ময়মনসিংহে এক মাজারের ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রশাসনের
Published: 13th, January 2025 GMT
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে হজরত শাহ সৈয়দ আবদুল আজিজ বোগদাদীর (রহ.) মাজারের ৭৫৫তম বার্ষিক ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর উপজেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় মাজারের ওরস বন্ধ রাখার জন্য পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশ দেয়।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের বর্তমান দরগাপাড়া গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে বটগাছে ঘেরা হজরত শাহ সৈয়দ মাওলানা আবদুল আজিজ বোগদাদীর (রহ.
মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আইনজীবী কাজী শাহ জাহান বলেন, ‘এ বছর ৭৫৫তম বার্ষিক ওরসের আয়োজন করা হয়। ১৫ থেকে ১৭ জুলাই তিন দিনব্যাপী এই ওরস হওয়ার কথা ছিল। এবার ইত্তেফাকুল ওলামার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওরস বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। মাজারে গানবাজনা বন্ধ রাখলেও কোরআন খতম, শিরনি বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু থাকবে।’
ইত্তেফাকুল ওলামা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুফতি মাহমুদুল হক আজিজি বলেন, ‘আল্লাহর অলির মাজার অপবিত্র করে কার্যক্রম করা অন্যায়। অলির মাজারকে কষ্ট দেওয়ায় আমাদের ইমানি দায়িত্ব থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘আলেম-ওলামারা চাচ্ছেন না মাজারে ওরস হোক। এ ছাড়া ময়মনসিংহ শহরে একটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রশাসনের একটি পর্যবেক্ষণ ছিল, এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হলে মোকাবিলা করা কঠিন হবে। ৫ আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতি যেহেতু স্থিতিশীল নয়, সে কারণে ওরসের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ঠিক হলে তারা করতে পারবে।’
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ময়মনসিংহ শহরে মাজারে একটি ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি উপজেলা এটি। সেটির প্রভাব এখানেও পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল আমাদের। ৭৫৫তম ওরস হলেও এবার আগের মতো প্রেক্ষাপট নেই।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ময়মনসিংহের নান্দাইলের ইমরান হোসেনের (২৬) বুক, পিঠ, চোখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছররা গুলি বিদ্ধ হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার তিনি অনেকটা নীরবেই চলে গেলেন। আজ শনিবার তাঁকে দাফন করা হয় নিজ গ্রামে।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আওয়ামী লীগ কখনো ফিরে এলে সমস্যা হবে—এমন আশঙ্কায় সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা নেননি কিংবা সরকারি তালিকাভুক্তও হননি ইমরান।
ইমরানের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে শনিবার গ্রামের বাড়িতে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আশিকিন আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমরান জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি; কিন্তু সরকারি কোনো তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আন্দোলনে আহত হওয়ার বিষয়টিও ইমরান কাউকে বলেননি। এখন আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।’
ইমরান হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশলী ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে। স্বজনেরা জানান, স্ত্রী ও ১৮ মাসের সন্তান নিয়ে গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় বসবাস করতেন ইমরান। প্রায় সাত বছর ধরে তিনি পাশের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২৮ জুলাই গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। পরে তাঁকে উদ্ধার করে পাশের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গোপনে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে শরীর থেকে বেশ কিছু ছররাগুলি বের করলেও যন্ত্রণা কমছিল না। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের ভাড়া বাসায় বুকে ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ইমরানের স্ত্রী রিতা আক্তার জানান, জুলাই আন্দোলনে তাঁর স্বামী আহত হলেও ভয়ে সরকারি তালিকায় নাম তোলেননি। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করানো যায়নি। তাঁর সঙ্গে যাঁরা আহত ও নিহত হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই তালিকাভুক্ত হওয়া ছাড়াও সরকারের সব ধরনের অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন; কিন্তু তাঁর স্বামীর কেউ খবর নেয়নি।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফয়জুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমরান কোথাও তালিকাভুক্ত হননি। তবে তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেখে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি তিনি আন্দোলনে আহত। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমাদের পক্ষে থেকে পরিবারটিকে যে ধরনের সহযোগিতা করা দরকার তা করা হবে।’
ইমরানকে জুলাই আন্দোলনের শহীদ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে পোস্ট করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব মো. আলী হোসেন বলেন, ‘ইমরান আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সে ছবি আমাদের কাছে রয়েছে। অনেকটা নীরবে বিনা চিকিৎসায় একজন জুলাইযোদ্ধা আজ মারা গেছেন; কিন্তু সরকারি কোনো তালিকায় তাঁর নাম নেই।’