আপনার কিডনি কি ঠিক আছে? তাড়াতাড়ি শনাক্ত করুন, কিডনিস্বাস্থ্য রক্ষা করুন। এবার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। কিডনি মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। দুটি কিডনি অনবরত মানবদেহের ছাঁকন যন্ত্র হিসেবে মূত্রের মাধ্যমে দূষিত পদার্থ নিষ্কাশন করছে। মানবদেহে পানি ও অম্ল-ক্ষারের সমতা রক্ষা করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিডনির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনির অনেক ধরনের অসুখ হতে পারে। তবে কিডনি বিকল হওয়ার সঙ্গে আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। কখনও খুব দ্রুতগতিতে কিডনি বিকল হতে পারে, আবার কখনও ধীরগতিতে। ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত শারীরিক কসরৎ, শারীরিক আঘাত, ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় অতি দ্রুত কিডনি বিকল হতে পারে। মানবদেহে রেচনতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্তে থাকা দূষিত পদার্থ ছেঁকে বের করা। এ ছাড়াও কিডনি রক্তে লবণ এবং পটাশিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা করে, ক্যালসিয়াম শোষণেও সহায়তা করে। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে। কিডনি ঠিক মতো কাজ না করলে নানা রকম শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির নিজস্ব রোগ, জন্মগত ত্রুটি, হৃদরোগ, স্ট্রোক, রক্তনালির ব্যাধি, বেদনানাশক ওষুধসহ কিছু ওষুধের যথেচ্ছ সেবন এবং কতিপয় বাত রোগের কারণে ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হয়ে যায়।
কিডনি সুস্থ রাখার জন্য যে বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে সেগুলো হলো–
l নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখা: পরিমিত পরিমাণ শরীরচর্চা কিডনির সুস্থতার জন্য জরুরি। তবে গরমের মাঝে অতিরিক্ত শরীরচর্চা ক্ষেত্র বিশেষে কিডনির ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
l রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাগে রাখা: প্রতি তিনজন ডায়াবেটিক রোগীর একজন কিডনিসংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হন। সারা বিশ্বে কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস। সেজন্য নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা তদারকি করা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
l রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা: প্রতি পাঁচজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর মাঝে একজন কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হন। এজন্য যাপিত জীবনে পরিবর্তনের পাশাপাশি ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
lওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কিডনির ওপরও চাপ প্রয়োগ করে। অতিরিক্ত ওজন থেকেই হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ কোলেস্টেরল।
l সুষম খাদ্য গ্রহণ: সুস্থ জীবনের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
l পর্যাপ্ত পানি পান: কিডনি সুস্থতার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করতে হবে। পানি শূন্যতা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বিশেষত ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত ঘাম এবং শরীরচর্চার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
l.
l বেদনানাশক ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনে সাবধানতা: বেশ কিছু ওষুধকে বলা হয় নেফ্রো টক্সিক। অর্থাৎ এগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর। ব্যথা-বেদনানাশক ওষুধের মাঝে অন্যতম।
lলবণ পরিমাণমতো গ্রহণ: অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য মনে রাখতে হবে ভাতের পাতে লবণ নয়। যেসব খাদ্যে লবণ বেশি সেগুলো পরিহার করতে হবে।
lনিয়মিত কিডনি পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে হবে কিডনি কেমন আছে। v
[মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট সিএমএইচ, বরিশাল]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ডন ম নবদ হ র জন য গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।