সাগর উপকূলে নয়, তবু লবণ চাষ হয় যে উপজেলায়
Published: 27th, February 2025 GMT
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বিছানো রয়েছে পলিথিন। সেই পলিথিনে সূর্যতাপে লোনাপানি জমাট বেঁধে পরিণত হচ্ছে সাদা লবণে। কয়েকজন শ্রমিক সেই লবণ তুলে মাঠে স্তূপ করে রাখছেন। লবণ উৎপাদনে শ্রমিকদের এই ব্যস্ততা দেখা যায় চট্টগ্রামের পটিয়ায় উপজেলার ইন্দ্রপুল এলাকায়।
সাধারণত সাগর উপকূলীয় অঞ্চলে এভাবে লবণের চাষ হয়। তবে সাগর উপকূলীয় এলাকা না হয়েও পটিয়ার প্রায় ১০০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে লবণের। পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় রয়েছে ৪৯টি লবণ পরিশোধন কারখানা, যার মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ৩৭টি। এসব কারখানার পরিত্যক্ত লোনাপানি ব্যবহার করেই মূলত ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণের চাষ হচ্ছে।
কারখানার মালিকদের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু বাসিন্দা দুই দশক ধরে ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণের চাষ করে আসছেন। কারখানার পরিত্যক্ত লোনাপানির কারণে এসব জমিতে কোনো ধরনের চাষাবাদ করা যেত না। বর্তমানে পতিত এসব জমিতে লবণ চাষ করে মৌসুমে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে ইন্দ্রপুল এলাকার চানখালী খালের তীরবর্তী লবণ শিল্পাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু জমিতে পলিথিন বিছিয়ে লবণ উৎপাদন চলছে। একটি লবণ মাঠে কথা হয় রিফাত হোসেন নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে। বাঁশখালী উপজেলার এই বাসিন্দা বলেন, তিনিসহ ৮ জন শ্রমিক ৩০ একর জমির লবণ মাঠে কাজ করছেন। তিন বছর ধরে পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় কাজ করছেন তিনি। প্রতি মাসে লবণশ্রমিক হিসেবে ২৫ হাজার টাকা করে পান।
পটিয়ার ইন্দ্রপুলের ইসলামাবাদ সল্টের মালিক ও লবণ মিল মালিক সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক অহিদুছ ছমদ বলেন, ২০ বছর ধরে কারখানার পরিত্যক্ত পানি দিয়ে এলাকাটিতে লবণ চাষ হচ্ছে। তিনিও লবণ চাষের জন্য দুই এর পরিত্যক্ত জমি বর্গা দিয়েছেন। প্রতি কানি (৪০ শতক) জমির বর্গা বাবদ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।
পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও মোহাম্মদীয় সল্টের মালিক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, তাঁর কারখানার পরিত্যক্ত লবণপানি যাতে নষ্ট না হয় সে লক্ষ্যে তিনি ২০ কানি জমিতে লবণ চাষ করে আসছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে শ্রমিক দিয়ে লবণ চাষ করছেন তিনি।
লবণ কারখানার মালিকেরা জানান, প্রতি মৌসুমে ইন্দ্রপুল এলাকার মাঠ থেকে ১৫–২০ হাজার মেট্রিক টন লবণ পাওয়া যায়। এসব লবণ বিক্রি করে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয় চাষিদের। কখনো কখনো আয় ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সাধারণত এসব লবণ বিভিন্ন শিল্পকারখানা, মৎস্য, পোলট্রি ও ডেইরি খামারে ব্যবহার হয়। তবে মানভেদে কিছু লবণে আয়োডিন যুক্ত করে খাবারের জন্য প্যাকেটজাত করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৫২ সালের দিকে ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণশিল্পের সূচনা হয়। চানখালী খালকে কেন্দ্র করে ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণ পরিশোধন কারখানা গড়ে ওঠে। কারখানাগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদিত কাঁচা লবণ পরিশোধন করে আয়োডিন যুক্ত করা হয়। পরে তা বাজারজাত হয় খাবারের লবণ হিসেবে।
মাঠ থেকে লবণ কারখানায় নেওয়ার প্রস্তুতি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লবণ চ ষ চ ষ কর লবণ ম লবণ র লবণ প
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক