বাজারে এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। দফায় দফায় বেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত মিনিকেট চাল ৮৫ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর কাটারিভোগ ও জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। ফলে বেড়ে গেছে নিত্যদিনের বাজার খরচ, কষ্টে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

ধান-চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁ। এই জেলায় চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, সরু ধানের সরবরাহ কমে যাওয়া, সরু চালের সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকা, চালের বাজারে করপোরেট কোম্পানি ও গুটিকয় বড় মিল কোম্পানি একচ্ছত্র আধিপত্য এবং অবৈধ মজুতদার গোষ্ঠী ধান-চালের ব্যবসায় যুক্ত হয়ে ধান-চাল কিনে মজুত করায় দাম বাড়ছে।

চালকলমালিকেরা বাজারে ওঠা ধানের এক-তৃতীয়াংশ কিনলেও বাকি অংশ এই মজুতদার গোষ্ঠী কিনে থাকে। এদের অনেকেরই ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নেই।শেখ ফরিদ, অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক

নওগাঁর সুলতানপুর এলাকায় অবস্থিত ফারিহা অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘চালকলমালিকেরা বাজারে ওঠা ধানের এক-তৃতীয়াংশ কিনলেও বাকি অংশ এই মজুতদার গোষ্ঠী কিনে থাকে। এদের অনেকেরই ফুড গ্রেইন লাইসেন্স নেই। এরা অন্য খাত থেকে টাকা এনে ধান-চাল মজুতের ব্যবসা করছে। এদের কারণে আমাদের মতো ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা পথে বসে গেছি। এদের কাছে থাকা প্রচুর অলস টাকা কাজে লাগিয়ে এরা মৌসুমের সময় কম দামে ধান কিনে মজুত করে রাখে। বাজারে ধানের সরবরাহ কমে গেলে এরা মিলারদের কাছে বেশি দামে ধান বিক্রি করে।’

আমন ও বোরোর ভরা মৌসুমে এই জেলায় প্রায় ৮০০ মিল সচল থাকে। তবে বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকায় বর্তমানে ৩৯৪টি চালকল সচল আছে। এর মধ্যে ৭৯টি অটোমেটিক রাইস মিল ও ৩১৫টি হাসকিং মিল চাল উৎপাদন করছে। দেশের অন্যতম বড় এই মোকামে চালের দাম বাড়লে কিংবা কমলে সারা দেশের বাজারে প্রভাব পড়ে।

নওগাঁর কারখানায় উৎপাদিত চালের মধ্যে ডায়মন্ড, নবান্ন ও রজনীগন্ধা ব্র্যান্ডের চাল সারা দেশে বেশ জনপ্রিয়। এসব ব্র্যান্ডের মিনিকেট, জিরাশাইল ও কাটারিভোগ চাল মিলগেটে বর্তমানে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই থেকে তিন সপ্তাহে আগে এসব ব্র্যান্ডের চাল মিলগেটে বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া অন্যান্য অটোমেটিক ও হাসকিং মিলে উৎপাদিত জিরাশাইল ও কাটারিভোগ চালের দামও কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মিলমালিকদের দাবি, সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় গত বোরো মৌসুমে উৎপাদিত প্রতি মণ জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধান ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের সময় এই সব ধানের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ টাকা। ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।

মিলারদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ৬০ কেজি জিরা কিংবা কাটারিভোগ ধান ভাঙালে সাড়ে ৩৮ থেকে ৩৯ কেজি চাল পাওয়া যায়। সেই হিসাবে বর্তমান বাজারদর ও ক্র্যাশিং খরচ অনুযায়ী, প্রতি কেজি জিরাশাইল ও কাটারি জাতের চাল উৎপাদন খরচ বর্তমানে প্রায় ৭৫ টাকা। স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত জিরা ও কাটারি জাতীয় ধানের সরবরাহ নেই। বোরো মৌসুমের শুরুতে চালকলমালিক ও মজুতদারেরা কম দামে বিপুল পরিমাণ ধান সংগ্রহ করে রেখেছেন। মৌসুমের সময় কম দামে কেনা ধান ভেঙে চাল উৎপাদন করে এখন তাঁরা বেশি দামে বিক্রি করছেন। 

ছাতড়া বাজারের ধান আড়তদার শীষ মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা ছোটখাটো আড়তদার রানিং ব্যবসা করি। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে জড়ো করে একসঙ্গে মিলারদের কাছে কিছু লাভ দিয়ে বিক্রি করি। অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়। তবে মজুতদার যারা আছে, তাদের কখনো লোকসান নেই। এরা দিনের পর দিন ধান মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।’

আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব বাজারে এক মাস ধরে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের সরবরাহ নেই। বর্তমানে বাজারে আমন মৌসুমে উৎপাদিত গুটি স্বর্ণা ও স্বর্ণা-৫ এবং চিনি আতপ ধানের সরবরাহ রয়েছে।

নওগাঁ জেলা চালকলমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘মিলারদের বিরুদ্ধে অবৈধ মজুতদারির অভিযোগের সব ক্ষেত্রে সত্যতা নেই। কোনো কোনো মিলে দিনে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মণ চাল উৎপাদনের ক্ষমতা থাকে। আবার কোনো মিলে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মণ উৎপাদন ক্ষমতা। মিলিং ক্যাপাসিটির ২ গুন ধান ও তিন গুণ চাল মজুত রাখা বিধিসম্মত। এখন কেউ যদি মিলিং ক্যাপাসিটির বাইরে ধান-চাল মজুত করে থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। শুধু মিলাররা নয়, ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ছাড়া ধান-চাল মজুতের ব্যবসা করছেন, এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু মিলারদের দায়ী করলে অন্যায় হবে।’ 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, সম্প্রতি নওগাঁর একটি মিলে অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুত রাখার দায়ে এক মিলমালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং তাঁর গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অবৈধ মজুত গড়ে তোলার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধ ন র সরবর হ উৎপ দ ত

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।

বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’

এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’

জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদানির সঙ্গে চুক্তি ক‌রে শুল্ক ফাঁকি
  • শিল্প খাতের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়
  • কারাগারে গাঁজা সরবরাহ করতে গিয়ে নিজেই কারাগারে
  • ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কী
  • ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ নেই, ৯০ কারখানায় ছুটি
  • মঙ্গলবার ৭ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব জায়গায়
  • পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত
  • পর্তুগাল ও স্পেনে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয়, পর্যুদস্তু জনজীবন
  • হাসপাতালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শয্যা ও স্যালাইন সংকট
  • বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ