গার্মেন্টস-সহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবিসমূহের ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিসমূহ বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

আজ বৃহস্পতিবার গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতনভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবিসমূহের ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিসমূহ বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘তবে অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিস্তর অভিযোগ ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, বেআইনি আটকসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা ধ্বংস করে সেগুলোকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডসহ গুম ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে, সেটি নিশ্চিতভাবেই ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। কিন্তু এ সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, মব সহিংসতায় মৃত্যুসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোও সমানভাবে উদ্বেগজনক।

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’–এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি—৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল; আর গত তিন মাসে ঘটেছে ১১টি। ৪০ জনের মধ্যে গুলিতে মারা গেছেন ১৯ জন, নির্যাতনে মারা গেছেন ১৪ জন, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৭ জনকে। গত তিন মাসে যে ১১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন; সেখানে পুলিশ, যৌথ বাহিনী ও সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে।

অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) অক্টোবর মাসের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে কারা হেফাজতে যেখানে ৮ জন মারা যান, এক মাস পর সেখানে ১৩ জন মারা গেছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা ও কারা হেফাজতে মৃত্যুর এই তথ্য যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়, একই সঙ্গে জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করে। মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি আর মাঠের বাস্তবতার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, সেই চিত্রই পরিষ্কার করে তুলে ধরে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে মব সহিংসতা ও রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর পরিসংখ্যানও দিয়েছে অধিকার। এ সময়ে মব সহিংসতায় ১৫৩ জন এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৮১ জন নিহত হয়েছেন। এমএসএফ জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে ৫২টি ও অক্টোবর মাসে ৬৬টি অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো পরিসংখ্যানই স্বস্তিদায়ক নয়। এই চিত্র সরকারের দুর্বলতা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ভঙ্গুরতারই প্রতিচ্ছবি। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে ও ভারত থেকে পুশ ইন ঠেকাতে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতেও সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক চর্চার বাইরে গিয়ে দেখার অবকাশ নেই। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা খোলাচিঠিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন, ছয়টি নির্বিচার গ্রেপ্তার বন্ধ এবং গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার ও খারিজের আহ্বান জানিয়েছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যুর মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের লাগাম টানতে হলে অবশ্যই সবার আগে বাহিনীগুলোর ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কারের প্রশ্নটি সে কারণেই সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর তাদের সুপারিশে র‍্যাব বিলুপ্তি এবং বিজিবিকে সীমান্ত রক্ষা ও ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া বাস্তবে কোনো সংস্কার করতে পারেনি। ফলে নির্বাচন–পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের আমলেও বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।

শুধু প্রতিশ্রুতি আর কথায় নয়, বাস্তবেও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যুর অবসান হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: তুরস্ক
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল
  • ঢাকাসহ সারা দেশে এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ১৪৯