১৯৬২ সালের ৩০ অক্টোবর, সিলভিয়া প্লাথ ব্রিটিশ কাউন্সিলের পিটার ওরের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন। অর্থাৎ এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল কবির মৃত্যুর মাত্র তিন মাস আগে। এটি ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত দ্য পোয়েট স্পিকস: ইন্টারভিউস উইথ কনটেম্পোরারি পোয়েটস গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়; যা হিলারি মরিশ, পিটার ওর, জন প্রেস ও ইয়ান স্কট-কিলভার্ট কর্তৃক গৃহীত সমসাময়িক কবিদের সাক্ষাৎকারের সংকলন। 

ওর: সিলভিয়া, কীভাবে কবিতা লেখা শুরু করলেন?
প্লাথ: আমি ঠিক জানি না কীভাবে শুরু করলাম। ছোটবেলা থেকেই লিখতাম। সম্ভবত শিশুতোষ ছড়াগুলো ভালোবাসতাম। মনে হয়েছিল আমিও এমন লিখতে পারি। আমার প্রথম কবিতা, প্রথম প্রকাশিত কবিতা, লিখেছিলাম যখন আমার বয়স ছিল সাড়ে আট। সেটা দ্য বোস্টন ট্রাভেলার-এ প্রকাশিত হয়েছিল, আর তখন থেকেই বলা যায় আমি পেশাদার হয়ে গেছি।
ওর: অনেক বছর পেরিয়ে এসে এখন যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এমন কোনো থিম আছে কি– যা একজন কবি হিসেবে আপনাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে? এমন কিছু, যা নিয়ে আপনি লিখতে চান?
প্লাথ: হয়তো এটি কিছুটা মার্কিনিসুলভ ব্যাপার– অনুভব করি নতুন একটি প্রাপ্তি নিয়ে আমি দারুণ উচ্ছ্বসিত হয়ে আছি। যা সম্ভবত এসেছে রবার্ট লোয়েলের লাইফ স্টাডিজের সাথে সাথে। এটি একরকম প্রবল অগ্রযাত্রা; যা একই সাথে খুব গুরুতর, দারুণ ব্যক্তিগত এবং আবেগপ্রবণ অভিজ্ঞতার দিকে নিয়ে যায়, যা বোধ করি কিছুটা ট্যাবু হিসেবে গণ্য করা হতো। উদাহরণস্বরূপ, রবার্ট লোয়েলের মানসিক হাসপাতালের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা কবিতাগুলো আমাকে তীব্রভাবে আগ্রহী করে তুলেছিল। আমার মতে এই অদ্ভুত, ব্যক্তিগত এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো নিয়ে সাম্প্রতিক আমেরিকান কবিতায় বিশেষভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে। বিশেষ করে কবি অ্যান সেক্সটনের কথা বলব, যিনি একজন মা হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন। এমন একজন মা; যিনি স্নায়বিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন। 


তিনি একজন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং অনুভূতিশীল তরুণী। তাঁর কবিতাগুলো খুবই কারিগরি নৈপুণ্যের সঙ্গে লেখা। তাঁর কবিতাগুলোর মধ্যে একধরনের আবেগিক ও মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা রয়েছে, যা আমি মনে করি কিছুটা নতুন এবং খুবই উদ্দীপনাদায়ক।
lআপনি একজন কবি হিসেবে এবং একজন ব্যক্তি হিসেবে আটলান্টিকের দুই পাশে আছেন। যদি আমি এভাবে বলতে চাই, একজন আমেরিকান হিসেবে…
llএটা বেশ একটি অস্বস্তিকর অবস্থান, কিন্তু আমি মেনে নিচ্ছি!
lযদি আমি এই রূপকটি আরেকটু এগিয়ে নিই, তাহলে পাল্লার কোন দিকটিতে আপনার ঝোঁক বেশি হবে?
llআচ্ছা, আমি মনে করি, ভাষার দিক থেকে আমি একজন আমেরিকান। সত্যি বলতে আমার উচ্চারণ আমেরিকান, কথা বলার ভঙ্গি আমেরিকান ধাঁচের, একেবারে সেকেলে আমেরিকান যাকে বলে। এটাই সম্ভবত অনেক কারণের একটি, যার জন্য আমি এখন ইংল্যান্ডে আছি এবং যে কারণে আমি সব সময় ইংল্যান্ডেই থাকব। রুচির দিক থেকে আমি হয়তো পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে আছি এবং স্বীকার করতেই হবে যে, যেসব কবি আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করেন, তারা আমেরিকান। এমন খুব কম সংখ্যক ইংরেজ কবি আছেন; যাদের আমি ভক্ত।
lএর মানে কি আপনি মনে করেন যে সমসাময়িক ইংরেজি কবিতা আমেরিকান কবিতার তুলনায় সময়ের থেকে পিছিয়ে আছে?
llনা, যদি আমাকে বলতে বলার সুযোগ দেন, আমি মনে করি কবিতা এখানে কিছুটা আঁটোসাঁটো বন্ধনে আবদ্ধ। ব্রিটিশ সমালোচক আলভারেজের একটি প্রবন্ধ ছিল। সেখানে তিনি ইংল্যান্ডে সুশীলতার বিপদ সম্পর্কে যা বলেছেন, তা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং যথার্থ। আমি মনে করি, আমি খুব একটা সুশীল নই এবং অনুভব করি যে এই ভদ্রতার আতিশয্য যেন একরকম শ্বাসরোধ করছে: ইংল্যান্ডের সর্বত্র যে পরিচ্ছন্নতা ও নিখুঁত পরিপাটি ভাব দেখা যায়, তা হয়তো ওপরে ওপরে যতটা নিরীহ মনে হয়, আসলে তার চেয়েও বেশি মারাত্মক হয়ে ওঠে।
lসিলভিয়া, আপনি বলেছেন যে আপনি নিজেকে একজন আমেরিকান মনে করেন, কিন্তু যখন আমরা ‘ড্যাডি’ কবিতাটি শুনি, যেখানে ডাখাউ, অশভিৎস এবং মাইন কাম্পফ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তখন আমার মনে হয় এটি এমন একটি কবিতা; যা প্রকৃত একজন আমেরিকান লিখতে পারার কথা নয়। কারণ, আটলান্টিকের ওপারে এই নামগুলো এতটা গভীর তাৎপর্য বহন করে না, তাই না?
llঠিক আছে, আপনি এখন আমার সাথে কথা বলছেন সাধারণ একজন আমেরিকান হিসেবে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আমার পারিবারিক পটভূমির কথা যদি বলি, তবে তা হলো জার্মান ও অস্ট্রিয়ান। একদিক থেকে আমি প্রথম প্রজন্মের আমেরিকান, আরেক দিক থেকে দ্বিতীয় প্রজন্মের। ফলে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প এবং এসব বিষয় নিয়ে আমার অনুভূতি বিশেষভাবে তীব্র। আরেকটি কথা হলো, আমি কিছুটা রাজনীতিসচেতন মানুষও বটে। তাই আমার মনে হয়, কবিতাটি এসেছে আমার নিজের এই অংশ থেকে।
lএকজন কবি হিসেবে আপনার কি ইতিহাস বিষয়ে গভীর ও তীব্র চেতনা রয়েছে?
llআমি ইতিহাসবিদ নই, কিন্তু খেয়াল করছি যে আমি ক্রমশ ইতিহাসের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ইতিহাস পড়ছি। যেমন– বর্তমানে নেপোলিয়নের প্রতি আমি খুবই আগ্রহী– যুদ্ধ, লড়াই, গ্যালিপোলি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে খুবই আগ্রহী। আমি মনে করি, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি আরও বেশি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করছি। অবশ্যই, বিশের কোঠার শুরুর দিকের বয়সে আমি মোটেই এ রকম ছিলাম না।
lআপনি যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বা আপনার জন্য যারা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন– এমন লেখকদের সম্পর্কে কিছু বলবেন?
llতেমন আসলে খুব কম সংখ্যকই ছিল। সত্যি বলতে তাদের খুঁজে নাম বলতে বেগ পেতে হবে। যখন আমি কলেজে ছিলাম, তখন আধুনিক লেখকেরা আমাকে বিস্মিত ও অভিভূত করেছেন– ডিলান টমাস, ইয়েটস, এমনকি অডেনও। একসময় তো আমি অডেনের জন্য পাগল ছিলাম এবং যা কিছু লিখতাম সবই অনিবার্যভাবে অডেনীয় (অডেনেস্ক) হয়ে উঠত। এখন আবার আমি যখন পেছনে ফিরে যাচ্ছি, ব্লেকের দিকে নজর চলে যাচ্ছে। আর অবশ্যই, শেক্সপিয়রের মতো কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কথা বলাটা ধৃষ্টতাই হবে। শেক্সপিয়রকে পড়া হয়, ব্যস, এই তো।
lসিলভিয়া, আপনার কবিতা পড়তে এবং শুনতে গিয়ে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে এবং দ্রুত বোঝা যায়– দুটি বৈশিষ্ট্য খুব স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। একটি হলো সেগুলোর স্বচ্ছতা বা প্রাঞ্জলতা এবং আরেকটি হলো পাঠের সময় একটি শক্তিশালী ঘোর তৈরি হওয়া (এবং আমি মনে করি এই দুটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে)। এখন, আপনি কি সচেতনভাবে আপনার কবিতাগুলো স্পষ্ট এবং উচ্চ স্বরে পাঠ করলে ঘোরের মাঝে নিয়ে যাবে এভাবে লেখেন?
llআমার শুরুর দিককার কবিতাগুলো এমনভাবে আমি লিখিনি। উদাহরণস্বরূপ, আমার প্রথম বই ‘দ্য কলোসাস’-এর কবিতাগুলো এখন উচ্চকণ্ঠে আমি আবৃত্তি করতে পারি না। সেগুলো আমি এমনভাবে লিখিনি, যাতে আবৃত্তি করা যায়। এই কবিতাগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। কিন্তু এইমাত্র আমি যে কবিতাগুলো পড়লাম, যেগুলো একদম সাম্প্রতিক, সেগুলো আমি নিজেই নিজেকে শোনাই। আমি মনে করি, আমার নিজের লেখার বিকাশের ক্ষেত্রে এটি আমার জন্য একদম নতুন একটি বিষয়। এবং যদি এগুলোর মধ্যে কোনো স্বচ্ছতা থাকে, তবে তা এই কারণে যে আমি এগুলো নিজে নিজেকে শোনাই, উঁচু গলায়ই শোনাই।
lএকমুহূর্তের জন্য কবিতাকে পাশে সরিয়ে রাখি। এমন অন্য কিছু আছে কি– যা আপনি লিখতে চান বা যা আপনি লিখেছেন?
llদেখুন, আমি সব সময় গদ্যের প্রতি আগ্রহী ছিলাম। কিশোর বয়সে আমি ছোটগল্প লিখে প্রকাশ করতাম। আমি সব সময় দীর্ঘ ছোটগল্প লিখতে চেয়েছি, উপন্যাস লিখতে চেয়েছি। এখন আমি বলা যায় একটি সম্মানজনক বয়সে পৌঁছেছি এবং কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তাই গদ্য এবং বিশেষ করে উপন্যাসের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ অনুভব করি। আমি মনে করি, উপন্যাসে আপনি টুথব্রাশ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় ছোটখাটো জিনিস ঢুকিয়ে দিতে পারেন, যা কবিতায় করা বেশ কঠিন। আমি অনুভব করি কবিতা বড় কঠোর এক শাস্ত্র। আপনাকে খুব অল্প পরিসরে খুব দ্রুত অনেক দূর যেতে হয়, ফলে সব গৌণ বিষয় বাদ দিতে হয়। কবিতা থেকে দূরে থাকাটা আমাকে পোড়ায়! আবার আমি একজন নারী, আমি আমার ছোটখাটো জিনিসগুলো ভালোবাসি, আমি তুচ্ছ বিষয়গুলো পছন্দ করি, এবং উপন্যাসে আমি জীবনের অনেক বেশি কিছু তুলে ধরতে পারি– হয়তো এতটা তীব্রভাবে নয়, কিন্তু নিঃসন্দেহে অনেক বিস্তৃতভাবে। আর এই কারণেই উপন্যাস লেখার প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে গেছে।
lআপনি কি অন্যান্য লেখক বা কবিদের সংস্পর্শে নিজেকে খুব একটা খুঁজে পান?
llআমি বরং ডাক্তার, ধাত্রী, আইনজীবী– লেখক ছাড়া অন্য যে কোনো পেশার মানুষের সঙ্গ বেশি পছন্দ করি। আমি মনে করি, লেখক ও শিল্পীরা সবচেয়ে আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। যদিও এটা বলা উচিত নয়। কারণ, আমি অনেক লেখক ও শিল্পীকে পছন্দ করি, এমনকি আমার অনেক বন্ধু তাদের মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি সেই মানুষকে; যিনি বাস্তব অভিজ্ঞতার কোনো ক্ষেত্রে নিজেকে পারদর্শী করে তুলেছেন এবং আমাকে কিছু না কিছু শেখাতে পারেন। যেমন– আমার এলাকার স্থানীয় একজন ধাত্রী আমাকে মৌমাছি পালন করতে শিখিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমার লেখার কিছুই বুঝতে পারেন না। অথচ সত্যি বলতে, আমি তাকে অধিকাংশ কবির চেয়ে বেশি পছন্দ করি। আমার বন্ধুদের মাঝেও এমন অনেককে পাই, যারা নৌকা চালানো, নির্দিষ্ট কিছু খেলাধুলা বা কারও শরীর কেটে কোনো অঙ্গ অপসারণ করার মতো বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জানেন। ব্যবহারিক বিষয়ে এই দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করে। কবি হিসেবে, আমরা যেন একটু বাতাসে ভেসে থাকি। তাই আমি সব সময় এমন কাউকে পছন্দ করি, যে আমাকে বাস্তবের কিছু শেখাতে পারে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপন য স অন ক ব র জন য আপন র প রথম ন একট

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে