বরগুনার আমতলী উপজেলায় ইসমাইল শাহ মাজারে বার্ষিক ওরস চলাকালে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মাজারের ভেতরের শামিয়ানা ও দুটি বৈঠকখানা পুড়ে গেছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকার ওই মাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মাজারটির খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জানিয়েছেন হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জনকে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রাশেদ মাহমুদ জানান, আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, গতকাল মাজারের ২৮তম ওরস শুরু হয়। রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন মাজারপূজা ও গান থামিয়ে ওরস বন্ধের দাবি জানান। তবে মাজারের খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সেখানে মাজার ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শত শত ভক্ত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

আমতলী ফায়ার স্টেশনের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে গতকাল রাত ২টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনে মাজারের ভেতরের শামিয়ানা ও দুটি ঘর পুড়ে গেছে।

মাজারটির খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল অভিযোগ করেন, ওমর ফারুক জেহাদী ও গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাঁদের সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মাজারে হামলা চালান এবং আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় মাজারের গিলাব ও দুটি বৈঠকখানা পুড়ে গেছে। ভক্তদের মারধর করা হয়েছে এবং মাজারের দানবাক্সের টাকাপয়সা লুট হয়ে গেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে গাজী বায়েজিদ বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে তাঁদের মাজারপূজা ও গানবাজনা করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু খাদেম তা মানতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তাঁর ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওমর ফারুক জেহাদীর গায়ে হাত তোলেন। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজার ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।’

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত এ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ