নেপালে জেন-জি আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর দলের বিশাল সমাবেশ
Published: 14th, December 2025 GMT
নেপালে জেন–জিদের আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির রাজনৈতিক দল বিশাল সমাবেশ করেছে। তিন মাস আগে তরুণদের ওই আন্দোলনের পর হিমালয়ের দেশটিতে এটিই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ। শনিবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ সমাবেশ হয়।
পুলিশের ধারণা, কাঠমান্ডুর কাছে ভক্তপুর এলাকায় শনিবারের সমাবেশে ৭০ হাজার মানুষ অংশ নেন। এর মধ্য দিয়ে অলির দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের তিন দিনব্যাপী কনভেনশনের শুরু হয়েছে। সমাবেশের আগে আয়োজকেরা বলেছিলেন, তিন লাখ মানুষ সমাবেশে অংশ নিতে পারেন।
নেপালের রাজনৈতিক বিশ্লেষক পুরাঞ্জন আচার্য বলেন, নেপালে তরুণদের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পর এটিই কোনো রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। গত সেপ্টেম্বরে ওই আন্দোলন এবং পরবর্তী সহিংসতায় ৭৭ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন দুই হাজার জনের বেশি।
আন্দোলনের সময় নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্টসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় অলিসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিককে উদ্ধার করে নিরাপদে রেখেছিল সেনাবাহিনী। আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংসতায় নেপালে ৫৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়েছিল।
অলি সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ওই সরকারের প্রধান করা হয় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনকে শনিবারের সমাবেশে সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ বলে উল্লেখ করেন অলি। নেপালে নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবিও তুলে আসছেন তিনি।
অলি এ-ও বলেন যে তাঁদের জেন–জিবিরোধী বলে দেখানো হচ্ছে। তবে তা সত্য নয়। সমাবেশে কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর পোখরেল বলেন, যদিও তাঁদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, তারপরও তাঁরা মানুষের হৃদয়ে আছেন। সমাবেশে বিপুল মানুষের উপস্থিতিই তার প্রমাণ।
কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের কনভেনশনে আগামীকাল সোমবার দলের নতুন সভাপতি বেছে নিতে দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধি ভোট দেবেন। দলটির বর্তমান সভাপতি অলি নিজেই। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঈশ্বর পোখরেল। নতুন সভাপতির নেতৃত্বে পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে নেপালের সবচেয়ে বড় কমিউনিস্ট দলটি। আগামী ৫ মার্চ দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের কথা রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তিউনিসিয়ার গুপ্তহত্যা, ওসমান হাদিকে গুলি ও বিপজ্জনক রাজনীতি
গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী তিউনিসিয়ায় প্রথম নির্বাচন হয় ২০১১ সালে। নির্বাচনের পরে, বেশ অস্থিতিশীল একটা সরকারের সময়, কয়েক মাসের ব্যবধানে চকরি বেলাইদ ও মোহামেদ ব্রাহিমি ‘মোটরসাইকেলে চড়ে আসা’ আততায়ীর গুলিতে গুপ্তহত্যার শিকার হন। আজ এটা স্বীকৃত যে, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে এই দুটি হত্যাকাণ্ড তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্রের যে স্বপ্ন ছিল, সেটি যে আজ প্রায় ধ্বংসের পথে, তার জন্য দায়ী।
টার্গেট শরিফ ওসমান হাদি হবেন কি না সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছিল না, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা যে ঘটবে, সেটার যৌক্তিক অনুমান করা যাচ্ছিল। এর প্রাথমিক কারণ, দেশে-বিদেশে থাকা কিছু শক্তি চায় না বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাক।
এটাও আমরা জানি, একটা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করা সম্ভব হয় যদি সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সততা এবং পেশাদারির সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে যায়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দক্ষতার স্বাক্ষর তো রাখতে পারেইনি, খুব সাধারণ পারফরম্যান্সও দেখাতে পারেনি। কিছুদিন আগে প্রথম আলোর মাধ্যমে পরিচালিত জনমত জরিপেও দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ওপরে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ অসন্তুষ্ট।
গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গতিপথ তিউনিসিয়ার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই মেলে। সে কারণেই আমাদের সুযোগ ছিল তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়ার। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা পারিনি সেটা।দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো হবে, এটা প্রত্যাশা আমরা করিনি। শেখ হাসিনার অপশাসনের ফলে প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত পুলিশ বাহিনী তার মনোবল ফিরে পেতে সংগ্রাম করেছে। কিন্তু এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পরও বলতে হবে, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, বিশেষ করে এমন একটা সময়ে যখন সেনাবাহিনীও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে আছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল, এমনটিও মনে হয়নি অনেক সময়।
দীর্ঘকাল স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিক্রিয়ায় কোনো দেশে গণ-অভ্যুত্থান হলেই অভ্যুত্থানকারীরা সফল হবেনই এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক দেশে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান গড়ে ওঠার সময়টায় (আরব বসন্ত) অন্তত তিনটি দেশ (সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন) দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
আরও পড়ুনওসমান হাদিকে হামলা: গুলির লক্ষ্য একজন না, লক্ষ্য নির্বাচন?১৮ ঘণ্টা আগেআর কর্তৃত্ববাদী শাসকের পতন ঘটানোর সাফল্য এসেছিল যে দেশগুলোতে (তিউনিসিয়া, মিসর) সেগুলো গেছে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। একটা স্বৈরাচারী সরকার তার ক্ষমতায় থাকাকে নিশ্চিত করার জন্য ভেঙে ফেলে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান, ফলে স্বৈরশাসকের অনুপস্থিতিতে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অর্থে ক্রিয়াশীল থাকে না।
এমন প্রেক্ষাপটে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর সবচেয়ে জরুরি কাজ অত্যন্ত কঠিন হলেও নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতকে খুব খারাপ পর্যায়ে নিয়ে না যাওয়া। বিশেষ করে নিজেদের মধ্যে মতাদর্শগত বিভেদ যতটা সম্ভব এড়ানো।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে চিন্তা, কর্মসূচি এবং মতাদর্শগত পার্থক্য থাকবেই এবং সেটা নিয়ে বিতর্ক তো বটেই ঝগড়াবিবাদও হতে পারে। কিন্তু দল এবং শক্তিগুলো পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি তৈরি করে।
আর গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী প্রায় ভেঙে পড়া রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমন প্রবণতা ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে, যা এমনকি গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১২ ডিসেম্বর ২০২৫