শ্যামনগরে শিকারি চক্রের ফাঁদ থেকে জবাই করা একটি হরিণ উদ্ধারের পর বনরক্ষীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালিয়েছে এক দল দুর্বৃত্ত। বন বিভাগের পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মীরগাং টহল ফাঁড়ির সদস্যদের লক্ষ্য করে এ হামলার চেষ্টা হয়। সোমবার রাতে উপজেলার হরিনগর বাজারসংলগ্ন পাউবো বাঁধের ওপর এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী বনরক্ষীদের অভিযোগ, মীরগাং টহল ফাঁড়ির সদস্যরা শিকারি চক্রের ফাঁদ থেকে একটি জবাই করা হরিণ উদ্ধারের পর রাতে ফাঁড়িতে ফেরার পথে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে ক্ষুব্ধ শিকারি চক্রের সদস্যরা। পরে তারা পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। হরিণ উদ্ধারের ঘটনায় তাদের হুমকি দিচ্ছে শিকারি চক্রের সদস্যরা। 
সোমবার সকালে সুন্দরবনের ভেতর শিকারি চক্রের ফাঁদ থেকে একটি জবাই করা হরিণ উদ্ধার করেন বন বিভাগের মীরগাং টহল ফাঁড়ির সদস্যরা। পরদিন মঙ্গলবার সকালে পার্শ্ববর্তী চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা শিকারি চক্রের ফাঁদে আটক আরও একটি হরিণ জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। সুন্দরবনের সিংহড়তলী এলাকা থেকে হরিণকে উদ্ধারের পর বনের মধ্যে অবমুক্ত করেন বনরক্ষীরা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সাতটি হরিণ শিকারের ফাঁদ জব্দ করেন তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির ওসি সজল মজুমদার। 
মীরগাং টহল ফাঁড়ির ওসি গোলাম কিবরিয়ার ভাষ্য, সোমবার সকালে ফাঁদে আটকে পড়া একটি হরিণ জবাই করে শিকারি চক্রের সদস্যরা। পরে তারা জবাই করা হরিণটি উদ্ধার করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে উদ্ধার করা হরিণ জমা দিতে দুপুরের দিকে তারা সাতক্ষীরা আদালতে যান। রাত ৯টার দিকে অফিসে ফেরার পথে ১৬-১৭ জন যুবক হরিনগরের সিংহড়তলী এলাকায় তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির ওসির সহায়তায় ভিন্ন পথে পালিয়ে রক্ষা পান। 
গোলাম কিবরিয়ার অভিযোগ, উদ্ধার করা হরিণ নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা আদালতের পথে রওনা হওয়ার পর চুনকুড়ি গ্রামের আনিছুর, আবিয়ার, আব্দুর রহিম ও সাহেব আলী লোকজন নিয়ে বনকর্মীদের সহায়ক সংগঠন সিপিজি সদস্য পরিমল মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়। হরিণ শিকারের মামলায় তাদের নাম জড়ানো হলে এলাকায় কোনো বনকর্মীকে অক্ষত থাকতে দেওয়া হবে না বলেও ভীতি দেখানো হয়। এ ছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে উপঢৌকন হিসেবে পাঠানোর জন্য হরিণের ১০ কেজি মাংসও দাবি করে চক্রের প্রধান আনিছুর। 
আনিছুর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাঁর সঙ্গী আব্দুর রহিম, আবিয়ার, সাহেব আলীসহ অন্যরাও যুবদলের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আনিছুর মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাবের মোড়লের ভাগনে হওয়ায় মামার প্রভাব খাটিয়ে হরিণ শিকার, ঘের দখলসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। 
অভিযোগ অস্বীকার করে আনিছুর রহমান বলেন, তিনি সুন্দরবনে যাতায়াত করেন না। হরিণ শিকারেও জড়িত নন। সোমবার জবাই করা একটি হরিণ উদ্ধারের মামলায় তাঁর নাম জড়ানোর খবর পেয়ে তিনি বনরক্ষীদের ফোন করেছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার রাতে কিছু গ্রামবাসী বনকর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না তিনি। 
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জার হাবিবুল ইসলাম বলেন, পশ্চিম সুন্দরবনের চুনকুড়ি এবং মীরগাং এলাকা থেকে পরপর দু’দিন দুটি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় চুনকুড়ি এলাকার চিহ্নিত হরিণ শিকারি আনিছুর ও তাঁর লোকজন বনরক্ষীসহ সিপিজি সদস্য এবং ফাঁড়িগুলোতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র র সদস য টহল ফ

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ