নরসিংদীতে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি
Published: 27th, February 2025 GMT
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এক পক্ষে আছেন খোকা মিয়া ও ওবায়দুল নামে দুজন। অপর পক্ষে আছেন টিটু মিয়া, মোস্তফা মিয়া ও বাদল মোল্লা নামের তিনজন। আজ বেলা ১১টার দিকে খোকা মিয়ার লোকজন বড়ইতলা এলাকায় থার্মেক্স গ্রুপের একটি কারখানা থেকে ঝুট সংগ্রহ শেষে বের হচ্ছিলেন। খবর পেয়ে টিটু, মোস্তফা ও বাদল দলবল নিয়ে সেখানে গিয়ে তাঁদের বাধা দেন। দুই পক্ষ কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শিবপুর-থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে খোকা মিয়া ও টিটু মিয়ার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তাঁদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, দুই পক্ষের পাঁচজন একসময় একসঙ্গে থার্মেক্স গ্রুপের সঙ্গে ঝুট ব্যবসা করতেন। স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কারণে এখন তাঁরা আলাদা হয়ে ব্যবসা করছেন। আগে তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। সম্প্রতি টিটু মিয়া একটি মামলায় কারাগার থেকে বের হয়ে মোস্তফা ও বাদলের সঙ্গে মিলে ঝুটের ব্যবসা শুরু করেন। এদিকে কয়েক মাস ধরে একচেটিয়াভাবে ঝুট ব্যবসা করে আসছিলেন খোকা মিয়া। মূলত ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য থার্মেক্স গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসাইন বলেন, ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। তবে কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। কোনো পক্ষ থেকেই লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। তবে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ককটেল ফেটে কব্জি উড়ে গেল ডাকাতের, যন্ত্রণায় মৃত্যু
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাল্কহেডে ডাকাতি করতে গিয়ে হাতে ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অপর দুই ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। এছাড়া ডাকাত দলের হামলায় দুই গ্রামবাসীও আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে গজারিয়া উপজেলা হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ডাকাতদের নারায়ণগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করে।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহত ডাকাত সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ডাকাত দলের হামলা আহতরা হলেন, ভাটি বলাকী গ্রামের ইসহাক বেপারীর ছেলে আলম (৩৭) ও একই গ্রামের রাসেলের ছেলে সোহাগ (১৬)।
আরো পড়ুন:
ছেলের খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে লাশ হলেন বাবা
সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে রাখা ছিল কয়েকটি বাল্কহেড। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ৩টার দিকে একটি স্পিডবোট নিয়ে সেখানে ডাকাতির চেষ্টা করে সঙ্ঘবদ্ধ একটি নৌ ডাকাত দল। তবে নদীতে জেলেরা থাকায় সুবিধা করতে না পেরে তারা ফিরে যায়।
পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি স্পিডবোট ও একটি ট্রলার নিয়ে তারা আবার ফিরে আসে। খবর পেয়ে ভাটি বলাকী গ্রামের লোকজন তাদের বাধা প্রদান করে। আতঙ্ক তৈরি করতে ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্য করে ২-৩টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাতদল। এ সময় ট্রলার থেকে গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়তে গিয়ে অসাবধানতাবশত তা ডাকাত দলের এক সদস্যের হাতে বিস্ফোরিত হয়। এতে ওই ডাকাত সদস্যের এক হাতের কব্জি উড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্পিডবোটে থাকা ৫-৬ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে, ট্রলারে থাকা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে ধাওয়া দিয়ে নদীর চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় থেকে আটক করে জনতা। পরে উত্তেজিত জনতা তাদের গণধোলাই দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় একজন।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “এ রকম একটি খবর আমি পেয়েছি। ঘটনা নদীতে আর ঘটনাস্থল নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সীমানায় পড়ায় বিষয়টি তারা দেখছে।”
বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সালেহ আহম্মেদ পাঠান বলেন, “আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী তারা শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আনন্দবাজার এলাকা থেকে একটি জেলেদের ট্রলার ছিনতাই করে। ছিনতাই করা ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে কয়েকজন ডাকাত মেঘনা নদীর গজারিয়া উপজেলার ভাটি বলাকী এলাকায় ডাকাতি করতে যায়।”
তিনি বলেন, “স্থানীয়রা তাদের বাধা দিলে ডাকাতরা জনগণকে উদ্দেশ্য করে কয়েক কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বলে শুনেছি। ককটেল নিজের হাতে বিস্ফোরিত হয়ে এক ডাকাত সদস্যের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাকেসহ তিন ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে জনতা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “তাদের তিনজনের অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য তাদের নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর একজন মারা গেছে। নিহতের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে আমরা দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছি।”
বিষয়টি সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালের (ভিক্টোরিয়া) আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. জহিরুল ইসলাম, “এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে দুইজন রোগী আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন যার হাতে ককটেলে বিস্ফোরিত হয়েছিল, সে মারা গেছে। আরেকজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি।”
বিষয়টি সম্পর্কে নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছে। আহত দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত আমরা কারোই নাম পরিচয় পাইনি। তাদের নাম পরিচয় জানতে চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/রতন/মেহেদী