এক সপ্তাহে অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে দুই দফা হামলা, থানায় জিডি
Published: 20th, February 2025 GMT
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে আবার সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল চারটায় একবার হামলা চালানো হয়। তার আগে ১২ ফেব্রুয়ারি হামলা চালানো হয়। সংবাদ সম্মেলনের নাম করে এবার সমিতির কার্যালয়ে হামলা চালায় সমিতির স্বঘোষিত অ্যাডহক কমিটি, যা গঠনতন্ত্রবিরোধী ও বিধিবহির্ভূতভাবে গঠিত। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থনীতি সমিতি এসব কথা জানায়। এ হামলা নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছে অর্থনীতি সমিতি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের ভাষ্য নিয়ে এবং ঘটনার সময় ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হামলার নেতৃত্ব দেন স্বঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো.
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁদের নেতৃত্বে ভাড়াটে সশস্ত্র ক্যাডাররা অর্থনীতি সমিতির বর্তমান দপ্তর সম্পাদক মোস্তফা আনোয়ার বুলবুল, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলমসহ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুঠোফোন কেড়ে নেয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত থেকে হামলাকারীদের থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তার আগে ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সমিতির অফিসে সশস্ত্র দখল, সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গায়েবের ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই-আগস্ট বিপ্লব–পরবর্তী দেশের পটপরিবর্তনের পর আগের কার্যকরী কমিটি বর্তমান ২৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি অন্তর্বর্তী কমিটির কাছে অর্থনীতি সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। অন্তর্বর্তী কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এবং সদস্যসচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে সমিতির আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তিকরণ, গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধন, গবেষণা জার্নাল প্রকাশ ও দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় এ কমিটি। কিন্তু হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপচেষ্টা ও অর্থনীতি সমিতির একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে স্বঘোষিত ও বিধিবহির্ভূত অ্যাডহক কমিটি দুই দফায় ন্যক্কারজনক সশস্ত্র হামলা চালায়, যা সমিতির ইতিহাসে কখনো ঘটেনি।
অন্তর্বর্তী কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ বলেন, সমিতির যেকোনো সদস্য যেকোনো দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন, দাবি জানাতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের অপেশাদার মনোভাব নিয়ে দখল, হামলা ও জিম্মি করে কিছু আদায়ের হীন প্রচেষ্টা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বর্তমান সরকারকে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
সদস্যসচিব মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র কম ট র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।