বোলারদের তুলোধুনো করে এসে সংবাদ সম্মেলনেও একই ঝাঁজ রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছিলে লিটন কুমার দাসের থেকে। কিন্তু কীসের কী! লিটন যেন মেতেছিলেন এক কথায় উত্তর দেওয়ার প্রতিযোগিতায়! 

১২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ঢাকা ক্যাপিটালসকে জিতিয়েছেন লিটন। ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে স্রেফ বললেন, ‘টুডে ওয়াজ মাই ডে।’ সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্ন হলো, ‘‘আপনার দিনটি আজকে সব মিলিয়ে কেম গেল? একটু আগেই বোলারদের কড়া শাসন করে ৯ ছক্কা হাঁকানো লিটনের উত্তর আসলো এরকম, ‘‘খুব ভালো।” 

তবে আশা হারাবেন না। ৫৫ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১২৫ রানের ইনিংসের মতোই সময় যত গড়িয়েছে লিটন খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন। কথা বলেছেন মন খুলে।  এমন এক দিনে লিটন এমন তাণ্ডব করেছেন যেদিন তাকে নিয়ে দিনভর আলোচনা। পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না হওয়ায় লিটনকে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচকরা তার পারফরম্যান্সের ইস্যুকেই সামনে এনেছেন। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে শেষ সাত ইনিংসে লিটন দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার রান ছিল, ২, ৪ ও শূন্য। বাদ পড়তে পারেন এমন আঁচ লিটন করতে পেরেছিলেন বলে দাবি করলেন, ‘‘পরিস্কার ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে (বাদ পড়ার কারণ জানিয়ে)। আসলে নির্বাচকদের তরফ থেকে না…। কী কারণে (দলে) রাখা হয়নি… এটা মিডিয়া ঘাটলেই পাওয়া যায় যে, কী কারণে রাখা হয়নি। আপনি যদি দেখেন যে, কী কারণে আমি বাদ পড়েছি, আমার পারফরম্যান্স ছিল না, আপনারাই নিউজ করেছেন। এটা ওপেন। এটা না জানার কিছু নাই। এটা বেসিক জিনিস।” 

বাদ পড়ার ঘটনা তার ক্যারিয়ারে প্রথম নয় মোটেও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাদা বলের ক্যারিয়ারে সেভাবে ধারাবাহিক হতে পারেননি কখনোই। এ কারণে এবারের বাদ পড়াকে ধাক্কা হিসেবে একেবারেই নিচ্ছেন না লিটন,“উনারা মনে করেছে এই মুহূর্তে আমি টিমে ফিট হচ্ছি না, তাই নাই। যদি তারা আবার আমার খেলা দেখে মনে করে যে আমি ফিট হওয়ার মতো, তাহলে হয়তো তারা ফেরাতে পারে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত।’’

নিজের নাম চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নেই বলে লিটন আপসেট নন। তার অনুরাগ নিজের ওপর, “ভাবনা একই আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিষয়টা যদি বলেন, এটা আমার হাতে নাই। ওটা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ। কাকে খেলাবে, কাকে খেলাবে না, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার কাজ হচ্ছে এখানে পারফর্ম করা, যেটা করতে পারছিলাম না এতদিন। ওটার জন্য আপসেট ছিলাম… কীভাবে ডেলিভারি করা যায় পারফরম্যান্স।” 

স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে লিটনের নামের পাশে এতোদিন ছিল ২৯ ফিফটি। সেঞ্চুরি ছিল না একটিও। দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ১২৫ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ার সেরা। যে ইনিংসটি খেলার পথে ১০ চার ও ৯ ছক্কা হাঁকিয়েছেন। লিটন ১২৫ রানের ইনিংস খেলার পথে ৯৪ রানই পেয়েছেন বাউন্ডারিতে। তামিম ২০১৯ সালে ১৪১ রানের ইনিংস খেলার পথে ১০৬ রান তুলেছিলেন বাউন্ডারিতে। 

নিজের অফ ফর্ম, বাদ পড়া, এমন ক্যামিও ইনিংস খেলে কী নির্বাচকদের কোনো বার্তা দিয়ে রাখলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান? জানিয়ে রাখা ভালো, ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দল পরিবর্তনের সুযোগ কিন্তু রয়েছে। গতকাল ২২ গজে মাঠে নামার আগে এসব ভাবনা কী তার কাজ করেছিল? 

সোজাসাপ্টা উত্তরে লিটনের দাবি, ‘‘ম্যাচের আগে যে মাইন্ডসেট ছিল, পরেও একই আছে। আমি সবসময় একটা কথা বলি, আজকের দিনটা ইতোমধ্যেই অতীত। আমি হয়তো ক্যারিয়ারে একটা ভালো ইনিংস খেলেছি। কিন্তু পরের ম্যাচে আবার আমাকে জিরো থেকেই শুরু করতে হবে। মাথায় এটাই থাকবে যে, আবার নতুন করে আমার ইনিংস গুছাতে হবে। পরিশ্রম করব, দেখা যাক কী হয়।”

লিটন রানে ফিরলেন। ২২ গজ আবার ধ্রুপদী এক ব্যাটসম্যানকে ফিরে পেল। তার ফেরার দিনে ঢাকা ক্যাপিটালসও জিতল। পারফরম্যান্সের এই ধারাবাহিকতা লিটনের ধরে রাখার বড় চ্যালেঞ্জ।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়

অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।

তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।

ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।

প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।

তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।

এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।

তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।

চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।

এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।

২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।

এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।

অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
  • ব্রাজিলে আলোকাড়া রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির
  • ব্রাজিলে আলো কাড়া রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির
  • রিবেইরোয় চোখ আর্সেনাল-নাপোলির 
  • কোচ কাবরেরার পদত্যাগ দাবি, অনিশ্চয়তায় ভবিষ্যৎ