নাফিসা আলিয়া নূহা আর নাফিয়া আলিয়া নাবা বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ৬১৮ নম্বর ভিআইপি কেবিনে বেড়ে উঠেছিল। জন্মের ১৪ দিন বয়স থেকে তারা হাসপাতালটির ওয়ার্ডে এবং পরে এ কেবিনে থেকেই হাঁটতে শেখে, কথা বলতে শেখে। হাসপাতালে ভর্তির ৩২ মাস পর গত বছরের ২৫ নভেম্বর দুই বোন মা–বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরেছিল। আজ ২১ মার্চ, শুক্রবার তাদের জন্মদিন। তিন বছর শেষ হয়ে চার বছরে পা দেবে। প্রথমবারের মতো বাড়িতে মা–বাবা মেয়েদের জন্মদিন পালন করবেন।

নূহা ও নাবার জন্ম হয়েছিল মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো অবস্থায়। শরীরের পেছন ও নিচের দিকে থেকে যুক্ত ছিল তারা। দুজনের মলত্যাগের পথও এক ছিল। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এদের বলা হয় ‘কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস’। এ ধরনের জোড়া শিশু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা দেশে এই প্রথম বলেই বলছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। আলাদা হয়ে ২ বছর ৭ মাস ২২ দিন বয়সে নূহা–নাবা হাসপাতাল ছেড়ে কুড়িগ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরেছিল। মো.

আলমগীর হোসেন ও নাসরিন আক্তার দম্পতির কাছে এটি ছিল স্বপ্নের মতো।

বুধবার নূহা ও নাবার বাবা মো. আলমগীর হোসেন মোবাইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিন্তা করিনি মেয়েরা কখনো আলাদা হবে। আর এখন বাড়িতে বসে মেয়েদের জন্মদিন পালন করব। মেয়েরা আলাদা আলাদা হেঁটে বেড়ায়। অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনসহ চিকিৎসকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।’

এ পর্যন্ত নূহা ও নাবার ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় আটটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। নূহা ও নাবা শুরু থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিল বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগের স্পাইনাল নিউরোসার্জারি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনের অধীন।
গত বছর হাসপাতাল ছাড়ার আগপর্যন্ত নূহা ও নাবার চিকিৎসায় খরচ হয়েছিল ৫১ লাখ টাকা। ১৫ লাখ টাকা অনুদান ছাড়া বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করেছিল। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রোপচারের পর থেকে নূহা ও নাবা আলাদা দুই শিশু। নূহা ও নাবার পেটের মধ্যে পায়খানার রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ব্যাগ ব্যবহার ও তা পাল্টানো, বানিয়ে দেওয়া মলদ্বার পরিষ্কারের জন্য স্যালাইন ব্যবহারসহ দুই মেয়ের পেছনে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান মো. আলমগীর হোসেন। মেয়েদের প্রতিদিন মাংসসহ অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হয়।

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনো তেমন কোনো কাজ শুরু করতে পারিনি। একটি দোকান চালু করতে চাচ্ছি। ঢাকা থেকে আসার পর মেয়েদের নিয়ে দুইবার হাসপাতালে ফলোআপে যেতে হয়েছে। রমজান মাসে আবার চিকিৎসক যেতে বলেছিলেন, টাকাপয়সার জন্য যেতে পারিনি। ঈদের পর যাব।’

পরিবহনশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন আলমগীর হোসেন। হাসপাতালে মেয়েদের সঙ্গে থাকতে হয়েছে বলে চাকরিটা চলে গিয়েছিল। জমি বন্ধক, ঋণ এবং ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে কিছু টাকা অনুদান পেয়েছিলেন, তা–ই দিয়ে চলছেন আলমগীর হোসেন। বাড়ি ফেরার পর ছেলে নাফিউ হোসাইনকে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়েছেন।

কুড়িগ্রামে নিজেদের বাড়ির উঠানে আলাদা হওয়া যমজ বোন নূহা ও নাবা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আলমগ র হ স ন র জন ম

এছাড়াও পড়ুন:

আসামিদের হুমকিতে অসহায় মা, নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি

খুলনা মহানগরীর লবণচরার বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার ঘের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন বিদ্যুৎ (২৪) হত্যা মামলার বিচার কাজ এক যুগ অতিবাহিত হলেও এখনো শেষ হয়নি। মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে আসামিরা জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন নিহতের পরিবারকে। তাদের বিরুদ্ধে বাদীর অপর ছেলেকে হত্যার ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। 

এ অবস্থায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা এবং আসামিদের অপতৎপরতা থেকে রক্ষা করে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছেন নিহত বিদ্যুতের মা জাহানারা বেগম। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আরো পড়ুন:

কেএমপির ৮ থানার ওসি রদবদল

জলবায়ু পরিবর্তন আজকের বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: ইইউ রাষ্ট্রদূত

লিখিত বক্তব্যে জাহানারা বেগম বলেন, ‍“২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা আমার ছোট ছেলে মো. আলমগীর হোসেন ওরফে বিদ্যুৎকে (২৪) নগরীর খানজাহান আলী (র.) সেতু এলাকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পর ৭ ডিসেম্বর আমি বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা করি (মামল নং- ০৩)। মামলাটি বর্তমানে খুলনা মহানগর দায়রা জজ (মামলা নং: ৪৪৯/১৫) বিচারাধীন আছে।” 

“মামলায় লবণচরা বাংলাদেশ সী ফুডস রোড এলাকার নাজিম খলিফার দুই ছেলে আরমান খলিফা ও আরিফ খলিফা, লবণচরা মোহাম্মদীয়া পাড়া মসজিদ এলাকার আব্দুল জলিল হাওলাদারের ছেলে হারুন হাওলাদার, লবণচরা ইব্রাহীমিয়া মাদরাসা রোড এলাকার হামিদ মিস্ত্রীর ছেলে মো. সিরাজ এবং লবণচরা মোক্তার হোসেন রোড এলাকার হযরত আলী ফকিরের ছেলে বাদল ফকিরকে আসামি করা হয়। এ মামলায় আসামিরা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এই সব আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় বিভিন্ন মামলাও রয়েছে”, যোগ করেন তিনি।

জাহানারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার কলিজার টুকরো সন্তানকে হত্যা করেও সন্ত্রাসীরা ক্ষ্যান্ত হয়নি। উপরন্ত জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা এখন মামলা তুলে নিতে আমি ও আমার এক মাত্র সন্তান এবং মামলার স্বাক্ষীদের জীবননাশসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে বারবার সাধারণ ডায়রি (জিডি) করার ফলে হত্যাকারী-সন্ত্রাসীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কোন সময় তারা আমি ও আমার বড় ছেলেসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।”

তিনি আরো বলেন, “হত্যাকারী-আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি এখন পর্যন্ত খুলনা ও লবণচরা থানায় চারটি সাধারণ ডায়রি করেছি। সর্বশেষ গত ৩ মার্চও আমি লবণচরা থানায় জিডি করি। কারণ ২ মার্চ দুপুরে মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি আরমান তার ভাই আরিফ এবং অপর আসামি জুয়েল শেখ, হারুন হাওলাদার, সিরাজ ও বাদল ফকিরসহ আরো অনেকে আমার বাসার সামনে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। এমনকি তারা আমাকে ও আমার বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন বিপ্লবকেও হত্যা করবেন বলেও হুমকি দেয়। এ ছাড়া, একই ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে আমি ২০১৪ সালের ৪ মার্চ ও ২ মে খুলনা থানায় এবং একই বছরের ৪ মে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লবণচরা থানায় সাধারণ ডায়রি করি।”

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামিদের হুমকিতে অসহায় মা, নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি