ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা জেলার সীমান্তরেখায় সালদা নদী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। অদূরেই বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
সালদা নদীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্থায়ী কোনো ঘাঁটি ছিল না। নদীর পূর্ব পারে মন্দভাগ ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। নদীর অপর পার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে না থাকলেও তা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কাছাকাছি চাঁদলা গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। মাঝেমধ্যেই তারা সেখান থেকে সালদা নদীর পাড়ে আসত। অস্থায়ীভাবে সেখানে অবস্থান নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নজরদারির চেষ্টা করত। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করতেন, যাতে তারা সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান না করতে পারে। কারণ, সালদা নদী ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পথ।
২১ বা ২২ অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বালুচ রেজিমেন্টের একটি বড় দল সালদা নদীর অপর পারে সমবেত হয়। তারা সেখানে বাংকার খনন করতে থাকে। এর কয়েক দিন আগে থেকেই তারা মন্দভাগ দখলের চেষ্টা করছিল। এ কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক ধারণা করলেন, পাকিস্তানি সেনারা যেকোনো সময় মন্দভাগ আক্রমণ করতে পারে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দিলেন তা প্রতিহত করতে।
নির্দেশ পেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত প্রস্তুত হলেন। তাঁরা ছিলেন তিনটি দলে বিভক্ত। একটি দলে ছিলেন আবদুল লতিফ। ২৩ অক্টোবর রাতে (তখন ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ২৪ অক্টোবর) বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সালদা নদী রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে পাহাড়ি এলাকায়; একটি দল সালদা নদী ও গুদামঘরের পশ্চিমে নদী অতিক্রম করে এবং অপর দলটি পাকিস্তানি সেনাদের পেছনে অবস্থান নেয়। তারপর তিন দিক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাঁড়াশি আক্রমণ করেন। তখন সেখানে ভয়াবহ এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
আবদুল লতিফ ছিলেন নদী অতিক্রমকারী দলে। তাঁরা সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কয়েকটি বাংকার ধ্বংস করেন। এরপর তিনি কয়েকজন সহযোদ্ধার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছিলেন সামনে। তখন হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছোড়া গুলিতে তিনি শহীদ হন।
আবদুল লতিফ চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। তখন তাঁর রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চ মাসে এই রেজিমেন্টের বেশির ভাগ সদস্য সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখান থেকে পালিয়ে তাতে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের মন্দভাগ ও সালদা নদী সাবসেক্টরে।
আবদুল লতিফ, বীর প্রতীক
গ্রাম মহেষপুর, উপজেলা নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাবা লিল মিয়া, মা গোলাপী খাতুন। অবিবাহিত। খেতাবের সনদ নম্বর ৯২। শহীদ ২৩ অক্টোবর ১৯৭১।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। দ্বিতীয় খণ্ড। প্রথমা প্রকাশন। (প্রকাশ: মার্চ, ২০১৩)।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু
তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
রোববার তেহরান দূতাবাস এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকদের নিম্নোক্ত মোবাইলফোন নম্বরগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
+ ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫।