কাঁদতে কাঁদতে অলঙ্কার খুলে দেন লায়লা কানিজ
Published: 15th, January 2025 GMT
ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের স্ত্রী ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে লায়লা কানিজকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে জেলহাজতে রাখা হয়। ২টার দিকে এজলাসে তোলা হয় লায়লা কানিজকে। আসামিদের রাখার ডকে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। বিষয়টি নজরে এলে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব তাকে সেখানে থাকা বেঞ্চে বসার অনুমতি দেন। দুই আসামি বেঞ্চ থেকে উঠে তাকে বসতে দেন। দুই ঘণ্টার বেশি সময় শুনানির জন্য অপেক্ষায় বসে থাকেন লায়লা কানিজ। এ সময় তাকে কখনো হাসতে আবার কখনো কাঁদতে দেখা যায়। কিছু সময় আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে আদালত জানান, আসামি (লায়লা কানিজ) কারাগারে যাবেন। রিমান্ড শুনানি পরে হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানিয়েছেন, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড শুনানি হবে।
এরপর লায়লা কানিজকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে গহনা খুলে ফেলতে বলেন। লায়লা কানিজ নাক, কান, গলায় থাকা স্বর্ণালঙ্কার খুলে ফেলেন। এ সময় কাঁদতে দেখা যায় তাকে। গহনাগুলো ভাইয়ের কাছে দেন লায়লা কানিজ।
আদালত থেকে বের করার সময় লায়লা কানিজকে কান্না করতে দেখা যায়। তার ভাই-বোনও কাঁদতে থাকেন। পরে লায়লা কানিজকে কারাগারে নেওয়া হয়।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা কাম্য নয়
খুলনার কয়রা উপজেলা দেশের অন্যতম নদীভাঙনপ্রবণ এলাকা। কয়রার লক্ষাধিক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন ও ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সরাসরি ভুক্তভোগী। প্রথম আলোর খবরে এসেছে, উপজেলাটির মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আচমকাই ভেঙে যায় সুরক্ষা বেষ্টনী হিসেবে থাকা বেড়িবাঁধ। ধসে পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে আতঙ্কিত মানুষ ছুটে গিয়ে দেখেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে দুই শ মিটারের মতো বাঁধ নদীতে তলিয়ে গেছে। এবার ভাঙন প্রাকৃতিক দুর্যোগে নয়, বরং ঘটেছে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার ফলে।
প্রায় এক মাস আগেই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি। অভিযোগ আছে, প্রকৃত মেরামতের বদলে সামান্য বালুর বস্তা ফেলে দায়সারা ডাম্পিং করা হয়। প্রথম ধাপের সেই ছোট ফাটল থেকেই যে বড় বিপদের সংকেত মিলেছিল, কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করেছে। ফল হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতের জোয়ারে সেই দুর্বল অংশ ভয়াবহ ভাঙনে রূপ নেয়। গ্রামবাসী রিংবাঁধ নির্মাণে ঝাঁপিয়ে না পড়লে পুরো লোকালয় লোনাপানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল।
এ অঞ্চলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এখন নিজেই বড় দুর্যোগে পরিণত হচ্ছে। কোথাও সিসি ব্লক না বসানো, কোথাও মাটি ভরাট অসম্পূর্ণ রাখা, আবার কোথাও কেবল বালুর বস্তা ফেলে রেখে যাওয়ার মতো কাজ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার পরিচায়ক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বরাদ্দ বিলম্ব বা বালু-মাটির সংকট দেখিয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তা জনগণের দুর্ভোগ ও ঝুঁকি কমায় না। দুর্যোগপ্রবণ উপকূলে মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার চেয়ে বড় যুক্তি আর কিছু হতে পারে না।
আমরা আশা করি, মাটিয়াভাঙ্গাসহ আশপাশের সব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে মানসম্মত সিসি ব্লক বসানো, সঠিকভাবে মাটি ভরাট এবং ঢাল সংরক্ষণ জরুরি ভিত্তিতে নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও গুণগত মান রক্ষায় স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে অগ্রগতি মূল্যায়নও জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্থায়ী পর্যবেক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সামান্য ফাটলও দ্রুত শনাক্ত ও মেরামত করা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলীয় অঞ্চল ক্রমেই অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অস্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার ঘনঘটা বিবেচনায় বাঁধ ব্যবস্থাপনাকে কেবল উন্নয়ন প্রকল্প না দেখে জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে। দুর্যোগের পর তড়িঘড়ি মেরামতের বদলে আগে থেকেই ঝুঁকি নিরূপণ ও প্রতিরোধমূলক স্থায়ী সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। কারণ, উপকূলের এসব বাঁধ কেবল মাটির কাঠামো নয়, উপকূলবাসীর জীবন, জীবিকা ও আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষার প্রধান ভরসা।