১৯৬২ সালের ৩০ অক্টোবর, সিলভিয়া প্লাথ ব্রিটিশ কাউন্সিলের পিটার ওরের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন। অর্থাৎ এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল কবির মৃত্যুর মাত্র তিন মাস আগে। এটি ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত দ্য পোয়েট স্পিকস: ইন্টারভিউস উইথ কনটেম্পোরারি পোয়েটস গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়; যা হিলারি মরিশ, পিটার ওর, জন প্রেস ও ইয়ান স্কট-কিলভার্ট কর্তৃক গৃহীত সমসাময়িক কবিদের সাক্ষাৎকারের সংকলন। 

ওর: সিলভিয়া, কীভাবে কবিতা লেখা শুরু করলেন?
প্লাথ: আমি ঠিক জানি না কীভাবে শুরু করলাম। ছোটবেলা থেকেই লিখতাম। সম্ভবত শিশুতোষ ছড়াগুলো ভালোবাসতাম। মনে হয়েছিল আমিও এমন লিখতে পারি। আমার প্রথম কবিতা, প্রথম প্রকাশিত কবিতা, লিখেছিলাম যখন আমার বয়স ছিল সাড়ে আট। সেটা দ্য বোস্টন ট্রাভেলার-এ প্রকাশিত হয়েছিল, আর তখন থেকেই বলা যায় আমি পেশাদার হয়ে গেছি।
ওর: অনেক বছর পেরিয়ে এসে এখন যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এমন কোনো থিম আছে কি– যা একজন কবি হিসেবে আপনাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে? এমন কিছু, যা নিয়ে আপনি লিখতে চান?
প্লাথ: হয়তো এটি কিছুটা মার্কিনিসুলভ ব্যাপার– অনুভব করি নতুন একটি প্রাপ্তি নিয়ে আমি দারুণ উচ্ছ্বসিত হয়ে আছি। যা সম্ভবত এসেছে রবার্ট লোয়েলের লাইফ স্টাডিজের সাথে সাথে। এটি একরকম প্রবল অগ্রযাত্রা; যা একই সাথে খুব গুরুতর, দারুণ ব্যক্তিগত এবং আবেগপ্রবণ অভিজ্ঞতার দিকে নিয়ে যায়, যা বোধ করি কিছুটা ট্যাবু হিসেবে গণ্য করা হতো। উদাহরণস্বরূপ, রবার্ট লোয়েলের মানসিক হাসপাতালের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা কবিতাগুলো আমাকে তীব্রভাবে আগ্রহী করে তুলেছিল। আমার মতে এই অদ্ভুত, ব্যক্তিগত এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো নিয়ে সাম্প্রতিক আমেরিকান কবিতায় বিশেষভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে। বিশেষ করে কবি অ্যান সেক্সটনের কথা বলব, যিনি একজন মা হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন। এমন একজন মা; যিনি স্নায়বিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন। 


তিনি একজন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং অনুভূতিশীল তরুণী। তাঁর কবিতাগুলো খুবই কারিগরি নৈপুণ্যের সঙ্গে লেখা। তাঁর কবিতাগুলোর মধ্যে একধরনের আবেগিক ও মনস্তাত্ত্বিক গভীরতা রয়েছে, যা আমি মনে করি কিছুটা নতুন এবং খুবই উদ্দীপনাদায়ক।
lআপনি একজন কবি হিসেবে এবং একজন ব্যক্তি হিসেবে আটলান্টিকের দুই পাশে আছেন। যদি আমি এভাবে বলতে চাই, একজন আমেরিকান হিসেবে…
llএটা বেশ একটি অস্বস্তিকর অবস্থান, কিন্তু আমি মেনে নিচ্ছি!
lযদি আমি এই রূপকটি আরেকটু এগিয়ে নিই, তাহলে পাল্লার কোন দিকটিতে আপনার ঝোঁক বেশি হবে?
llআচ্ছা, আমি মনে করি, ভাষার দিক থেকে আমি একজন আমেরিকান। সত্যি বলতে আমার উচ্চারণ আমেরিকান, কথা বলার ভঙ্গি আমেরিকান ধাঁচের, একেবারে সেকেলে আমেরিকান যাকে বলে। এটাই সম্ভবত অনেক কারণের একটি, যার জন্য আমি এখন ইংল্যান্ডে আছি এবং যে কারণে আমি সব সময় ইংল্যান্ডেই থাকব। রুচির দিক থেকে আমি হয়তো পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে আছি এবং স্বীকার করতেই হবে যে, যেসব কবি আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করেন, তারা আমেরিকান। এমন খুব কম সংখ্যক ইংরেজ কবি আছেন; যাদের আমি ভক্ত।
lএর মানে কি আপনি মনে করেন যে সমসাময়িক ইংরেজি কবিতা আমেরিকান কবিতার তুলনায় সময়ের থেকে পিছিয়ে আছে?
llনা, যদি আমাকে বলতে বলার সুযোগ দেন, আমি মনে করি কবিতা এখানে কিছুটা আঁটোসাঁটো বন্ধনে আবদ্ধ। ব্রিটিশ সমালোচক আলভারেজের একটি প্রবন্ধ ছিল। সেখানে তিনি ইংল্যান্ডে সুশীলতার বিপদ সম্পর্কে যা বলেছেন, তা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং যথার্থ। আমি মনে করি, আমি খুব একটা সুশীল নই এবং অনুভব করি যে এই ভদ্রতার আতিশয্য যেন একরকম শ্বাসরোধ করছে: ইংল্যান্ডের সর্বত্র যে পরিচ্ছন্নতা ও নিখুঁত পরিপাটি ভাব দেখা যায়, তা হয়তো ওপরে ওপরে যতটা নিরীহ মনে হয়, আসলে তার চেয়েও বেশি মারাত্মক হয়ে ওঠে।
lসিলভিয়া, আপনি বলেছেন যে আপনি নিজেকে একজন আমেরিকান মনে করেন, কিন্তু যখন আমরা ‘ড্যাডি’ কবিতাটি শুনি, যেখানে ডাখাউ, অশভিৎস এবং মাইন কাম্পফ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তখন আমার মনে হয় এটি এমন একটি কবিতা; যা প্রকৃত একজন আমেরিকান লিখতে পারার কথা নয়। কারণ, আটলান্টিকের ওপারে এই নামগুলো এতটা গভীর তাৎপর্য বহন করে না, তাই না?
llঠিক আছে, আপনি এখন আমার সাথে কথা বলছেন সাধারণ একজন আমেরিকান হিসেবে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আমার পারিবারিক পটভূমির কথা যদি বলি, তবে তা হলো জার্মান ও অস্ট্রিয়ান। একদিক থেকে আমি প্রথম প্রজন্মের আমেরিকান, আরেক দিক থেকে দ্বিতীয় প্রজন্মের। ফলে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প এবং এসব বিষয় নিয়ে আমার অনুভূতি বিশেষভাবে তীব্র। আরেকটি কথা হলো, আমি কিছুটা রাজনীতিসচেতন মানুষও বটে। তাই আমার মনে হয়, কবিতাটি এসেছে আমার নিজের এই অংশ থেকে।
lএকজন কবি হিসেবে আপনার কি ইতিহাস বিষয়ে গভীর ও তীব্র চেতনা রয়েছে?
llআমি ইতিহাসবিদ নই, কিন্তু খেয়াল করছি যে আমি ক্রমশ ইতিহাসের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ইতিহাস পড়ছি। যেমন– বর্তমানে নেপোলিয়নের প্রতি আমি খুবই আগ্রহী– যুদ্ধ, লড়াই, গ্যালিপোলি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে খুবই আগ্রহী। আমি মনে করি, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি আরও বেশি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করছি। অবশ্যই, বিশের কোঠার শুরুর দিকের বয়সে আমি মোটেই এ রকম ছিলাম না।
lআপনি যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বা আপনার জন্য যারা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন– এমন লেখকদের সম্পর্কে কিছু বলবেন?
llতেমন আসলে খুব কম সংখ্যকই ছিল। সত্যি বলতে তাদের খুঁজে নাম বলতে বেগ পেতে হবে। যখন আমি কলেজে ছিলাম, তখন আধুনিক লেখকেরা আমাকে বিস্মিত ও অভিভূত করেছেন– ডিলান টমাস, ইয়েটস, এমনকি অডেনও। একসময় তো আমি অডেনের জন্য পাগল ছিলাম এবং যা কিছু লিখতাম সবই অনিবার্যভাবে অডেনীয় (অডেনেস্ক) হয়ে উঠত। এখন আবার আমি যখন পেছনে ফিরে যাচ্ছি, ব্লেকের দিকে নজর চলে যাচ্ছে। আর অবশ্যই, শেক্সপিয়রের মতো কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কথা বলাটা ধৃষ্টতাই হবে। শেক্সপিয়রকে পড়া হয়, ব্যস, এই তো।
lসিলভিয়া, আপনার কবিতা পড়তে এবং শুনতে গিয়ে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে এবং দ্রুত বোঝা যায়– দুটি বৈশিষ্ট্য খুব স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। একটি হলো সেগুলোর স্বচ্ছতা বা প্রাঞ্জলতা এবং আরেকটি হলো পাঠের সময় একটি শক্তিশালী ঘোর তৈরি হওয়া (এবং আমি মনে করি এই দুটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে)। এখন, আপনি কি সচেতনভাবে আপনার কবিতাগুলো স্পষ্ট এবং উচ্চ স্বরে পাঠ করলে ঘোরের মাঝে নিয়ে যাবে এভাবে লেখেন?
llআমার শুরুর দিককার কবিতাগুলো এমনভাবে আমি লিখিনি। উদাহরণস্বরূপ, আমার প্রথম বই ‘দ্য কলোসাস’-এর কবিতাগুলো এখন উচ্চকণ্ঠে আমি আবৃত্তি করতে পারি না। সেগুলো আমি এমনভাবে লিখিনি, যাতে আবৃত্তি করা যায়। এই কবিতাগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। কিন্তু এইমাত্র আমি যে কবিতাগুলো পড়লাম, যেগুলো একদম সাম্প্রতিক, সেগুলো আমি নিজেই নিজেকে শোনাই। আমি মনে করি, আমার নিজের লেখার বিকাশের ক্ষেত্রে এটি আমার জন্য একদম নতুন একটি বিষয়। এবং যদি এগুলোর মধ্যে কোনো স্বচ্ছতা থাকে, তবে তা এই কারণে যে আমি এগুলো নিজে নিজেকে শোনাই, উঁচু গলায়ই শোনাই।
lএকমুহূর্তের জন্য কবিতাকে পাশে সরিয়ে রাখি। এমন অন্য কিছু আছে কি– যা আপনি লিখতে চান বা যা আপনি লিখেছেন?
llদেখুন, আমি সব সময় গদ্যের প্রতি আগ্রহী ছিলাম। কিশোর বয়সে আমি ছোটগল্প লিখে প্রকাশ করতাম। আমি সব সময় দীর্ঘ ছোটগল্প লিখতে চেয়েছি, উপন্যাস লিখতে চেয়েছি। এখন আমি বলা যায় একটি সম্মানজনক বয়সে পৌঁছেছি এবং কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তাই গদ্য এবং বিশেষ করে উপন্যাসের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ অনুভব করি। আমি মনে করি, উপন্যাসে আপনি টুথব্রাশ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় ছোটখাটো জিনিস ঢুকিয়ে দিতে পারেন, যা কবিতায় করা বেশ কঠিন। আমি অনুভব করি কবিতা বড় কঠোর এক শাস্ত্র। আপনাকে খুব অল্প পরিসরে খুব দ্রুত অনেক দূর যেতে হয়, ফলে সব গৌণ বিষয় বাদ দিতে হয়। কবিতা থেকে দূরে থাকাটা আমাকে পোড়ায়! আবার আমি একজন নারী, আমি আমার ছোটখাটো জিনিসগুলো ভালোবাসি, আমি তুচ্ছ বিষয়গুলো পছন্দ করি, এবং উপন্যাসে আমি জীবনের অনেক বেশি কিছু তুলে ধরতে পারি– হয়তো এতটা তীব্রভাবে নয়, কিন্তু নিঃসন্দেহে অনেক বিস্তৃতভাবে। আর এই কারণেই উপন্যাস লেখার প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে গেছে।
lআপনি কি অন্যান্য লেখক বা কবিদের সংস্পর্শে নিজেকে খুব একটা খুঁজে পান?
llআমি বরং ডাক্তার, ধাত্রী, আইনজীবী– লেখক ছাড়া অন্য যে কোনো পেশার মানুষের সঙ্গ বেশি পছন্দ করি। আমি মনে করি, লেখক ও শিল্পীরা সবচেয়ে আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। যদিও এটা বলা উচিত নয়। কারণ, আমি অনেক লেখক ও শিল্পীকে পছন্দ করি, এমনকি আমার অনেক বন্ধু তাদের মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি সেই মানুষকে; যিনি বাস্তব অভিজ্ঞতার কোনো ক্ষেত্রে নিজেকে পারদর্শী করে তুলেছেন এবং আমাকে কিছু না কিছু শেখাতে পারেন। যেমন– আমার এলাকার স্থানীয় একজন ধাত্রী আমাকে মৌমাছি পালন করতে শিখিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমার লেখার কিছুই বুঝতে পারেন না। অথচ সত্যি বলতে, আমি তাকে অধিকাংশ কবির চেয়ে বেশি পছন্দ করি। আমার বন্ধুদের মাঝেও এমন অনেককে পাই, যারা নৌকা চালানো, নির্দিষ্ট কিছু খেলাধুলা বা কারও শরীর কেটে কোনো অঙ্গ অপসারণ করার মতো বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জানেন। ব্যবহারিক বিষয়ে এই দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করে। কবি হিসেবে, আমরা যেন একটু বাতাসে ভেসে থাকি। তাই আমি সব সময় এমন কাউকে পছন্দ করি, যে আমাকে বাস্তবের কিছু শেখাতে পারে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপন য স অন ক ব র জন য আপন র প রথম ন একট

এছাড়াও পড়ুন:

রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি

রিচি সোলায়মান। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখন অনেকটাই আড়ালে। আজ বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’। এতে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান। এই গানচিত্র এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মীর সামী

আপনার অভিনীত গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’ নিয়ে কিছু বলুন?
‘বাবা শুনতে কি পাও’ শিরোনামের এই বিশেষ গানটি তৈরি করেছেন প্রান্তিক সুর। তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গজল ঘরানার শিল্পী শিরিন চৌধুরী। গানটির কথাও লিখেছেন শিল্পী নিজে। গানচিত্রে একটি সুন্দর সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিয়ের পর একটা মেয়ের স্বপ্ন যেন মরে না যায় এবং শুধু মানুষটাকে নয়, তার স্বপ্নকেও ভালোবাসার সংবেদনশীল এবং হৃদয়স্পর্শী বাবার অনুরোধের বার্তা থাকছে এতে। গানের কথার সূত্র ধরে গল্পনির্ভর ভিডিওটিতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত আর মেয়ের ভূমিকায় আমি। অনেকদিন পর হায়াত চাচার সঙ্গে কাজ করলাম। 

এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে? 
কিছুদিন আগে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী আমায় গানচিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য বললেন। যখন শুনলাম এই গানে বাবার ভূমিকায় অভিনয় কবেন আবুল হায়াত চাচা; ঠিক তখনই রাজি হয়েছি। কারণ, আমি হায়াত চাচার পরিচালনায় অনেক নাটকে তাঁর মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। তাই ভাবলাম বাবা দিবসের এই কাজটি আমাদের আরও একটি ডকুমেন্টেশন হয়ে থাক। আমাদের এই কাজে একজন মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে বাবাকে ঘিরে তার স্মৃতি, ভালোবাসা আর না বলা কথাগুলো উঠে এসেছে। কাজটি করার সময় আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। একজন বাবার অবদান যে কত বিশাল, সেটি অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না–এই গানচিত্রে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে।

আপনাকে এখন টিভি নাটকে খুব কম দেখা যায়। ইচ্ছা করেই দূরে সরে আছেন?
আমি এখন পরিবার আর নিজের সময়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। পাশাপাশি কাজের মানের প্রতিও সবসময় সংবেদনশীল ছিলাম। নাটকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কখনও বিশ্বাসী ছিলাম না। এখন তো অনেক সময় দেখা যায় গল্প বা চরিত্রের গভীরতা কম, কাজগুলো অনেকটাই ‘কনটেন্ট ভিউ’ নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই, যখন কাজ করি, সেটি যেন দর্শকের মনে থাকে। তাই শুরু থেকে এখনও বেছে বেছেই কাজ করছি। 

এখন নাটকে ‘ভিউ’ ও ‘ট্রেন্ড’ অনুসারে শিল্পী নির্বাচন হয় বলে অভিযোগ আছে... 
এটি ঠিক যে এখন ‘ভিউ’ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হলো– দীর্ঘ মেয়াদে এই দর্শক আসলে কাদের মনে রাখে? আমার মনে হয়, একটি শিল্পমাধ্যমে যখন কেবল সংখ্যা দিয়ে শিল্পী বা কাজের মান বিচার হয়, তখন সেখানে অন্তর্নিহিত শিল্পবোধ অনেকটা হারিয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি অভিনেতা বা অভিনেত্রী হিসেবে আমাদের প্রথম দায় নিজের চরিত্রের প্রতি। ‘ভিউ’ দিয়ে নয়, শিল্পের গভীরতা দিয়ে একজন শিল্পীকে বিচার করা উচিত।

বর্তমান সময়ে ওটিটি মাধ্যমের প্রসারে নাটকের গুণগত মানে কী প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন?
ওটিটি একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। নতুন গল্প আর নতুন নির্মাতাদের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখানেও একটি সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। যারা আগে টিভিতে প্রভাবশালী ছিলেন, এখন তারা ওটিটিতেও আধিপত্য রাখছেন। এটি শিল্পের জন্য মোটেই ভালো নয়। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিল্পী সুযোগ পাচ্ছেন না। আমি বলব, ওটিটি হোক কিংবা টিভি–প্রতিভা ও গল্পকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত, ‘চেনা মুখ’ বা ‘সেলিব্রেটি প্যাকেজ’কে নয়।

যে সিন্ডিকেটের কথা বললেন, তা কী ভাঙা যায় না?
অবশ্যই যায়। যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন, তারাই এখন সেই দলের হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমি যখন নিয়মিত কাজ করেছি, সেই সময় কিন্তু সবাই যার যার যোগ্যতা দিয়ে কাজ করেছেন। এখন পরিচয়ের ভিত্তিতে হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের নাট্যাঙ্গনের শিল্পটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ওটিটির কাজে আগ্রহ অনুভব করেন?
অবশ্যই। যদি ভালো গল্প আর শক্তিশালী চরিত্র পাই, আমি ওটিটিতেও কাজ করতে চাই। অশ্লীলতা বা অহেতুক সাহসী দৃশ্যের নামে যদি গল্পের গুরুত্ব হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি আমাকে টানে না। শিল্পমান থাকলেই আমি আগ্রহী।

বর্তমান প্রজন্মের নতুন অভিনেত্রীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
নতুনদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালো করছেন। আমি তাদের একটা কথাই বলি, নিজেকে সময় দিন, নিজেকে গড়ুন। রাতারাতি তারকা হওয়া যায়। দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন। টিকে থাকার জন্য শুধু সৌন্দর্য নয়, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও আত্মসমালোচনাও জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১
  • খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প
  • খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প
  • সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি
  • ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
  • চলতি মাসের ১৫ দিনে করোনায় ৪ জনের মৃত্যু
  • গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব
  • কারাগারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ১
  • রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি