ঢাকায় শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন ব্যর্থ করতে একটি অসাধু চক্র দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলন বয়কটের অনুরোধ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। এই চক্রান্তের নেপথ্যে দেশের একজন পরিচিত স্টার্টআপ (নতুন ব্যবসা উদ্যোগ) মালিকের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত করেছেন তিনি। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে তিনি এ কথা লিখেছেন।

ফেসবুক পোস্টে কারও নাম উল্লেখ না করলেও সেটি রাইডশেয়ারিং কোম্পানি পাঠাও–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদকে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফাহিম আহমেদ নিজেই। আজ মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে তিনি এ দাবি করেন।

ফাহিম আহমেদ লিখেছেন, ‘প্রিয় ফাইজ আহমেদ তৈয়্যব, আমার নাম ফাহিম আহমেদ এবং আমি পাঠাওয়ের সিইও। যদিও আপনি আমাকে “একটি সুপরিচিত বাংলাদেশি স্টার্টআপের টক্সিক মালিক” বলে সম্বোধন করতে পছন্দ করেন এবং যে বাংলাদেশ ২.

০-এর জন্য আমি অবদান রেখেছিলাম, সেখানে আমার ভাবনার স্বাধীনতাচর্চার জন্য আমাকে বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি দিয়েছেন। যদিও আপনি সরাসরি আমার নাম উল্লেখ না করেই আমাকে অপমান এবং হুমকি দিয়েছেন, তবুও আমার কোনো আপত্তি নেই খোলাখুলিভাবে এবং স্পষ্টভাবে আমার মতামত আপনাদের জানাতে।’

ফাহিম আহমেদের ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিতে যুক্ত থাকা স্টার্টআপ বাংলাদেশের লিমিটেডের (এসবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপদে বহাল থাকায় তিনি বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে ৪ জন বিনিয়োগকারীর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমার এবং জুলাই মাসের ভুক্তভোগীদের কাছে এটা অত্যন্ত আপত্তিকর যে আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক এখনো পদে আছেন। অথচ ৭ মাসের বেশি সময় আগে আপনাকে (ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব) আইসিটি বিভাগের নীতি উপদেষ্টা এবং পরবর্তী সময়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করার পর তাঁকেই প্রথম পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।’

ফেসবুক পোস্টে ফাহিম আহমেদ ওই কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেছেন সামি আহমেদ। তিনি বর্তমানে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের (এসবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফাহিম আহমেদ আরও লিখেছেন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অনুগ্রহ লাভের তাঁর অতীত ইতিহাসের কারণে তিনি স্পষ্টতই এই পদের জন্য অযোগ্য। ফাহিম উল্লেখ করেন, ‘আমি ৪ জন বিনিয়োগকারীর কাছে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি, যাঁদের মধ্যে ২ জন আমার নিজের কোম্পানির দীর্ঘদিনের বিনিয়োগকারী। এই বিনিয়োগকারীদের আমার কোম্পানির সাথে তাঁদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতার জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার সম্ভাবনা বেশি।’

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব লিখেছেন, ‘সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, গতকাল রাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাতে গেলে সেখানে একজন উদ্যোক্তা সরাসরি আমার কাছে এসে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। সেখানে আরও দুজন বলেছেন, তাদেরকেও বয়কটের অনুরোধ করা হয়েছে। আজকে যখন অত্যন্ত সফল এবং আশাজাগানিয়া একটা প্রোগ্রাম হয়েছে, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে স্টার্টআপ বাংলাদেশের ইতিমধ্যেই নোটিশ দেয়া কর্মকর্তাকে নিয়ে হইচই। প্রোগ্রামটি সাফল্য নিয়ে যারা দুকলম লিখতে পারল না, এ কাজটা তারাই করছে।’

দেশের পরিচিত এক স্টার্টআপমালিক কাজটির সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব লেখেন, ‘আমরা এদেরকে সাবধান করছি, প্রয়োজনে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর বাইরে দুঃখজনকভাবে আজকে (সোমবার) বাংলাদেশের দু–একটি জায়গায় শপিং মল, দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে।’

তাঁর ফেসবুক পোস্টের এই অংশের জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফাহিম আহমেদ। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ধরা যাক, আপনি ঠিক এবং আমার অ্যাপ্রোচে আমি ভুল। আমার একমত না হওয়ার ব্যাপারে একমত হতে পারি। কিন্তু আমরা একমত না হওয়ায়, একজন প্রতিমন্ত্রী হয়ে আপনি আমাকে আইনের হাতে তুলে দেবেন? এই অসহিষ্ণুতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরুদ্ধ মতের ওপর আক্রমণ কি আমরা সবাই প্রতিরোধ করিনি?’

ফাহিম লিখেছেন, ‘আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো আপনি আমাকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরকারী অপরাধীদের সাথে ট্যাগ করছেন এবং স্বাধীনভাবে আমার মত প্রকাশের জন্য আমাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তরের হুমকি দিচ্ছেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ সব ক প স ট ফ হ ম আহম দ ব শ ষ সহক র স ট র টআপ ম উল ল খ উপদ ষ ট র জন য কর ছ ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। 

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ। 

পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন। 

১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”

ঢাকা/এমদাদুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • এবার সংবাদ সম্মেলন বয়কট করে পাকিস্তানের প্রতিবাদ
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • আফ্রিদি-জয় শাহর ভাইরাল ভিডিওটি এশিয়া কাপের নয়