নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কিছু বিষয়ে সংস্কার হতেই হবে: ইসলামী আন্দোলনের আমির
Published: 7th, March 2025 GMT
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সংবিধান, নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ‘সংস্কার হতেই হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে আগের তিমিরে ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই এসব ক্ষেত্রে সংস্কার হতেই হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এ কথাগুলো বলেন। রাজনীতিক, বিদেশি কূটনীতিক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে ওই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশে নির্বাচনহীন পরিস্থিতি দীর্ঘ হোক, ইসলামী আন্দোলন তা চায় না-—এ মন্তব্য করে রেজাউল করীম বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ করতে এবং নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুসৃত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। এতে কার্যকর ও যথাযথ প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠিত হবে। নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ হবে।’
চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে চরমোনাইয়ের পীর বলেন, দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হয়েছে। এখন সময় হলো বাংলাদেশ গড়ার।
পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের আমলের অপরাধীদের যথাযথ বিচারেরও দাবি জানিয়েছেন সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
অংশ নেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাসহ অনেকেইসলামী আন্দোলনের ইফতার মাহফিলে বিএনপির নেতাদের মধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য আবদুল মঈন খান ও সালাহ উদ্দিন আহমদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু যোগ দেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানসহ দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও আবদুল হালিম অংশ নেন। আরও ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদ ও মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ একাধিক নেতা ইফতার মাহফিলে অংশ নেন।
ইসলামী দলগুলোর মধ্যে খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাসেত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। ইসলামি বক্তা মাওলানা হাফিজুর রহমান, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদসহ অনেক আলেমও ইফতার মাহফিলে যোগ দেন।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আফগানিস্তান, ইরান, ভুটান, কসোভোর কূটনৈতিক মিশনের প্রধান ও প্রতিনিধিরা ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। এ ছাড়া দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, খবরের কাগজ সম্পাদক মোস্তফা কামালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা ইফতার মাহফিলে যোগ দেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’
খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’