বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির অবদান অনস্বীকার্য। তাই কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মেরুদণ্ড বলা হয়। আমাদের সংবিধানে কৃষিবিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, জনগণের  স্বাস্থ্যের মান উন্নয়নকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষি বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কৃষিকাজকে বাদ দিয়ে এ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের জনসংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে কৃষি খাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। 


উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের জিডিপিতে কৃষি খাত অর্থাৎ ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মসংস্থান জোগান এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কাঁচামাল সরবরাহ করে। কৃষি সামাজিক কর্মকাণ্ডের এক বিশেষ ক্ষেত্র, যা জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা, আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এ ছাড়া কৃষি বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য গ্রামীণ এলাকায় ভোক্তাদের বাজারের চাহিদাভিত্তিক পণ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে।

পশুপালন, মুরগি পালন, ধান, পাট, রবিশস্যসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন, মৎস্য, প্রাণিসম্পদের মতো খাতগুলোর সমন্বিত রূপ হচ্ছে কৃষি খাত। বাংলাদেশের কৃষিতে ফসল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সরকারের কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে ফসল খাত সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। প্রতিবছর দেশে কৃষিজমির পরিমাণ প্রায় ১.

২০ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে এবং মাটির অবক্ষয় ও উর্বরতা হ্রাস এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে এর গুণাগুণ কমছে। এ ছাড়া পানিসম্পদও সংকুচিত হচ্ছে। ক্রমহ্রাসমান জমিতে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য বেশি খাদ্য উৎপাদন ও কৃষিজাত শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের প্রয়োজনে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নিবিড়করণ ও বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষির সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশ সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠী ৫১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা। এ ছাড়া দেশে একটি নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য কৃষি উন্নয়ন এবং গ্রামীণ কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অকৃষি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের ভোক্তাদের সঙ্গে কৃষকের সরবরাহ চেইন অব কমান্ড সৃষ্টির  মাধ্যমে কৃষিতে জিডিপির উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। এর ফলে দেশে দরিদ্রতা হ্রাসের পাশাপাশি জনগণের জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।


কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে ছোট খামারের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও পল্লি অঞ্চলে দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে  গতিশীল ও সাসটেইনেবল করতে বাণিজ্যিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন অপরিহার্য। প্রযুক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে সাসটেইনেবল কৃষি ঘনত্বকরণ ও বহুমুখীকরণের জন্য প্রয়োজন কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণের সম্মিলিত দক্ষ ও কার্যকর কৃষি প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা। এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার সহায়তা প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে কৃষকদের মাঝে উন্নত প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা অপরিহার্য। কৃষিকে সক্ষমভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য উৎপাদনশীলতা, সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা, যুগোপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহার, গবেষণা ও গবেষণামূলক কাজের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ দক্ষ মানবসম্পদ সরবরাহ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে কৃষির সর্বাধিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অধিকতর প্রযুক্তিগত সহযোগিতা।

ফসল উৎপাদনের জন্য সাধারণত সারাবছর অনুকূল কৃষি জলবায়ু, খামার পর্যায়ে প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য গবেষণা সম্প্রসারণ পদ্ধতি, কৃষি গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। প্রধান প্রধান শস্য উৎপাদনের জন্য যুক্তিসংগত প্রযুক্তি, দেশব্যাপী কৃষি উপকরণ সরবরাহ নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহী ও সৃজনশীল কৃষক আমাদের কৃষি খাতের সক্ষমতা। কৃষি কর্মকাণ্ডের জন্য পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি, বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক জীববৈচিত্র্য, সেচের প্রাপ্যতা, বিদ্যমান সহায়তামূলক প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো, সরকারের বিদ্যমান আর্থিক সহায়তা, দেশব্যাপী বিস্তৃত কৃষি ব্যবস্থাপনা মনিটরিং নেটওয়ার্ক, বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলের মাঠ পর্যায়ের সরকারি অফিস, ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদের ব্যবহার উপযোগী নির্দেশিকা আমাদের দেশের কৃষকের পারদর্শিতা হিসেবে চিহ্নিত। 


দুর্বল কৃষি বিপণন ব্যবস্থাপনা, ফসল কাটার পর অধিক ক্ষতি, অনেক সময় ফসল কাটার সময় প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে মাঠ থেকে ফসল ঘরে আনা যায় না। ফলে জমিতে অরক্ষিত অবস্থায় ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় কৃষকদের কিছুই করার থাকে না বিধায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কৃষি কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কৃষকের নিজস্ব মূলধনের অভাব, সীমিত সরকারি কৃষিঋণ, কৃষক সংগঠনের সক্রিয়তার অভাব, উপকরণ ব্যবহারের সীমিত দক্ষতা– এগুলো আমাদের কৃষি খাতের অক্ষমতা। রপ্তানি বাজারের চাহিদা পূরণে মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির অভাব, প্রতিকূল পরিবেশে উপযোগী প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততা রয়েছে। অগ্রসরমাণ কৃষিবিজ্ঞানে প্রশিক্ষিত গবেষক, অবকাঠামোমূলক অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা কৃষি খাতের দুর্বল দিক। কৃষিতে বছরে বহুমুখী ফসল ফলানোসহ কৃষি উপকরণের মান নিয়ন্ত্রণে দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আমাদের কৃষি খাতকে ক্ষীণ করে তুলছে। এ ছাড়া কৃষিজাত পণ্যের সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 


কৃষি গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কৃষি উন্নয়নের জন্য একটি সুসমন্বিত গবেষণা পরিকল্পনা অপরিহার্য। গবেষণার মাধ্যমে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা সম্ভব। এতে কৃষিকে চাহিদাভিত্তিক করা সম্ভব হবে। এ জন্য উৎপাদন মাত্রার চেয়ে বেশি প্রয়োজন উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি করা। কৃষি ফার্মগুলোতে উৎপাদনশীলতা ও কৃষকের আয় বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারকে কৃষি সম্প্রসারণকে একটি সেবা প্রদানকারী ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যা বর্ধিত কৃষি উৎপাদনের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষককে উপযুক্ত কারিগরি ও ফার্ম ব্যবস্থাপনাবিষয়ক তথ্য সরবরাহ, পরামর্শ প্রদানসহ নতুন প্রযুক্তির সহযোগিতা উন্নত ফার্ম পদ্ধতি এবং কৌশলগত বিষয়ে সহযোগিতা দেবে।

 
অতএব, কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদে কৃষি সম্প্রসারণ সেবাকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। সে প্রেক্ষাপটে গবেষণা ও সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনে কৃষকের সঙ্গে মতবিনিময়সহ সমস্যা সমাধান এবং কৃষকের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কৃষকদের কার্যকর সহযোগিতা দেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সুযোগ না থাকলে কৃষি উন্নয়ন অনেকটা তলানিতে ঠেকে যাবে। তাই কৃষি উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। 


ড. বি এম শহীদুল ইসলাম: শিক্ষাবিদ ও গবেষক
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য প ব যবহ র ক ষকদ র সরক র র সরবর হ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের