কুষ্টিয়ায় পাউবোর কর্মচারী সম্মেলন চলাকালে গুলি, আতঙ্ক
Published: 2nd, February 2025 GMT
কুষ্টিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয় লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলির ঘটনায় দিনভর উত্তেজনা দেখা দেয়। একই সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে। ঘটনায় জড়িতদের খুঁজতে কাজ করছে পুলিশ। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তারা কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে নানা জল্পনা করছেন। কারণ একসময় ঠিকাদারি কাজকে ঘিরে মানুষের মাথা কেটে আতঙ্ক ছড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটেছিল এখানে।
পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। তবে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। ঘটনাস্থলের আশপাশে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বরে পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কর্মী সম্মেলন চলছিল। দুপুর দেড়টার দিকে অনুষ্ঠানে আসা লোকজন চত্বরের মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ছিলেন। এ সময় হঠাৎ দুইবার বিকট শব্দ শুনতে পান।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ভবন থেকে ২০ ফুট দূরে সীমানা প্রাচীর। এর পাশেই গড়াই নদী। সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন শহরের জিকে এলাকার সড়ক।
কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত আনসার সদস্য মামুন খন্দকার বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান। এরপর কয়েকটা শিশু এসে গুলির খোসা হাতে নিয়ে পাউবোর ভেতর ফেলে দেয়। গুলির শব্দ শুনে পাউবো চত্বরে থাকা সবাই ছুটে আসেন সীমানা প্রাচীরের দিকে। দুর্বৃত্তরা তিনজন ছিল বলে জানতে পেরেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, অনুষ্ঠান চলাকালীন গুলির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশু জানায়, তারা তিনজন খেলা করছিল। জোরে দুটি শব্দ শুনতে পায় তারা। এরপর দেখে দেয়ালের (পাউবোর সীমানা প্রাচীর) কাছ থেকে দুজন দৌড়ে বালুর ওপর দিয়ে গড়াই নদীর দিকে যাচ্ছে। তাদের একজনের হাতে বন্দুক ছিল।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শেহাবুর রহমান বলেন, গুলি করার পর দুজন ব্যক্তি বালুর ভেতর দিয়ে গড়াই নদে নৌকাযোগে চলে গেছে জানা গেছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।