রুয়েটে ভর্তিযুদ্ধ, প্রতি আসনের জন্য লড়বেন ১৬ শিক্ষার্থী
Published: 7th, February 2025 GMT
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তিতে প্রাক-নির্বাচনী (এমসিকিউ) পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। এবার রুয়েটের প্রতিটি আসনের জন্য লড়বেন ১৬ জন শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুর রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান।
অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
রাজশাহী কলেজে ‘বিন্দু থেকে সিন্ধু’
ঢাকা থেকে নিখোঁজ কিশোরী সুবা নওগাঁয় উদ্ধার
তিনি আরো বলেন, “ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের জালিয়াতি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “প্রথম শিফটে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন রোল নম্বর-১০০০০১ থেকে ১০৬৬৩৯ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় শিফটে রয়েছে রোল নম্বর-২০০০০১ থেকে ২০৬৬৩৮ পর্যন্ত, তাদের পরীক্ষা চলবে দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। তৃতীয় শিফটে রোল নম্বর- ৩০০০০১ থেকে ৩০৬৬৩৮ পর্যন্ত পরীক্ষা হবে, তাদের পরীক্ষা চলবে বিকেল ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা শেষে নির্বাচনী (লিখিত) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষা হবে ২০ ফেব্রুয়ারি। এ পরীক্ষায় ‘ক’ ও ‘খ’ উভয় গ্রুপের জন্য সর্বমোট ৩৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা এবং ‘খ’ গ্রুপের জন্য অতিরিক্ত ১০০ নম্বরের মুক্তহস্ত অংকন পরীক্ষা হবে। ভর্তির জন্য নির্বাচিত ও অপেক্ষমান প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে ৮ মার্চ।”
তিনি বলেন, “পরীক্ষায় অংশ নিতে পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই উচ্চ মাধ্যমিকের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও ফটোকপি, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটাধারীদের গোত্রপ্রধানের দেওয়া সনদের সত্যায়িত ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে। আর পরীক্ষা চলাকালে অনুমোদিত ক্যালকুলেটর ছাড়া অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখা যাবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম সরকার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এইচএম রাসেল, ছাত্র-কল্যাণ দপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, উপ-পরিচালক (প্রশাসন) জেডএইচএম মনজুর মোর্শেদ, জনংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মুরতুজা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ক ষ পর ক ষ র পর ক ষ য় র জন য আসন র
এছাড়াও পড়ুন:
আমার জন্মঋতু
আমি বন্ধনহীন মৌসুমী বায়ু—, ভ্রমি দেশে দেশে দেশে
শেষে পৌঁছেছি এনে আমার প্রিয় বাংলাদেশে।
তোমার স্পর্শ পেয়ে পেয়ে আমাকে ঝরতে হবে জানি।
তোমার প্রতিটি নদী-নালা, পথ-ঘাট, পুকুর-প্রান্তর,
খাল-বিল, গুহা-গিরি আমাকে করতে হবে জানি।
শরৎ আসার পরে আমাকে মরতে হবে জানি।
(বর্ষার মতো প্রেমিক)
প্রতিটি বর্ষায় আমি কিছু না কিছু কবিতা লিখি। আমাদের পত্রিকাগুলো বর্ষার ওপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ওই সব পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের সম্পাদকদের মধ্যে কেউ কেউ আমার কাছে বর্ষার ওপর রচিত নতুন কবিতা চান। আমি পারতপক্ষে তাদের নিরাশ করি না। বিষয়ভিত্তিক কবিতা রচনায় আমার মন আজকাল আগের মতো সাড়া দেয় না। তবে বর্ষার কথা ভিন্ন। বর্ষার আগমনে আমার কবিচিত্ত মাটির তলায় লুকিয়ে থাকা ব্যাঙের মতোই মহানন্দে আত্মপ্রকাশ করে তার প্রিয় সঙ্গমসঙ্গিনীকে খুঁজে বেড়ায়। ফলে প্রতিটি বর্ষায়, তা কোনো পত্রিকা আমার কাছে বর্ষার ওপর কবিতা চান বা না চান, আমি লিখি।
না লিখে পারি না আমার কবিতার সতর্ক পাঠক যদি থেকে থাকেন, তো মানলেন যে, আমার কবিতায় যে ঋতুটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছে, বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে, তার নাম বর্ষা। আমার আরেক প্রিয় ঋতু হলো বসন্ত। বাংলার অন্য সকল কবির মতোই বসন্তেও আমি কম উন্মাদ হই না। তবে বর্ষার তুলনায় কম। এর কারণ, নিশ্চিত জানি আমার জন্মের মধ্যে নিহিত। বর্ষা আমার জন্মসূত্রে পাওয়া ঋতু। আষাঢ় মাসের সপ্তম দিনের এক বৃষ্টিঝরা সকালে আমার জন্য হয়েছিল। এ শুধুই আমার শোনা কথা নয়, আমার স্মৃতিকথাও। আমি কান পাতলেই আমার জন্মগ্রামের আকাশ কালো করে নামা সেই আষাঢ়ীবর্ষণের মার্গসংগীতধ্বনি এখনো স্পষ্ট শুনতে পাই।
বর্ষার ওপর রচিত আমার কবিতাসমূহের একটি পৃথক কাব্যসংকলন আমি প্রকাশ করেছি। বসন্তের ওপরও একটি কাব্যসংকলন আছে। তবে বর্ষার ওপর লেখা আমার কবিতার সংখ্যা যেমন বেশি, মান বিচারেও তারা অধিক গুণী। যে কবিতাটি ওপরে উদ্ধৃত করেছি, কোনো পত্রিকার সাহিত্য পাতার চাহিদা পূরণের জন্য নয়, বর্ষাসিক্ত কবিচিত্তের অন্তর্গত চাহিদা মেটাতেই সেটি সম্প্রতি রচিত হয়েছে। কবিতাটিতে বাংলাদেশকে কল্পনা করা হয়েছে গ্রীষ্মতপ্ত প্রেয়সীরূপে, কবি যেন বিরহী যক্ষ। মৌসুমি বায়ুরূপে বিশ্বভ্রমণ শেষে সে ফিরে এসেছে তার প্রেয়সীর দেহসীমায়। যক্ষপ্রিয়ার দেহের সকল তৃষিত অঞ্চলে সে ঢালবে তার সঙ্গে করে নিয়ে আসা মেঘজলধারা। আকাশ কাঁপিয়ে, শুকনো মাটি ভিজিয়ে নামবে বৃষ্টি। অবিচ্ছিন্ন লয়ে বাংলার তপ্তশুষ্ক মাটি আর মেঘভারেনত আকাশকে সে বেঁধে দেবে অন্তহীন অঝোর বর্ষণে।
এ হচ্ছে সেই বৃষ্টি, যা হয়েছিল নূহের প্লাবনের সময়; এ হচ্ছে সেই বৃষ্টি, মানবমনের ভেতরের সুপ্ত কাম ও বিরহবোধকে যে জাগ্রত করে, ববীন্দ্রনাথের মতো নমিতকামের কবিও তখন বিশ্বাস করেন—এমন দিনেই তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়, এ হচ্ছে সেই বৃষ্টি, পবিত্র বেদে যাকে কল্পনা করা হয়েছে মহান মৃত্যুর সঙ্গে। এ হচ্ছে সেই বৃষ্টি, কবি শহীদ কাদরী যাকে তুলনা করেছেন সন্ত্রাসের সঙ্গে।
আমার জীবনের প্রথম ষোল বছর প্রায় অবিচ্ছিন্নভাবে আমি আমার জন্মগ্রামে কাটিয়েছি। শহরে যারা জন্মগ্রহণ করেন তাদের জন্মকে সামান্যতম খাটো না করেও বলি, গ্রামে জন্মগ্রহণ করার জন্য আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। প্রকৃতির সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, তাকে যে আমি খুব কাছের করে চিনেছি, আপন বলে জেনেছি, সেটা সম্ভব হয়েছে অবিচ্ছিন্নভাবে আমি আমার শৈশব-কৈশোর গ্রামের বন-জঙ্গলে কাটাতে পেরেছি বলেই। বাংলার ষড়ঋতুর রূপবৈচিত্র্যকে আমি খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করার যে সুযোগ পেয়েছি, তাকে আমি যে আমার কবিতায় সেভাবে ধরতে পারিনি, তার জন্য দায়ী আমার প্রয়োজনীয় কারাশক্তির অভাব। সে কারণে আমার আত্মগ্লানি আছে বটে, কিন্তু তার নিবিড় সান্নিধ্যলাভের স্মৃতি আমার চির গৌরবের ধন। প্রকৃতিকে আমি কখনো পেয়েছি প্রেয়সীরূপে, কখনো দেখেছি জননীরূপে। আমি বুঝেছি, তার সঙ্গে আমার অস্তিত্ব এক অন্তহীন লীলায় জড়ানো। ফলে বলা যায় একেবারে খোলা আকাশের তলায় দাঁড়িয়ে বর্ষার আগমন, অবতরণ ও তার প্রত্যাগমনকে দেহেমনে মিলিয়ে খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। গুনেছি আকাশে আকাশে মেয়ের গুরুগুরু ডাক। বুঝেছি, গ্রীষ্ম-অবসানে আসছে আমার। জন্মসহোদর, আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু বর্ষা। আসছে আষাঢ়। আমার বেসুরো কণ্ঠেও লতিয়ে উঠেছে গান— 'আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে।' আহ, কী চমৎকার।
বর্ষা আমাকে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তার সঙ্গে করে। দু কূল প্লাবিত করা নদীর আনন্দে, মাঠে-ঘাটে, ঝালে-বিলে, পুকুরে প্রান্তরে আমি বর্ষাকে তার জলজগৎ বিস্তার করতে দেখেছি। সে আমার কানে কানে বলেছে, আমি কীভাবে আমার দেশপ্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গম করি দেখো। আমি দেখেছি। প্রাণ ভরে
দেখেছি বর্ষার রূপ।
আমি যখন এই বর্ষাবন্দনা লিখছি, তখন আষাঢ় গত হয়েছে। চলছে শ্রাবণ। শ্রাবণের পুরোটাই সামনে পড়ে আছে। বলা যায় এখন বর্ষার ভরা যৌবন। ঢাকায় বসে তার রূপ দেখছি টিভির পর্দা আর পত্রিকার পাতায়। তার প্রকৃত চেহারাটা দেখতে পাচ্ছিনে এখানে। এই নিয়ে কবিতাও লিখেছি। গ্রামে ছোট ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলাম, বর্ষা, কতটা জাঁকিয়ে বসেছে সেখানে। সে জানিয়েছে, যদি বর্ষা বিষয়ে নতুন করে কিছু লিখতেই চাও তো গ্রামে চলে এসো। বর্ষা দেখে যাও। আজ তিন দিন হলো দিন-রাত বৃষ্টি। নদী-নালা, মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর ডুবিয়ে সে মেলে ধরেছে তার চোখজুড়ানো রূপ। আমি চোখ বন্ধ করে, কল্পনায় তার রূপ দেখলাম। মনে পড়ল, কত অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লীজননী।
বাংলার কবির কাছে, কবির চোখে বর্ষার কি আলাদা কোনো রূপ আছে? এর উত্তর সহজ নয়। জীবনানন্দ বলেছেন—সকলেই পবি নয়, কেউ কেউ করি। তার এই স্মরণীয় উক্তিটি ছোট কবিদের ভিড় থেকে বড় কবিদের পৃথক করার প্রয়োজন মেটায়। কিন্তু প্রকৃতির রাজ্যে সব মানুষই যে কমবেশি করি, আমার এই উপলব্ধিকে বাতিল করে না। বাংলার লোককবিদের রচিত কাব্যে, গানে তারই পরিচয় দেখতে পাই। অন্য কবিদের জন্মকথা বলতে পারিনে, তবে আমার কবিজন্ম যে বর্ষামায়ের গর্ভে, সে কথা না বললে নিশ্চিত জানি, স্বর্ণে বসে চিত্রগুপ্ত অকৃতজ্ঞের তালিকায় আমার নামটিও লিপিবদ্ধ করবেন।