দাম্পত্য কলহের জেরে জুলাই হত্যা মামলার আসামি স্বামী!
Published: 14th, January 2025 GMT
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহের জেরে জুলাই–আগস্টের একটি হত্যার মামলায় স্বামীকে আসামি করার অভিযোগে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই হত্যা মামলায় নিহতের পরিবারের কেউ বাদি না হয়ে গৃহশিক্ষক বাদি হওয়ায় রহস্য আরও ঘনীভূত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকলে কাউকে হয়রানি করা হবে না।
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ইফাত হাসান খন্দকার (১৬) নামে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার টেলিভিশন ও ওটিটি প্লাটফর্মের প্রযোজক সারোয়ার জাহান বাপ্পীকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সময় বাপ্পী বসুন্ধরার বাসায় থাকার প্রমাণ পেয়ে বিপাকে পড়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে ওই ব্যক্তির নামে তার স্ত্রী রুকাইয়া তাহসিনা বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা করেছেন। বাপ্পীও তার স্ত্রীর নামে দুটি মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগী বাপ্পীর দাবি, স্ত্রী তাহসিনার পূর্বের তিন বিয়ের বিষয় জানাজানি হলে ধামাচাপা দিতে তার নামে পাঁচটি মামলা করেন। সবশেষ সারওয়ার বিবাহবিচ্ছেদের পরিকল্পনা করার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়। বাপ্পীর অভিযোগ হয়রানি করতে স্ত্রীই তার মামলা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এটা করিয়েছেন। এর আগে স্ত্রীর বিরুদ্ধে সারওয়ারের করা একটি মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে আসে তাহসিনার প্রতারণা ও তিন বিয়ের ঘটনাটি। যদিও তার স্ত্রী তাহসিনা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তাহসিনা দাবি করেছেন, ‘স্বামীর পরকীয়া সম্পর্কের কারণে তাদের সংসারে ফাটল ধরেছে।’
গত ২০ জুলাই ইফাত হাসান আন্দোলন দমনকারীদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনায় আদালতে দায়ের করা হত্যা মামলায় ১১৮জন নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ নম্বর আসামি করা হয়েছে বাপ্পীকে। মামলায় তাকে ঢাকার ১৮নং ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার বাদী ইফাতের গৃহশিক্ষক কাউছার আলম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে অনেকেই ছাত্র–জনতার উপর হামলা চালায়। আমার পক্ষে সবাইকে চেনা সম্ভব হয়নি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এলাকাবাসীর সহায়তায় আসামির তালিকা করেছি। এখানে অনেককে আমি চিনি না এবং চেনা সম্ভবও না। দুর্ভাগ্যজনক কারোর নাম চলে আসলে তদন্তে তিনি অব্যহতি পেয়ে যাবেন। এখানে দোষের কিছু দেখছি না।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো.
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রী তাহসিনা বলেন, ‘সারওয়ার মানুষ খারাপ হলেও এই মামলায় আসামি হওয়া মানায় না। কারণ সে কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করছে সেটিও জানি না। কারণ পারিবারিক কোনো বিষয়ে মামলা করতে হলে আমি নিজে বাদী হয়ে মামলা করবো।’
বাপ্পী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্ত্রী তাহসিনার আরও স্বামী রয়েছে। একজন প্রবাসে, আরেক দেশে বাসায় যাতায়াত করেন। এমনকি সন্তানদের বাবার নাম পরিবর্তন করে অপর এক ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে দেখিয়ে সন্তানের পাসপোর্ট করেন। তখন তাহসিনা সন্তানের চিকিৎসার কথা বললে আদালত মানবিক কারণে মামলা খারিজ করে দেন। পরে আরেকটি মামলার তদন্ত করে পিবিআই তাহসিনার তিন বিয়ের সত্যতা পায় এবং আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে তাহসিনা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগ ভিত্তিহীন। সাইফুল ইসলাম নামে একজনের সঙ্গে আগে বিয়ে হয়েছিল। তার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর সারওয়ারকে বিয়ে করি। তারও আগে বিয়ে হয়েছিল। সব জেনেই আমরা বিয়ে করি। সন্তানের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরেও যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাপ্পী রাজি হয়নি। এ রাগে অন্য একজনের নাম ব্যবহার করে সন্তানের পাসপোর্ট করি।’
পিবিআই তদন্তে তিন বিয়ের প্রমাণ পায়। এ বিষয়ে তাহসিনা বলেন, ‘সারওয়ার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই তদন্ত রিপোর্ট নিজের মতো করে বানাতে সহায়তা করেছে। ওই প্রতিবেদনের কিছুই সত্য না। আদালতে এটি প্রমাণিত হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলের পরিকল্পনা কয়েক দিন আগে আটকে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এমন সময় এ খবর সামনে এসেছে, যখন ইরানে চালানো হামলার প্রথম দিনই দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় খামেনির একজন উপদেষ্টাও নিহত হন।
মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানিরা কি এখন পর্যন্ত কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেছে? না। যতক্ষণ না তারা তা করছে, ততক্ষণ আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্বের পেছনে লাগার বিষয়ে, এমনকি আলাপও করছি না।’
খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার ফক্স নিউজকে বলেন, ‘কখনো আলাপই হয়নি, এমন অনেক বিষয় নিয়েও খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আমি সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’
ফক্সের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা করার দরকার, তা করি।’
নেতানিয়াহু বলেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলার একটি ফল হতে পারে সরকার পরিবর্তন। তেহরানের সৃষ্ট ‘অস্তিত্বের হুমকি’ দূর করতে ইসরায়েল যা যা প্রয়োজন, তা-ই করবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চলমান এই সংঘাত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এটি সহজেই শেষ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ইরানকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, যদি ইরান কোনো আমেরিকান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রও এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।