রংপুরের পীরগঞ্জে মরিচখেত থেকে এক নারীর মাথাবিহীন ও রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চতরা ইউনিয়ন পরিষদের বড় বদনাপাড়া গ্রাম থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

উদ্ধারের পর ওই নারীর পরিচয় জানা যায়নি। এ সময় তাঁর পরনে লাল রঙের জামা ও পায়জামা ছিল। তাঁর বয়স ৩০ বলে ধারণা করছে পুলিশ।

পীরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, ওই নারীর গলা থেকে মাথার পুরো অংশ কেটে নেওয়া হয়েছে। আশপাশে কোথাও তাঁর মাথাটি পাওয়া যায়নি। রক্তাক্ত অবস্থায় লাশটি মরিচখেতে পড়েছিল। মাথাটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে লাশটির শরীরের অন্য কোথাও প্রাথমিকভাবে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের লাশটি জন্য রংপুর পাঠানো হচ্ছে। অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহটির পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

এ ঘটনার পরপর আজ দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার আসিফা আফরোজ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অনুশোচনা নেই শেখ হাসিনার

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব অপরাধ বিবেচনায় নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তার একটি ছিল উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও ঘৃণা বা বিদ্বেষপূর্ণ (হেইট স্পিচ) বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, রায় ঘোষণার সময় এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি অবজ্ঞাসূচক বা তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন, এটিও ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে।

ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি ক্ষমাও চাননি; বরং তিনি ‘হেইট স্পিচ’-এর মাধ্যমে সময়ে-সময়ে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে গত সোমবার রায় ঘোষণা করার সময় ট্রাইব্যুনাল কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেন, এর কোনো কোনোটি ছিল শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত।

অবজ্ঞাসূচক ও ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে এর আগে শেখ হাসিনার প্রতি আদেশ দেওয়া হয়েছিল বলে রায় ঘোষণার সময় উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল। ঘোষিত রায়ে বলা হয়, দলীয় নেতা শাকিলের (গাইবান্ধা বাড়ি) সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনে শেখ হাসিনা ঘৃণাসূচক ও অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছিলেন।

ওই কথোপকথনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে ২২৬টি মামলা হয়েছে, সে জন্য ২২৬ জনকে হত্যার ‘লাইসেন্স’ পেয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এক মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলার আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

উসকানিমূলক বক্তব্য অন্যদের প্ররোচিত করে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মাকসুদ কামালের সঙ্গে গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার কথোপকথনের বিষয়টিও ঘোষিত রায়ে এসেছে। ওই কথোপকথনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘রাজাকারদের তো ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও (আন্দোলনরত) তাই করব। একটাও ছাড়ব না, আমি (শেখ হাসিনা) বলে দিচ্ছি।’

ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এটি কাচের মতো স্বচ্ছ, শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য তাঁর দলের কর্মী, সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে প্ররোচিত করে। তাঁর বক্তব্য আন্দোলনকারীদের উসকে দেয়। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আন্দোলনকারীদের হত্যা ও নির্মূল করার আদেশ দিয়েছেন।

ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতা পর্যালোচনা করে ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনা ও তাঁদের দাবি পূরণের পরিবর্তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্ডারমাইন দ্য মুভমেন্ট (আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন) এবং ‘রাজাকারস’ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অবমাননাকর মন্তব্য করেন, যা বাংলায় গালি। ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা চাকরি পাবে না তো রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে’—এমন মন্তব্য করেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার এমন অবমাননাকর মন্তব্যের পর ছাত্রছাত্রীরা সোচ্চার হয়। শেখ হাসিনার ওই মন্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

‘হত্যার উদ্দেশ্যে ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ’

রায়ে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়ে ড্রোন ব্যবহার করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আদেশ দেন। তাই তাঁদের হত্যার উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। আর এই আদেশের বিষয়টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে শেখ হাসিনার টেলিফোনে কথোপকথনে (গত বছরের ১৮ জুলাই) উন্মোচিত হয়।

পরস্পর যোগসাজশে নৃশংসতা

ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যার উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন পরস্পর যোগসাজশে ও সহযোগিতায় যৌথভাবে নৃশংসতা ঘটান। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাক্ষ্যে উন্মোচিত হয় যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর, অতিরিক্ত সচিব, এসবিপ্রধান, ডিবিপ্রধান, র‍্যাব মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর কমিশনার, বিজিবি ও আনসারের মহাপরিচালক, এনটিএমসিপ্রধান, ডিজিএফআই ও এনএসআইপ্রধান সমন্বয়ে ‘কোর কমিটি’ গঠিত হয়।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর প্রতি রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় ‘কোর কমিটি’ বৈঠকে বসত। শেখ হাসিনার কাছ থেকে ‘কোর কমিটি’ নির্দেশনা পেত।

ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, মামুনের সাক্ষ্যে এসেছে আন্দোলনকারীদের সমবেত হওয়ার স্থান নির্ণয়ে ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপেন (মারণাস্ত্র) ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত হয়।

অনুশোচনা না থাকা

এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার সময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, যাঁরা আসামি হয়েছেন, তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। এত বড় অপরাধের পরও তাঁর (শেখ হাসিনা) মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা পরিলক্ষিত হয়নি। উল্টো যাঁরা তাঁর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁদের হত্যা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের (সাক্ষী) বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলছেন।

এ বিষয় ঘোষিত রায়ে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল আরও বলেছেন, শেখ হাসিনা হেইট স্পিচ (বিদ্বেষপূর্ণ) দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁকে বিরত (ঘৃণা না ছড়ানো) থাকতে বলা হলেও তিনি থাকেননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ