৬১৮ নম্বর কেবিনের নূহা-নাবার জন্মদিন আজ
Published: 21st, March 2025 GMT
নাফিসা আলিয়া নূহা আর নাফিয়া আলিয়া নাবা বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ৬১৮ নম্বর ভিআইপি কেবিনে বেড়ে উঠেছিল। জন্মের ১৪ দিন বয়স থেকে তারা হাসপাতালটির ওয়ার্ডে এবং পরে এ কেবিনে থেকেই হাঁটতে শেখে, কথা বলতে শেখে। হাসপাতালে ভর্তির ৩২ মাস পর গত বছরের ২৫ নভেম্বর দুই বোন মা–বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরেছিল। আজ ২১ মার্চ, শুক্রবার তাদের জন্মদিন। তিন বছর শেষ হয়ে চার বছরে পা দেবে। প্রথমবারের মতো বাড়িতে মা–বাবা মেয়েদের জন্মদিন পালন করবেন।
নূহা ও নাবার জন্ম হয়েছিল মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো অবস্থায়। শরীরের পেছন ও নিচের দিকে থেকে যুক্ত ছিল তারা। দুজনের মলত্যাগের পথও এক ছিল। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এদের বলা হয় ‘কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস’। এ ধরনের জোড়া শিশু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা দেশে এই প্রথম বলেই বলছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। আলাদা হয়ে ২ বছর ৭ মাস ২২ দিন বয়সে নূহা–নাবা হাসপাতাল ছেড়ে কুড়িগ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরেছিল। মো.
বুধবার নূহা ও নাবার বাবা মো. আলমগীর হোসেন মোবাইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিন্তা করিনি মেয়েরা কখনো আলাদা হবে। আর এখন বাড়িতে বসে মেয়েদের জন্মদিন পালন করব। মেয়েরা আলাদা আলাদা হেঁটে বেড়ায়। অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনসহ চিকিৎসকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।’
এ পর্যন্ত নূহা ও নাবার ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় আটটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। নূহা ও নাবা শুরু থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিল বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগের স্পাইনাল নিউরোসার্জারি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনের অধীন।
গত বছর হাসপাতাল ছাড়ার আগপর্যন্ত নূহা ও নাবার চিকিৎসায় খরচ হয়েছিল ৫১ লাখ টাকা। ১৫ লাখ টাকা অনুদান ছাড়া বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করেছিল। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রোপচারের পর থেকে নূহা ও নাবা আলাদা দুই শিশু। নূহা ও নাবার পেটের মধ্যে পায়খানার রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ব্যাগ ব্যবহার ও তা পাল্টানো, বানিয়ে দেওয়া মলদ্বার পরিষ্কারের জন্য স্যালাইন ব্যবহারসহ দুই মেয়ের পেছনে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান মো. আলমগীর হোসেন। মেয়েদের প্রতিদিন মাংসসহ অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হয়।
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনো তেমন কোনো কাজ শুরু করতে পারিনি। একটি দোকান চালু করতে চাচ্ছি। ঢাকা থেকে আসার পর মেয়েদের নিয়ে দুইবার হাসপাতালে ফলোআপে যেতে হয়েছে। রমজান মাসে আবার চিকিৎসক যেতে বলেছিলেন, টাকাপয়সার জন্য যেতে পারিনি। ঈদের পর যাব।’
পরিবহনশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন আলমগীর হোসেন। হাসপাতালে মেয়েদের সঙ্গে থাকতে হয়েছে বলে চাকরিটা চলে গিয়েছিল। জমি বন্ধক, ঋণ এবং ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে কিছু টাকা অনুদান পেয়েছিলেন, তা–ই দিয়ে চলছেন আলমগীর হোসেন। বাড়ি ফেরার পর ছেলে নাফিউ হোসাইনকে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়েছেন।
কুড়িগ্রামে নিজেদের বাড়ির উঠানে আলাদা হওয়া যমজ বোন নূহা ও নাবাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আলমগ র হ স ন র জন ম
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ না পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিকে হত্যা
দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্স টাউনে মুক্তিপণ না পেয়ে মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন ইকবাল নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) কুইন্সটাউনের একটি জঙ্গল থেকে আলমগীর হোসেন ইকবালের মরদেহ পাওয়া যায়।
নিহত আলমগীর হোসেন ইকবালের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদরের আলীরটেক এলাকায়।
আরো পড়ুন:
বগুড়ায় যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
স্বজনেরা জানান, গত ২ জুন অপহরণকারীরা নিহতের পরিবারের কাছে প্রথমে ৫ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে এক কোটি টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, আলমগীর হোসেন ইকবাল দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করে আসছিল। সেখানে তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইকবালের পরিবারে মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। তারা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরে বসবাস করে আসছিলেন।
নিহত আলমগীর হোসেন ইকবালের ভগ্নীপতি শরিফুর রহমান ঢালী বলেন, ‘‘গত ২ জুন রাত ১০টার দিকে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে গাড়ি থেকে মালামাল আনলোড করার সময় ৪ জন অপহরণকারী ইকবালকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। দুদিন পরে ইকবালের স্ত্রীর ফোন নাম্বারে কল করে সাউথ আফ্রিকান ৫০ লাখ (বাংলাদেশি টাকায় ৫ কোটি টাকা) দাবি করে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘একাধিকবার কথা বলার পরিবার এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অপহরণকারীরা সর্বশেষ এক কোটি টাকা দাবি করে। কিন্তু, পরিবার এই অর্থ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অপহরণকারীরা তাকে হত্যা করে। ১২ জুন একটি জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আগামী ১৫ জুন রাতে কাতার এয়ারওয়েজে নিহত আলমগীর হোসেন ইকবালের মরদেহ দেশে আসবে।’’
ঢাকা/অনিক/রাজীব