পল্লবীতে রাতে আটকে এক নারীকে ‘দলবদ্ধ ধর্ষণ’, দুজন গ্রেপ্তার
Published: 18th, March 2025 GMT
ধর্ষণের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই রাজধানীর পল্লবীতে গতকাল সোমবার রাতে আটকে রেখে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ওই নারী আজ মঙ্গলবার সকালে ৯৯৯–এ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ঘটনা তুলে ধরে তিনি পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছেন। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ওই নারীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন বলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
ঘটনাটি ঘটেছে পল্লবী থানার বারনটেকের ‘গ্রিন সিটি’ এলাকায়। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের শিকার ওই নারী অপেক্ষাকৃত কম প্রচারিত একটি পত্রিকায় কাজ করেন। মাটিকাটা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে, এমন খবর পেয়ে ওই নারী রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গতকাল রাত ১১টার দিকে সেখানে যান। তখন কয়েকজন যুবক তাঁকে ধরে বারনটেকের গ্রিন সিটি এলাকার একটি নির্মাণাধীন ১২ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। এরপর ১৬ ব্যক্তি তাঁকে ঘেরাও করে ফেলেন। দিবাগত রাত একটা থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ওই নারীকে ধর্ষণ করেন তাঁরা।
চলিশোর্ধ্ব ওই নারী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ধর্ষকেরা চলে যাওয়ার পর ওই নারী ৯৯৯–এ ফোন করেন। তখন ক্যান্টনমেন্ট থানা–পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল পল্লবী থানা এলাকা হওয়ায় তাঁরা ওই নারীকে এই থানায় নিয়ে আসেন। ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে ওই নারী একটি মামলা করেছেন। সেখানে আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত পরিচয় আসামি হিসেবে আছে আরও আটজন।
এরপর দুপুরে পল্লবী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি এনামুল হক (৩৮) ও তাঁর এক সহযোগী হামিদুর রহমানকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ওসি নজরুল ইসলাম জানান। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই দুজন ওই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। আগামীকাল বুধবার তাঁদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. মাকছুদের রহমান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে এনামুলের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের চরগোবিন্দ এলাকায়। আর হামিদুরের বাড়ি গাজীপুরের পুবাইলের মেঘডুবিতে। তাঁরা দুজনই বর্তমানে ঢাকায় থাকেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে আট বছরের এক শিশু। এসব ঘটনা মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ধর্ষণের প্রতিবাদ ও নারী নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে গত সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই ন র ক এল ক য় কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।