বরগুনায় মধ্যরাতে মাজারে হামলা-আগুন, আহত ২০
Published: 17th, March 2025 GMT
বরগুনার আমতলী উপজেলায় ইসমাইল শাহ মাজারে বার্ষিক ওরস চলাকালে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মাজারের ভেতরের শামিয়ানা ও দুটি বৈঠকখানা পুড়ে গেছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকার ওই মাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মাজারটির খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জানিয়েছেন হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জনকে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রাশেদ মাহমুদ জানান, আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, গতকাল মাজারের ২৮তম ওরস শুরু হয়। রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন মাজারপূজা ও গান থামিয়ে ওরস বন্ধের দাবি জানান। তবে মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সেখানে মাজার ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শত শত ভক্ত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
আমতলী ফায়ার স্টেশনের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে গতকাল রাত ২টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনে মাজারের ভেতরের শামিয়ানা ও দুটি ঘর পুড়ে গেছে।
মাজারটির খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল অভিযোগ করেন, ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাঁদের সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মাজারে হামলা চালান এবং আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় মাজারের গিলাব ও দুটি বৈঠকখানা পুড়ে গেছে। ভক্তদের মারধর করা হয়েছে এবং মাজারের দানবাক্সের টাকাপয়সা লুট হয়ে গেছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে গাজী বায়েজিদ বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে তাঁদের মাজারপূজা ও গানবাজনা করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু খাদেম তা মানতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তাঁর ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওমর ফারুক জেহাদীর গায়ে হাত তোলেন। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজার ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।’
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আলীকদমে নিখোঁজ আরেক পর্যটকের লাশ উদ্ধার
বান্দরবানের আলীকদমে নিখোঁজ হওয়া তিন পর্যটকের মধ্যে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা লাশটি স্মৃতি আক্তারের (২৪) বলে তাঁর সঙ্গী পর্যটকেরা শনাক্ত করেছেন।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলীকদম উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে তৈনখালের আমতলি ঘাট এলাকায় ভাসমান অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এ নিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হলো।
আলীকদম ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানিয়েছেন, সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে লাশের সংবাদ পাওয়া যায়। আমতলি ঘাট থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বেঁচে ফিরে আসা ১৯ পর্যটককে আলীকদম থানায় রাখা হয়েছে।
পর্যটকদের মধ্যে রাহাত হোসেন নামের একজন জানান, আজকে উদ্ধার হওয়া লাশটি স্মৃতি আক্তারের। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়। স্মৃতি আক্তার ও মো. হাসান পর্যটন ব্যবস্থাপনা সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের সহপরিচালক। তাঁদের ব্যবস্থাপনায় এই ভ্রমণ আয়োজিত হয়।
৮ জুন দুটি দলে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদম ও থানচি উপজেলার মধ্যবর্তী দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড়ে গিয়েছিলেন। পাঁচ দিনের ভ্রমণে এক দলে ১১ জন ও তিন দিনের ভ্রমণের আরেক দলে ২২ জন পর্যটক ছিলেন। গত বুধবার তিন দিনের ভ্রমণ শেষে ২২ জনের দলটি ফিরে আসার পথে প্রবল বৃষ্টিতে হঠাৎ শামুকঝিরি ঝরনায় পাহাড়ি ঢল নামে। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন ফিরে এলেও জুবাইরুল, হাসান ও স্মৃতি পেছনের দিকে থাকায় নিখোঁজ হন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ তিন পর্যটকের মধ্যে আজ স্মৃতি আক্তার ও গতকাল জুবাইরুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেছে। লাশ দুটি বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মো. হাসানের লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিখোঁজ তিনজনকে শনাক্তের জন্য মানবিক কারণে ১৯ জন পর্যটককে থানায় রাখা হয়েছে। তাঁরা না হলে নিখোঁজ তিনজনকে শনাক্ত করার কেউ থাকবে না।