‘চাচা হেনা কোথায়?’ –কোথা থেকে এলো এই কথা
Published: 31st, January 2025 GMT
বেশ কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ‘চাচা বাড়িঘর এত স্বাজানো কেন?’, ‘চাচা হেনা কোথায়?’—এই ধরনের নানা কথা। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন, চাচা কমলাপুর এত ফাঁকা কেন? চলুন এর নেপথ্যের কারণ জানা যাক।
১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় দেলোয়ার জাহান ঝন্টু এবং ইফতেখার জাহান পরিচালিত সিনেমা ‘প্রেমের সমাধি’। বসুন্ধরা চলচ্চিত্রের ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন আতাউর রহমান টুনু। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাপ্পারাজ, শাবনাজ ও অমিত হাসান। ১৯৯৭ সালে ‘বকুল প্রিয়া’ নামে পশ্চিমবঙ্গে পুনর্নির্মাণ করা হয়। প্রেম ভালোবাসা ও বিরহের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমাটি। সিনেমায় বকুল চরিত্রে অভিনয় করেছে বাপ্পারাজ এবং হেনার চরিত্র রূপায়ন করেছেন শাবনাজ। আসিফ খান চরিত্রে অমিত হাসান। হেনার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনোয়ার হোসেন, সিনেমার যার চরিত্র খালেক মিয়া।
সিনেমায় দেখা যায়, ছোটবেলা বকুল আর প্রিয়া দুইজন দুজনের ভালো সঙ্গী থাকে। একজন আরেকজনকে সুরে সুরে কাছে ডাকে। এরপর তারা দুজন দুজনের সঙ্গে পুতুল বিনিময় করে। এরপর দুজন মিষ্টিমুখ করতে চাইলেও বকুলকে তার বাবা নিয়ে যান এবং শাসন করেন। এরপর তাদের আর দেখা হয় না। দুজনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সেই পুতুল। পুতুলের মাধ্যমে দুইজন দুইজনের সাথে কথা বলতে পারে৷ এরপর বকুলকে পড়াশোনার জন্য শহরে পাঠায় তার বাবা। বকুল-হেনা দুইজনেই বড় হয়ে যায়। হেনা গানে গানে বকুলকে আহবান করে। এরপর বকুলের আসার খবরে হেনা খুশি হয় এবং গান গেয়ে সেই আনন্দ প্রকাশ করে। বকুল শহর থেকে তার একটি ছবি হেনাকে পাঠালে, হেনা সেই ছবি দেখতে যায় তাদের ছোটেবেলার সেই স্মৃতিবিজড়িত স্থানে। সেখানে যাওয়ার পর সেই ছবি বাতাসে উড়ে গাছে আটকে যায়। সেই ছবি উদ্ধার করতে গিয়ে গাছ থেকে পরে হেনা অন্ধ হয়ে যায়। বকুল গ্রামে ফিরে দেখে হেনা অন্ধ হয়ে গেছে। এরপর ডাক্তার জানায় হেনার চোখ ঠিক করতে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। সেই টাকা জোগাড় করতে নিজের কিডনি বিক্রি করতে চায় বকুল। কিডনি বিক্রি শেষে ফিরে এসে দেখে হেনাদের বাড়িঘর সাজানো। এ সময় বকুল হেনার বাবাকে জিজ্ঞেস করে, ‘চাচা বাড়িঘর এত সাজানো কেন? হেনা কোথায়? এরপর হেনার বাবা চুপ থাকেন। বকুল বলে, ‘চাচা কথা বলছেন না যে, চুপ করে আছেন কেন?’ এরপর হেনার বাবা খালেক মিয়া বলেন, ‘হেনাকে তুমি ভুলে যাও।’ এরপর বকুল বলে, ‘ভুলে যাব?’ সে সময় খালেক মিয়া বলেন, ‘হেনার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এরপর বকুল বলে, ‘এ আমি বিশ্বাস করি না।’
আরো পড়ুন:
ধর্ষণের অভিযোগে ভাইরাল ইসমাইল আটক
মুন্সীগঞ্জে ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণের ভিডিও ভাইরাল
বর্তমানে যে কোন বিষয়েই এই কথাটিকে পরিমার্জন, পরিবর্ধন করে ব্যবহার করছেন নেটিজেনরা।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন দ ইজন
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।