বাল্যবিবাহের শিকার ১০ ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত
Published: 10th, April 2025 GMT
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় ১৮ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ১০ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বলে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ভুয়া জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে এসব বাল্যবিবাহ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল (কারিগরি) মিলিয়ে ১ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করে। পাঁচটি কেন্দ্রে আজ তাদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১ হাজার ৭৩৯ জন। প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ১৮ জন। এর মধ্যে ১০ জন ছাত্রী।
তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪০৮ জনের মধ্যে ৭ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। সাতজনের পাঁচজনই মেয়ে। তাদের চারজন ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ের ও একজন কুর্শা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ঘনিরামপুর বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জলিলুর রহমান বলেন, পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া ওই চার শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। বাল্যবিবাহ না দিতে অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ কুফল সম্পর্কে বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে অনেকে গোপনে মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিচ্ছেন।
তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দুজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। দুজনই মেয়ে। একজন বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের, আরেকজন ফাজিলপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বুড়িহাট উচ্চবিদ্যালয়েল প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। কোনো শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহের খবর শুনলে আমরা ছুটে গিয়ে পরিবারে লোকজনকে বোঝাই। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে সচেতন করা হয়। কিন্তু গোপনে ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে দেওয়ায় কিছু করতে পারিনি।’
তারাগঞ্জ ও/এ দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন অনুপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে দুজনই ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তাদের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে অধ্যক্ষ আবদুস সালাম বলেন, ওই দুই শিক্ষার্থীর কারও বাবার কিডনির সমস্যা, কারও বাবা অসুস্থ। এ কারণে তাঁরা গোপনে তাঁদের সন্তানদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তাই পরীক্ষা দেয়নি।
তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ২৪৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ জন অনুপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে দুজন ছেলে ও একজন মেয়ে। মেয়েটি ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার বিয়ে হওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন। ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৪৯ জন পরীক্ষার্থীর সবাই অংশ নিয়েছে।
ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় কাজিরা অনেক সময় জাল জন্মসনদ তৈরি করে বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করে থাকেন। অনেক সময় এলাকার বাইরে বিয়ে পড়ানো হয়। ফলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের কিছু করার থাকে না।
সদ্য যোগ দেওয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হালিম বলেন, বাল্যবিবাহ ঠেকাতে হলে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। নিকাহ নিবন্ধন করা কাজিদের কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। ভুয়া জন্মসনদ ঠেকাতে হবে। নিয়মিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে সভা–সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে গ্রামগঞ্জে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার পাশাপাশি অভিভাবকদের নানা সভা, সমাবেশ, অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। এরপরও কোথাও বাল্যবিবাহের খবর পেলে ছুটে গিয়ে তা বন্ধ করা হচ্ছে, জেল–জরিমানাও দেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় অ শ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এআই দিয়ে বানানো ছবি ছড়ানো হচ্ছে: কৃষ্ণ নন্দী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে একটি মহল এগুলো ছড়াচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী এ দাবি করেন।
সম্প্রতি কৃষ্ণ নন্দীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে তাঁর কয়েকটি ছবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে আজ তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিপন কুমার বসু মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে। সে একজন আন্তর্জাতিক চাঁদাবাজ। সে আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং জীবননাশের হুমকি দিয়ে বলে, “আমি হিন্দু হয়ে কেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে হিন্দুধর্মকে বিতর্কিত করছি।”’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমাকে প্রার্থী করায় হিন্দুদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। হিন্দুরা মনে করছে, জামায়াত ইসলামী একটা অসাম্প্রদায়িক দল। জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দু-মুসলমান সবাই ভালো থাকবে। আমাকে যদি মানুষ সংসদে পাঠায়, তখন হিন্দুদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করব।’
শিপন কুমার বসু ও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘তাঁর বাসায় গিয়ে খেয়েছি। তবে এরপর যে সে ব্ল্যাকমেল করবে, সেটা বুঝিনি। বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার আদৌ কোনো সংযোগ নেই। কোনো কথা হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী শ্রেণির যোগসাজশে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন করার জন্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচারসহ বেশ কিছু ছবি এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে অপপ্রচার করছে। আমি এসব অপপ্রচারের জোর প্রতিবাদ জানাই। সাথে এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করছি।’
কৃষ্ণ নন্দী আরও বলেন, ‘আমাকে খুলনা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রমাণিত হয়, জামায়াতে ইসলামী একটি অসাম্প্রদায়িক দল। দলটির কাছে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উপজাতি কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমাকে প্রার্থী করায় সারা বাংলাদেশের হিন্দুদের দাঁড়িপাল্লার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে, এটা গভীর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ।’
মনোনয়ন পরিবর্তন নিয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার আগে খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ। তাঁকে পরিবর্তন করে আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আবু ইউসুফ আমাকে সমর্থন করেন এবং আমরা একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছি। আমাদের ভেতর কোনো ভুল–বোঝাবুঝি নেই। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা রাখি।’
সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ চন্দের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘ব্যবসার কারণে মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। আমি একজন ব্যবসায়ী, তিনি একজন মন্ত্রী। জামায়াতে ইসলামী করি বলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে বটিয়াঘাটা উপজেলার আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে অমুসলিম সম্প্রদায়েরও জামায়াতের রাজনীতি করার সুযোগ আছে। ফলে তাঁদের নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। দেশের অনেক জায়গাতেই জামায়াতের অমুসলিম কমিটি আছে।