সুন্দরবনের আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, চলছে সবশেষ তল্লাশি
Published: 25th, March 2025 GMT
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের তেইশের ছিলা এলাকার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা চেষ্টার পর আজ মঙ্গলবার সকালে আগুন সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ এসেছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস।
পানিসংকটে আগুন নেভাতে শুরু থেকেই বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগকে। ভাটার কারণে আজ সকালেও শুকনা ছিল মরা ভোলা নদী। তবে গতকাল সোমবার রাতে জোয়ারের সময় ওই এলাকায় পানি ছিটানো হয়।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা কার্যালয়ের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আরিফুল হক বলেন, ‘রাতে জোয়ার আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পানি ছিটানো শুরু করি। রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পানি ছিটিয়েছি। রাতে আমরা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি, বনের কোথাও আগুনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এখন বনের ভেতরে সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ চলছে। বন বিভাগের লোকজনও পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। যদি আগুনের অস্তিত্ব না পাওয়া যায়, তাহলে আগুন নির্বাপণ হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হবে।’
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ বলেন, ‘রাতভর আমরা সবাই মিলে কাজ করেছি। এখন সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ চলছে। জোয়ার আসার পর সোয়া ৯টার দিকে আবারও পাম্প চালানো হয়েছে। এখনো কোথাও আগুনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আশা করি অগ্নিনির্বাপণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে আমরা তল্লাশি চালাচ্ছি, সর্বশেষ ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তল্লাশি করা হবে।’
আরও পড়ুনপানির উৎস না থাকায় সুন্দরবনের নতুন এলাকার আগুন নিয়ন্ত্রণেও বেগ পেতে হচ্ছে২৩ মার্চ ২০২৫এর আগে শনিবার সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী বন টহল ফাঁড়ির টেপার বিলে আগুন লাগে। রোববার সকালে সেই আগুন নেভানো হয়। সুপ্ত আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী খুঁজতে বন বিভাগ ড্রোন ব্যবহার করে। তখন কলমতেজী এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তেইশের ছিলায় আগুনের অস্তিত্ব দেখতে পায় বন বিভাগ। তাৎক্ষণিকভাবে বন বিভাগ, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক, ভিটিআরটি, সিপিজি সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে যাতে আগুন ছড়িয়ে না পড়ে, এ জন্য ফায়ার লাইন তৈরি করা হয়। আগুনের স্থান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ভোলা নদীতে পাম্প বসিয়ে এদিন রাতেই পানি ছিটানো শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের আহ্বান উপদেষ্টার
বাঘ পাচারকারী ও চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে দাঁড়াতে হবে। বাঘ সংরক্ষণের সুফল জনগণের সামনে দৃশ্যমান করতে হবে।
বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর বন ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সচিবালয় থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ‘‘বাঘ শুধু একটি বন্যপ্রাণী নয়, এটি বাংলাদেশের গর্ব ও জাতিসত্তার প্রতীক। যেমন আমরা সুন্দরবন নিয়ে গর্ব করি, তেমনি গর্ব করি রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়েও। সাহস, ভালোবাসা ও বীরত্বের প্রতীক হিসেবে আমরা বাঘকে দেখি। ক্রিকেটারদের ‘টাইগার’ নামে ডাকাও সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ।’’
সাম্প্রতিক বাঘ শুমারির ফল তুলে ধরে উপদেষ্টা জানান, কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের কারণে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে, যা আশাব্যঞ্জক। তবে হরিণ শিকারে নিয়ন্ত্রণ, বারবার অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ এবং চোরা শিকার রোধে আরও কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘‘বাঘের মৃত্যু ও পাচারের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ-বাঘ দ্বন্দ্বও বেড়েছে। এজন্য সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় সামাজিক সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’
পাশাপাশি সুন্দরবনে অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘কারা চোরাকারবারি, আর কারা বিকল্প জীবিকার সুযোগ পেলে সেই পথ পরিহার করবে তাদের তালিকা তৈরি করে জানাতে হবে, যেন আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি।’’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘‘আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায়, পরিবেশ সংরক্ষণে এবং বাঘকে টিকিয়ে রাখতে সম্মিলিতভাবে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।’’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
অনুষ্ঠানে ‘সুন্দরবনে সংঘাতপ্রবণ বাঘ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা’ এবং ‘টাইগারস্ অব দ্য সুন্দরবনস’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পাশাপাশি, সুন্দরবনভিত্তিক পটের গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।
ঢাকা/এএএম//