ভারতে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছে স্বাধীনতার পরেই। সঠিকভাবে বললে, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পর রাজতন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় এবং ভারত একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। তবে, রাজবংশ লোপ পায়নি।

ভারতের অনেক জায়গায় অনেক পরিবার এখনও রাজা বা নবাব উপাধি ধারণ করেন, নিয়ম মেনে যোগ্য উত্তরাধিকারীর রাজাভিষেক হয়, চলনে-বলনে অতীতের মর্যাদা এখনও বহন করে চলেন তারা। রাজস্থানের কিছু বিখ্যাত রাজপরিবার, পতৌদির নবাব- এদের কথা অনেকেরই জানা। তবে, মুঘল বংশের দিক থেকে যে উত্তরাধিকারীরা রয়েছেন, তাদের কথা অনেকেই জানেন না।

ইয়াকুব হাবিবউদ্দিন তুসি-ও সেই রকমই একজন। তিনি বর্তমানে হায়দরাবাদে রয়েছেন। সেখানেই তিনি থাকেন। তার প্রধান কাজই হলো সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধিকে রক্ষা করা। সেই কাজটি তিনি করে চলেছেন। ইয়াকুবের জীবনযাপন ইতিমধ্যে সকলকে প্রভাবিত করেছে। তিনি একেবারে যেন মহারাজের মতোই থাকেন। তার ফ্যাশন সকলের চোখ টেনেছে। নিজেকে যেমন মোগল বংশধর হিসেবে মনে করেন, ঠিক তেমনভাবেই তিনি থাকেন। এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেহে শাহী রক্ত রয়েছে, তাই তিনি এমনভাবে থাকেন।

ইয়াকুব দাবি করেছেন, যেহেতু তিনি মোঘল বংশধর তাই তিনি হলেন তাজমহলের মালিক। এই তাজমহল তৈরি করেছিলেন মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয় স্ত্রী মমতাজের জন্য।

এদিকে ইয়াকুবের এমন দাবি ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। তিনি যে মোঘল বংশধর সেটি প্রমাণ করার জন্য নিজের ডিএনএ রিপোর্টও রেখেছেন হায়দরাবাদ কোর্টে। এখানেই শেষ নয়, রামমন্দির নিয়েও ইয়াকুব আরেক দাবি করেছেন। সেখানে তার দাবি, এই জমিরও মালিকানা তারই কাছে রয়েছে। তবে এই জমি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন।

দাবির নেপথ্যে রয়েছে মুঘল শাসক পরিবারের রক্তধারা। ইয়াকুব শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের ষষ্ঠ প্রজন্মের উত্তরাধিকারী রূপে নিজের দাবি তুলেছেন। এই প্রসঙ্গে অনেকের মনে পড়ে যেতে পারে রাজপুত বংশের এক উত্তরাধিকারী এবং বিজেপি সাংসদ দিয়া কুমারির সঙ্গে তার বাক-বিতণ্ডা। দিয়া কুমারি দাবি তুলেছিলেন যে, তাজমহলের জমি জয়পুরের রাজপুত পরিবারের, তাই মালিকানাও তাদেরই হওয়া উচিত। সেই সময়ে ২০১৯ সালে, ইয়াকুব এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানান। তিনি সাফ বলেন, যদি রাজপুত নথিখানা থেকে এর সপক্ষে কোনো নথি পেশ করা সম্ভব হয়, তাহলেই কেবল তা মানা যায়। তিনি আরো বলেন, মুঘল সম্রাট আকবরের বৈবাহিক নীতির সূত্রে অন্য মুঘল সম্রাটদেরও রাজপুত পত্নী থাকত, সেই সূত্রে বিবাহে তারা যৌতুক হিসেবেই জমি পেতেন, তাই রাজপুতদের দাবি টেকে না!

আর এবার ইয়াকুব নিজের বংশগত ঐতিহ্যের প্রমাণ হিসেবে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টও জমা দিয়েছেন। তবে, তা থেকে কিছু প্রমাণিত হয়েছে কি না, সে খবর এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। মহারাষ্ট্রে আওরঙ্গজেবের সমাধি ভাঙচুরের সাম্প্রতিক ঘটনায় ইয়াকুব ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদনও দাখিল করেন, যাতে তিনি আওরঙ্গজেবের স্মৃতিস্তম্ভ এবং সমাধি রক্ষার জন্য ভারত সরকার বা রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ জানান। 

ইতিপূর্বে রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ বিতর্কের মাঝেও নিজের বক্তব্য পেশ করেছিলেন ইয়াকুব। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা ওয়াকফ বোর্ডকে বলেছি দিয়েছি যে, এটি তাদের সম্পত্তি নয়। এটি একটি সম্পত্তির বিষয় এবং যদি সম্রাট বাবরের সম্পত্তি বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে আমরাই এর মালিক। সম্পত্তির মালিক হিসেবে সেখানে রাম মন্দির তৈরি হওয়া নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমি কেবল একটি সোনার ইট উপহার দেব না, মন্দির নির্মাণের জন্য পুরো জমিও হস্তান্তর করব।’’

কেউ নিজেকে শাসক পরিবারের উত্তরাধিকারী বলে দাবি করছেন, এমন ঘটনা পৃথিবী বা ভারতের ইতিহাসে বিরল নয়। রাশিয়ার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে যে, একজন নারী নিজেকে রাশিয়ার গ্র্যান্ড ডাচেস আনাস্তাসিয়া বলে দাবি করেছিলেন। তবে, ডিএনএ টেস্টের প্রমাণ সামনে আসার পর তার দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, দেখা যায় যে তিনি একজন প্রতারক ছিলেন।

এবার আসা যাক ভারতে! মালচা মহল নিয়েও একই রকম বিতর্কের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। সেখানেও একজন নারী নিজেকে আওধের নবাবের বংশধর বলে দাবি তোলেন! মালচা মহলেই বসবাস ছিল তার। তিনি নিজেকে বেগম উইলাইয়াত মহল বলে দাবি করেছিলেন। তবে, পরে এই দাবিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এবার দেখার ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট থেকে ইয়াকুব হাবিবউদ্দিন তুসির দাবি নিষ্পত্তি হয় কি না!

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এনএ ট স ট র কর ছ ল ন মন দ র পর ব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির