বনের জমি বরাদ্দের অর্থ এটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা। তবে বর্তমান সরকার সব প্রতিরোধ উপেক্ষা করে বন উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া বনভূমির বরাদ্দ বাতিল করা হচ্ছে। অবৈধ দখলদার যত প্রভাবশালীই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টা, যেটুকু বনভূমি আমাদের হাতে আছে, তা যেন কোনোভাবেই না কমে। আসলে বনভূমি উন্নয়নকাজে দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। দিলে সরকারপ্রধানের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু কোনো একক ব্যক্তির অনুমতির ওপর এটি নির্ভর করলে, রাজনৈতিক প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে কোথাও জমি না মিললে বনই ভরসা। ভাবখানা এমন, বনের জমি খালি খালি পড়ে আছে। কিন্তু একটি নগরী কিংবা একটা দেশে রাস্তা যেমন প্রয়োজন, নদী যেমন দরকার; বনও সমান প্রয়োজনীয়।

সরকার এখন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাহলো বড় বড় যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বনভূমি দেওয়া হয়েছে, তা ফিরিয়ে এনে পুনরায় বনায়ন করা যেখানে সম্ভব, সেখানে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ৭০০ একর, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে দেওয়া ২০ একর বনভূমি ফেরত এনেছি। সোনাদিয়ার বেজার অনুকূলে বরাদ্দ ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি হস্তান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। মিরসরাই বেজাকে দেওয়া ৪ হাজার ১০০ একর জমির বরাদ্দ বাতিল প্রক্রিয়াধীন। আর কক্সবাজারে এক সচিব তাঁর ভাইয়ের স্মৃতি রক্ষার্থে কলেজ প্রতিষ্ঠার নামে ১৫৫ একর বনের জমি নিয়েছিলেন। এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ওই জমি ফেরত নিয়েছি।

গত বছর ৫ আগস্টের পর যেসব বনভূমি দখল হয়েছে, সেখানে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। কিছু দখল দীর্ঘদিনের। সেগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষ না করে ফেরত আনা সম্ভব নয়; সেগুলো সময়সাপেক্ষ। কাজেই সেসব বন উদ্ধারের বিষয় আমরা আমাদের কর্মতালিকায় দ্বিতীয় প্রাধিকারে রেখেছি। সরকারি সংস্থাকে দেওয়া বনভূমির বরাদ্দ বাতিল বন রক্ষায় একটি মাইলফলক।

আমরা মধুপুর শালবনকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছি। এটিতে আদালতেরও রায় আছে। এরই অংশ হিসেবে বনভূমির সীমান্ত চিহ্নিত এবং চলতি বছরেই ১৩৫ একর বনভূমিতে আকাশিয়া গাছ কেটে শালবন করা হবে। ক্রমান্বয়ে আরও কিছু পরিমাণ এলাকায় আমরা শালবন করব। বসবাসকারীদের অধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনকে বিশ্বঐতিহ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বন দখলমুক্ত করে কিছু জায়গায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করব। পূর্বাচলে রাজউক যেখানে বন চিহ্নিত করেছে, সেখানে ব্যবস্থাপনা করবে বন বিভাগ।

সুন্দরবনসহ অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় চলতি বছর বিশেষ কর্মসূচি চালু হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, যেমন ড্রোন মনিটরিং ও স্মার্ট প্যাট্রোলিংয়ের মাধ্যমে বনভূমির অবৈধ দখল ও বৃক্ষ নিধন প্রতিরোধ জোরদার করা হবে। অবৈধ বনভূমি উদ্ধারে কাঙ্ক্ষিত সফলতা লাভ করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন চূড়ান্ত করেছি। নতুন আইনের অধীনে প্রাকৃতিক বন রক্ষায় বন বিভাগের দায়িত্ব নির্ধারণ করেছি। আর কিছু গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের অনুমতির বিধান রেখেছি। সামাজিক বনায়নের নামে গাছ কাটা নিষিদ্ধ এবং ইউক্যালিপটাসের মতো গাছ না লাগানোর বিধান আইনে রাখা হচ্ছে। আইন প্রণয়নে আমরা বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করেছি।

বর্তমান সরকারের মূল উদ্দেশ্য, উন্নয়নের জন্য বনকে যে ত্যাগ করা যায় না; বনেরও প্রয়োজন রয়েছে– সেটিকে মূলমন্ত্র করা। আমরা স্বেচ্ছাচারীভাবে যেসব বন দখল করা হয়েছে, সেগুলো ফেরত আনার চেষ্টা করছি। একটি প্রাকৃতিক বন পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যান্য প্রাকৃতিক বনে যেসব ধ্বংসাত্মক বা ক্ষতিকর কাজ হচ্ছে, সেগুলো কমিয়ে আনছি। বন্যপ্রাণী, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার কাজে যাতে বন ব্যবহৃত হয়, সেগুলো নিশ্চিতের চেষ্টা করব।

লেখক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর দ দ ব ত ল বনভ ম র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের প্রথম ৫ লাখ কোটি ডলারের কোম্পানি এনভিডিয়া

চিপ কোম্পানি এনভিডিয়ার অগ্রযাত্রা চলছেই। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রাণভোমরা হচ্ছে এই চিপ। ফলে এনভিডিয়ার ব্যবসায়িক বিকাশই এখন প্রযুক্তি খাতের স্বাভাবিক ঘটনা। সে সুবাদে কোম্পানিটি একের পর এক সমৃদ্ধির মাইলফলক অর্জন করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

সফলতার ধারাবাহিকতায় জেনসেন হুয়াং প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি গত বুধবার বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম কোম্পানি হিসেবে ৫ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ কোটি মার্কিন ডলারের বাজার মূলধনের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেসের।

বাজার মূলধন ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে ওঠার খবরে বুধবার এনভিডিয়ার শেয়ারের দর ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এই দাম বাড়ার ফলে দিন শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক শূন্য ৩ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

এক মাইলফলক থেকে আরেক মাইলফলক অর্জন করতে এনভিডিয়ার তেমন একটা সময় লাগছে না। ২০২৩ সালের জুন মাসে কোম্পানিটি প্রথম এক ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলারের বাজার মূলধনের মাইলফলক স্পর্শ করে। তার ২৯ মাসের মাথায় কোম্পানিটি ৫ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলল।

এক লাখ কোটি ডলারের বাজার মূলধন থেকে দুই লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাতে এনভিডিয়ার সময় লেগেছিল ১৮০ দিন। এরপর দুই লাখ কোটি ডলার থেকে তিন লাখ কোটি ডলারে যেতে লেগেছে মাত্র ৬৬ দিন। সর্বশেষ চার লাখ কোটি ডলার থেকে পাঁচ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাতে সময় লেগেছে ৭৮ দিন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থানের ঢেউয়ে চেপে এগিয়ে চলেছে এনভিডিয়া—যে প্রবণতা শুরু হয়েছে ২০২২ সালের শেষ দিকে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ১ হাজার ৫০০ শতাংশের বেশি। সেই তুলনায় এ বছর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক বেড়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ ও ন্যাসডাকে ২৩ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে এনভিডিয়ার বাজার মূলধন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ছাড়া এখন বিশ্বের যেকোনো দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারের চেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির আকার ২৯ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার, আর চীনের জিডিপি ১৮ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এর পেছনে জার্মানির অবস্থান। সে দেশের জিডিপির আকার ৪ দশমিক ৬৬ ট্রিলিয়ন ডলার।

কোম্পানিস মার্কেট ডট কমের তথ্যানুসারে, বাজার মূলধনের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে মাইক্রোসফট; তাদের বাজার মূলধন ৪ লাখ ২৫ হাজার কোটি ডলার। ৪ লাখ কোটি ডলারের বাজার মূলধন নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে অ্যাপল। ৩ লাখ ৩২ হাজার কোটি ডলার নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে অ্যালফাবেট। ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি ডলার নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে অ্যামাজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বের প্রথম ৫ লাখ কোটি ডলারের কোম্পানি এনভিডিয়া