ঢোলবাদন দিয়ে শুরু। তারপর নাচ, সঙ্গে পাঁচ কবির নানা মেজাজের গান। ছিল কবিদের জীবন–কর্ম নিয়ে তথ্যচিত্র। এমন নানা আয়োজনে গত শনিবার রাতে সরগরম হয়ে ওঠে মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন।
বাংলা সাহিত্যের পাঁচ কবির জীবন ও সৃজনের গল্পগাথা নিয়ে সংগীতসন্ধ্যা ‘পঞ্চদ্যুতি’র আয়োজন করেছিল মৌলভীবাজারের সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরশ্মি। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, পঞ্চকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন ও রজনীকান্ত সেনকে একত্রে শ্রোতা-দর্শকের সামনে তুলে ধরতেই তাঁদের এ আয়োজন।
শনিবার সন্ধ্যার পরই মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আসতে থাকে নানা বয়সের দর্শক। নির্দিষ্ট সময়ের কিছুটা পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আবৃত্তিশিল্পী প্রত্যুষ তালুকদারের সঞ্চালনায় শুরুতেই মঞ্চে আসেন রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ মৌলভীবাজারের সভাপতি দিলশাদ পারভীন ও নাট্যকার খালেদ চৌধুরী। তাঁরা আয়োজনের সাফল্য কামনা করেন। কেন এ আয়োজন, তা নিয়ে কথা বলেন রবিরশ্মির অন্যতম সংগঠক সংগীতশিল্পী মমিতা সিনহা।
এরপর মণিপুরি সম্প্রদায়ের চারজনের একটি দল ঢোলবাদন নিয়ে মঞ্চে আসে। ঢোলের নানা তালে, নৃত্যে বেশ কিছুটা সময় মঞ্চকে মাতিয়ে রাখে তারা। ঢোলে আঙুলের প্রতিটি ঠোকা অন্য এক আবহ তৈরি করে। এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, সংগীতশিল্পী ও সংগীতশিক্ষক ছায়া রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রদর্শন করা হয় তথ্যচিত্র। নতুনদের সামনে এই শিল্পীর কর্ম, সংগীতে নিবেদিত সময়কে তুলে ধরা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে ‘পঞ্চদ্যুতি’ অনুষ্ঠানে ছিল একক ও দলীয় পরিবেশনা। ছবি: প্রথম আলো.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে
মাদারীপুরে মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের প্রেমের টানে চীনের নাগরিক শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসেছেন। বিয়ে করে বর্তমানে মাদারীপুরে শশুরবাড়িতে আছেন। ভিনদেশি যুবককে দেখার জন্য ওই বাড়িতে মানুষ ভিড় করছেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর এলাকার বাসিন্দা সাইদুল হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৯)। সুমাইয়া মাদারীপুর শহরের সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তারা তিন বোন। সুমাইয়া বড়। মেঝ সাদিয়া আক্তার (১২) মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট বোন আরিফা (৬)।
চীনের সাংহাই শহরের সি জিং নিং এর ছেলে শি তিয়ান জিং (২৬)। তারা দুই ভাই। বড় শি তিয়ান জিং। তার চীনের সাংহাই শহরে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে।
আরো পড়ুন:
‘একজন ছেলে মানুষ আমাদের পরিবারের বৌ হয়েছিল’
এক বিয়ের বরযাত্রী খেয়ে ফেলল অন্য বিয়ের খাবার
শি তিয়ান জিংকে টিকটকে দেখেন সুমাইয়া। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা আদান-প্রদান হয়। উভয়ই গুগলের মাধ্যমে লেখা অনুবাদ করে মনের ভাব আদান- প্রদান করেন। এক পর্যায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মাত্র চার মাসের প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ২৪ জুলাই চীন থেকে বাংলাদেশ আসেন শি তিয়ান জিং। এরপর এক দিন ঢাকার একটি হোটেলে থাকেন। ২৬ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেচরের সুমাইয়ার বাড়িতে আসেন।
সুমাইয়া, সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম ও তার দুইজন আত্মীয় মিলে ঢাকা থেকে শি তিয়ান জিংকে মাদারীপুরে নিয়ে আসেন। বাংলা ভাষায় কথা বলতে না পারায় মোবাইলে অনুবাদ করে কথা আদান-প্রদান করেন শি তিয়ান জিং। এরপর ২৭ জুলাই তারা বিয়ে করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সুমাইয়ার বাড়িতে মানুষ ভিড় করতে থাকে।
সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘‘টিকটক দেখে আমি ওর ভক্ত হই। এরপর ইউচ্যাটের মাধ্যমে কথা হয়। পরে দুজনেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। মাত্র চার মাসের প্রেমের সূত্র ধরে চীন থেকে বাংলাদেশ আমার কাছে চলে আসবে, তা কখনো ভাবিনি। ও প্লেনে উঠার সময় বলেছে, আমি বাংলাদেশে আসছি। আমি বিশ্বাস করিনি। যখন ইন্ডিয়া এসে আমাকে জানায়, তখন বিশ্বাস করেছি।’’
সুমাইয়া আক্তার আরো বলেন, ‘‘ও ওর মা-বাবাকে আমার কথা বলেছে। তারাও মুসলিম। ওর মা বলেছেন, আমাকে বিয়ে করে চীনে নিয়ে যেতে। তাই শি তিয়ান জিং বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করেছেন।’’
সুমাইয়া বলেন, ‘‘এরই মধ্যে পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। শি তিয়ান জিং এক মাস বাংলাদেশে থাকবে। এর মধ্যে আমার কাগজপত্র রেডি করা হবে। তারপর ও আমাকে চীনে নিয়ে যাবে। আমিও চীনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
শি তিয়ান জিং বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আমার ভালো লেগেছে। তবে অনেক গরম। আর অনেক মানুষ আমাকে দেখতে আসে। তাই আমার ভয় লাগে। আমি ভালোবেসে চীন থেকে এখানে এসেছি। সুমাইয়াকে বিয়ে করেছি। এখন ওর কাগজপত্র রেডি করে চীনে নিয়ে যাবো। আমার পরিবার সব জানে। তারাই সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যেতে বলেছেন।’’
সুমাইয়ার বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘শি তিয়ান জিং আমাদের এখানে আছে। ও খুব ভালো ছেলে। খুবই অমায়িক। কোনো অহংকার নেই। এক মাস থাকবে এবং আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে। আমরা খুব খুশি।’’
পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রুবেল হাওলাদার জানান, প্রথমে আদালতের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। পরে সামাজিকভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। চীনে ওই ছেলের ব্যবসা আছে। কিছু দিনের মধ্যে সুমাইয়াকে চীনে নিয়ে যাবে।
ঢাকা/বকুল