এই মুহূর্তে আমি জাতীয় দলে ফিট হচ্ছি না, তাই নেই: লিটন
Published: 13th, January 2025 GMT
বোলারদের তুলোধুনো করে এসে সংবাদ সম্মেলনেও একই ঝাঁজ রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছিলে লিটন কুমার দাসের থেকে। কিন্তু কীসের কী! লিটন যেন মেতেছিলেন এক কথায় উত্তর দেওয়ার প্রতিযোগিতায়!
১২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ঢাকা ক্যাপিটালসকে জিতিয়েছেন লিটন। ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে স্রেফ বললেন, ‘টুডে ওয়াজ মাই ডে।’ সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্ন হলো, ‘‘আপনার দিনটি আজকে সব মিলিয়ে কেম গেল? একটু আগেই বোলারদের কড়া শাসন করে ৯ ছক্কা হাঁকানো লিটনের উত্তর আসলো এরকম, ‘‘খুব ভালো।”
তবে আশা হারাবেন না। ৫৫ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১২৫ রানের ইনিংসের মতোই সময় যত গড়িয়েছে লিটন খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন। কথা বলেছেন মন খুলে। এমন এক দিনে লিটন এমন তাণ্ডব করেছেন যেদিন তাকে নিয়ে দিনভর আলোচনা। পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না হওয়ায় লিটনকে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচকরা তার পারফরম্যান্সের ইস্যুকেই সামনে এনেছেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটে শেষ সাত ইনিংসে লিটন দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার রান ছিল, ২, ৪ ও শূন্য। বাদ পড়তে পারেন এমন আঁচ লিটন করতে পেরেছিলেন বলে দাবি করলেন, ‘‘পরিস্কার ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে (বাদ পড়ার কারণ জানিয়ে)। আসলে নির্বাচকদের তরফ থেকে না…। কী কারণে (দলে) রাখা হয়নি… এটা মিডিয়া ঘাটলেই পাওয়া যায় যে, কী কারণে রাখা হয়নি। আপনি যদি দেখেন যে, কী কারণে আমি বাদ পড়েছি, আমার পারফরম্যান্স ছিল না, আপনারাই নিউজ করেছেন। এটা ওপেন। এটা না জানার কিছু নাই। এটা বেসিক জিনিস।”
বাদ পড়ার ঘটনা তার ক্যারিয়ারে প্রথম নয় মোটেও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাদা বলের ক্যারিয়ারে সেভাবে ধারাবাহিক হতে পারেননি কখনোই। এ কারণে এবারের বাদ পড়াকে ধাক্কা হিসেবে একেবারেই নিচ্ছেন না লিটন,“উনারা মনে করেছে এই মুহূর্তে আমি টিমে ফিট হচ্ছি না, তাই নাই। যদি তারা আবার আমার খেলা দেখে মনে করে যে আমি ফিট হওয়ার মতো, তাহলে হয়তো তারা ফেরাতে পারে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত।’’
নিজের নাম চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নেই বলে লিটন আপসেট নন। তার অনুরাগ নিজের ওপর, “ভাবনা একই আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিষয়টা যদি বলেন, এটা আমার হাতে নাই। ওটা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ। কাকে খেলাবে, কাকে খেলাবে না, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার কাজ হচ্ছে এখানে পারফর্ম করা, যেটা করতে পারছিলাম না এতদিন। ওটার জন্য আপসেট ছিলাম… কীভাবে ডেলিভারি করা যায় পারফরম্যান্স।”
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে লিটনের নামের পাশে এতোদিন ছিল ২৯ ফিফটি। সেঞ্চুরি ছিল না একটিও। দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ১২৫ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ার সেরা। যে ইনিংসটি খেলার পথে ১০ চার ও ৯ ছক্কা হাঁকিয়েছেন। লিটন ১২৫ রানের ইনিংস খেলার পথে ৯৪ রানই পেয়েছেন বাউন্ডারিতে। তামিম ২০১৯ সালে ১৪১ রানের ইনিংস খেলার পথে ১০৬ রান তুলেছিলেন বাউন্ডারিতে।
নিজের অফ ফর্ম, বাদ পড়া, এমন ক্যামিও ইনিংস খেলে কী নির্বাচকদের কোনো বার্তা দিয়ে রাখলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান? জানিয়ে রাখা ভালো, ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দল পরিবর্তনের সুযোগ কিন্তু রয়েছে। গতকাল ২২ গজে মাঠে নামার আগে এসব ভাবনা কী তার কাজ করেছিল?
সোজাসাপ্টা উত্তরে লিটনের দাবি, ‘‘ম্যাচের আগে যে মাইন্ডসেট ছিল, পরেও একই আছে। আমি সবসময় একটা কথা বলি, আজকের দিনটা ইতোমধ্যেই অতীত। আমি হয়তো ক্যারিয়ারে একটা ভালো ইনিংস খেলেছি। কিন্তু পরের ম্যাচে আবার আমাকে জিরো থেকেই শুরু করতে হবে। মাথায় এটাই থাকবে যে, আবার নতুন করে আমার ইনিংস গুছাতে হবে। পরিশ্রম করব, দেখা যাক কী হয়।”
লিটন রানে ফিরলেন। ২২ গজ আবার ধ্রুপদী এক ব্যাটসম্যানকে ফিরে পেল। তার ফেরার দিনে ঢাকা ক্যাপিটালসও জিতল। পারফরম্যান্সের এই ধারাবাহিকতা লিটনের ধরে রাখার বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।
অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’
অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যানএনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।
জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’
আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।
এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।
আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগেএনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’