চলতি মৌসুমে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এর পরও দুশ্চিন্তায় বৃহত্তর সিলেটের শস্যভান্ডারখ্যাত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। স্থানীয় টমেটো চাষিরা বলছেন, ফলন ভালো, বাজারে চাহিদাও আছে। এর পরও টমেটো তুলে আড়তে বিক্রি করে পরিবহন খরচও ওঠাতে পারছেন না তারা। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে অনেক কৃষকের টমেটো।
জানা গেছে, উপজেলার প্রান্তিক কৃষক এবং স্থানীয়দের অনেক দিনের দাবি একটি হিমাগার স্থাপনের। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। একটি হিমাগার থাকলে এভাবে নষ্ট হতো না কৃষকের কষ্টের ফসল। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই এই টমেটো বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। এখন হিমাগারে সংরক্ষণ করা গেলে তখন লাভের মুখ দেখতেন চাষিরা।
উপজেলার ভানুগাছ বাজারের আড়তদার শরিফ উদ্দিন জানান, গত এক মাস ধরে আড়তে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজিতে। এর আগের সপ্তাহে বিক্রি ছিল ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি। বাজারে টমেটোর দাম এতটাই কম যে, কৃষক টমেটো তুলতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। সংরক্ষণের সুযোগ থাকলে এখন কমে বিক্রি করে পরে মুনাফাও করতে পারতেন কৃষক। এতে বাজারে টমেটোর দামও সহনীয় থাকত। কোনো পক্ষের কষ্ট হতো না।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার আদমপুর এবং মাধবপুরে সবচেয়ে বেশি টমেটো চাষ হয়। যারা আগাম টমেটো চাষ করেছিলেন তারা লাভবান হলেও বাকিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মাধবপুর ইউনিয়নের টমেটো চাষি সুলেমান, বকুল, শামীম ও বুরহান জানান, আগে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা টমেটো নিতে এলেও এখন কোনো পাইকার আসছে না। আগের মতো টমেটোর চাহিদা এখন নেই। টমেটো তোলা বা ভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে ৪-৫ টাকা কেজি বিক্রি করে কোনো লাভ হয় না। তাই ফসলই তোলা বন্ধ।
আমদপুরের কৃষক মোস্তাফা কামাল জানান, বিক্রির চেয়ে খরচ বেশি। সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে মানুষ এখনও কম দামে খেতে পারত, পরেও বাজারে টমেটো পাওয়া যেত। দাম অসহনীয় হতো না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, টমেটো একটি পচনশীল কৃষিপণ্য। উৎপাদ বেশি হওয়ায় কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। যারা আগাম টমেটো চাষ করেছেন, তারা ভালো দাম পেয়েছেন। এ ছাড়া এখন যারা টমেটো লাগাবেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তারাও ভালো দাম পাবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলায় হিমাগার স্থাপনের বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, এ উপজেলার কৃষকের কষ্টের ফসল সংরক্ষণে সম্প্রতি সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করা হয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের নজরে দেওয়া হয়েছে বিষয়টি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫