খুলনায় দ্বিতীয় দিনের মতো তেল উত্তোলন-পরিবহন বন্ধ
Published: 27th, January 2025 GMT
খুলনা বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকরা। এর ফলে গতকালও খুলনা নগরীর খালিশপুর থানার কাশিপুর এলাকার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন এবং ১৬ জেলায় পরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে পেট্রোল পাম্পগুলোতে এখনও তেলের সংকট দেখা দেয়নি।
শ্রমিকরা জানান, গত রোববার দুপুরে আলী আজিমকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে খালিশপুর থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি অফিস ভাঙচুরের মামলা রয়েছে। আলী আজিম ওই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহসভাপতি। গত ২১ আগস্ট ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস শেখ খুলনার সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, আলী আজিমসহ ৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন।
আলী আজিমকে গ্রেপ্তারের পরপরই তাঁর মুক্তির দাবিতে রোববার আন্দোলনে নামেন ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকরা। তারা কর্মবিরতি, জ্বালানি তেল উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধ এবং নতুন রাস্তার মোড়ে বিআইডিসি সড়ক অবরোধ করেন। পরে রাতে যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার হলেও কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল সকাল থেকে শ্রমিকরা নতুন রাস্তার মোড়ে ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এ সময় তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। বেলা ১১টার দিকে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপোর সামনে ট্যাঙ্কলরির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তবে তেল উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুপুর ২টার দিকে চালকরা ট্যাঙ্কলরিগুলো সরিয়ে নেন।
খুলনা বিভাগীয় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এনাম মুন্সী জানান, বিএনপি অফিস ভাঙচুরের মামলায় ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির বর্তমান চার নেতা, সাবেক দুই নেতা ও তিন সাধারণ সদস্যের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় মামলা হয়। অথচ আলী আজিম বিএনপি নেতা। আলী আজিমের মুক্তি এবং ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে গতকাল সকালে আলী আজিমকে মহানগর হাকিম আদালতে নেয় পুলিশ। আইনজীবীরা তাঁর জামিনের আবেদন
জানালে আদালত নামঞ্জুর করে আলী আজিমকে কারাগারে পাঠান।
ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান জানান, বিএনপি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় আলী আজিম জড়িত নন বলে মামলার বাদী আদালতে এফিডেভিট জমা দিয়েছেন। এ মামলায় তাঁকে জামিন অথবা অব্যাহতি দিলে তাঁর কোনো আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু আলী আজিমের জামিন হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট য ঙ কলর ব এনপ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’