়েরা রূপপুর প্রকল্পের ফিজিক্যাল স্টার্টআপ প্রস্তুতি যাচাই করেছে। এ সময়কালে তারা এনপিসিবিএলের বিভিন্ন মন্তব্য ও সুপারিশ বিবেচনা করে কার্যকর সমাধানেও কাজ করছে।
পরিদর্শন শেষে বিশেষজ্ঞ দলটি প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, জানিয়ে ড. জাহেদুল হাসান বলেন, বিশেষজ্ঞ দল রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আরো উন্নত করার জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এনপিসিবিএল কর্তৃপক্ষ বর্তমানে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করছে। কার্য সম্পাদনের পর শিগগিরই একটি প্রতিবেদন বায়েরার কাছে পাঠানো হবে। প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে সন্তোষজনক মনে হলে বায়েরা ফিজিক্যাল স্টার্টআপ এবং প্রথমবারের মতো পারমাণবিক জ্বালানি লোডিংয়ের অনুমোদন ও লাইসেন্স দেবে।
বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হাসান বলেছেন, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং সেফগার্ড ফোকাস রেখে ফিজিক্যাল স্টার্টআপ রেডিনেস ইন্সপেকশন সম্পন্ন করেছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে স্টার্টআপ বা ফুয়েল লোডিংয়ের জন্য রাশিয়ার রেগুলেটরি অথরটি এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার সুপারিশ প্রয়োজন হয়। সুপারিশ যথাযথ হলে বায়েরা ফুয়েল লোডিংয়ের অনুমতি দেবে।
রূপপুর প্রকল্পের জ্বালানি লোডিংয়ের জন্য জেনারেল ডিজাইনার রোসাটম ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন, রিয়্যাক্টর প্ল্যান্ট ডিজাইনার গিদ্র প্রেস, রাশিয়ার ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার কুরচাতভ ইনস্টিটিউট এবং বায়েরার অনুমোদন ছাড়াও ভিও সেফটির এসেসমেন্ট প্রতিবেদন জরুরি বলে জানা গেছে।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে। দুটি ভিভিইআর-১২০০ চুল্লি আছে এ কেন্দ্রে। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট।
ঢাকা/শাহীন/রফিক