দুই হরিণ উদ্ধার, বনরক্ষীদের ওপর হামলার চেষ্টা
Published: 28th, January 2025 GMT
শ্যামনগরে শিকারি চক্রের ফাঁদ থেকে জবাই করা একটি হরিণ উদ্ধারের পর বনরক্ষীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালিয়েছে এক দল দুর্বৃত্ত। বন বিভাগের পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মীরগাং টহল ফাঁড়ির সদস্যদের লক্ষ্য করে এ হামলার চেষ্টা হয়। সোমবার রাতে উপজেলার হরিনগর বাজারসংলগ্ন পাউবো বাঁধের ওপর এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী বনরক্ষীদের অভিযোগ, মীরগাং টহল ফাঁড়ির সদস্যরা শিকারি চক্রের ফাঁদ থেকে একটি জবাই করা হরিণ উদ্ধারের পর রাতে ফাঁড়িতে ফেরার পথে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে ক্ষুব্ধ শিকারি চক্রের সদস্যরা। পরে তারা পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। হরিণ উদ্ধারের ঘটনায় তাদের হুমকি দিচ্ছে শিকারি চক্রের সদস্যরা।
সোমবার সকালে সুন্দরবনের ভেতর শিকারি চক্রের ফাঁদ থেকে একটি জবাই করা হরিণ উদ্ধার করেন বন বিভাগের মীরগাং টহল ফাঁড়ির সদস্যরা। পরদিন মঙ্গলবার সকালে পার্শ্ববর্তী চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা শিকারি চক্রের ফাঁদে আটক আরও একটি হরিণ জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। সুন্দরবনের সিংহড়তলী এলাকা থেকে হরিণকে উদ্ধারের পর বনের মধ্যে অবমুক্ত করেন বনরক্ষীরা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সাতটি হরিণ শিকারের ফাঁদ জব্দ করেন তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির ওসি সজল মজুমদার।
মীরগাং টহল ফাঁড়ির ওসি গোলাম কিবরিয়ার ভাষ্য, সোমবার সকালে ফাঁদে আটকে পড়া একটি হরিণ জবাই করে শিকারি চক্রের সদস্যরা। পরে তারা জবাই করা হরিণটি উদ্ধার করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে উদ্ধার করা হরিণ জমা দিতে দুপুরের দিকে তারা সাতক্ষীরা আদালতে যান। রাত ৯টার দিকে অফিসে ফেরার পথে ১৬-১৭ জন যুবক হরিনগরের সিংহড়তলী এলাকায় তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির ওসির সহায়তায় ভিন্ন পথে পালিয়ে রক্ষা পান।
গোলাম কিবরিয়ার অভিযোগ, উদ্ধার করা হরিণ নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আদালতের পথে রওনা হওয়ার পর চুনকুড়ি গ্রামের আনিছুর, আবিয়ার, আব্দুর রহিম ও সাহেব আলী লোকজন নিয়ে বনকর্মীদের সহায়ক সংগঠন সিপিজি সদস্য পরিমল মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়। হরিণ শিকারের মামলায় তাদের নাম জড়ানো হলে এলাকায় কোনো বনকর্মীকে অক্ষত থাকতে দেওয়া হবে না বলেও ভীতি দেখানো হয়। এ ছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে উপঢৌকন হিসেবে পাঠানোর জন্য হরিণের ১০ কেজি মাংসও দাবি করে চক্রের প্রধান আনিছুর।
আনিছুর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাঁর সঙ্গী আব্দুর রহিম, আবিয়ার, সাহেব আলীসহ অন্যরাও যুবদলের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আনিছুর মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাবের মোড়লের ভাগনে হওয়ায় মামার প্রভাব খাটিয়ে হরিণ শিকার, ঘের দখলসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে আনিছুর রহমান বলেন, তিনি সুন্দরবনে যাতায়াত করেন না। হরিণ শিকারেও জড়িত নন। সোমবার জবাই করা একটি হরিণ উদ্ধারের মামলায় তাঁর নাম জড়ানোর খবর পেয়ে তিনি বনরক্ষীদের ফোন করেছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার রাতে কিছু গ্রামবাসী বনকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না তিনি।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জার হাবিবুল ইসলাম বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনের চুনকুড়ি এবং মীরগাং এলাকা থেকে পরপর দু’দিন দুটি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় চুনকুড়ি এলাকার চিহ্নিত হরিণ শিকারি আনিছুর ও তাঁর লোকজন বনরক্ষীসহ সিপিজি সদস্য এবং ফাঁড়িগুলোতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরবন র র সদস য টহল ফ
এছাড়াও পড়ুন:
কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।
খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।
উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।