কৃষির উন্নয়নে প্রয়োজন প্রযুক্তিগত সহযোগিতা
Published: 10th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির অবদান অনস্বীকার্য। তাই কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মেরুদণ্ড বলা হয়। আমাদের সংবিধানে কৃষিবিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, জনগণের স্বাস্থ্যের মান উন্নয়নকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষি বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কৃষিকাজকে বাদ দিয়ে এ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের জনসংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে কৃষি খাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা।
উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশের জিডিপিতে কৃষি খাত অর্থাৎ ফসল, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ এগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মসংস্থান জোগান এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কাঁচামাল সরবরাহ করে। কৃষি সামাজিক কর্মকাণ্ডের এক বিশেষ ক্ষেত্র, যা জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা, আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এ ছাড়া কৃষি বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য গ্রামীণ এলাকায় ভোক্তাদের বাজারের চাহিদাভিত্তিক পণ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে।
পশুপালন, মুরগি পালন, ধান, পাট, রবিশস্যসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন, মৎস্য, প্রাণিসম্পদের মতো খাতগুলোর সমন্বিত রূপ হচ্ছে কৃষি খাত। বাংলাদেশের কৃষিতে ফসল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সরকারের কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে ফসল খাত সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। প্রতিবছর দেশে কৃষিজমির পরিমাণ প্রায় ১.
কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে ছোট খামারের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও পল্লি অঞ্চলে দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে গতিশীল ও সাসটেইনেবল করতে বাণিজ্যিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন অপরিহার্য। প্রযুক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে সাসটেইনেবল কৃষি ঘনত্বকরণ ও বহুমুখীকরণের জন্য প্রয়োজন কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণের সম্মিলিত দক্ষ ও কার্যকর কৃষি প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা। এ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার সহায়তা প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে কৃষকদের মাঝে উন্নত প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা অপরিহার্য। কৃষিকে সক্ষমভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য উৎপাদনশীলতা, সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা, যুগোপযোগী প্রযুক্তি ব্যবহার, গবেষণা ও গবেষণামূলক কাজের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ দক্ষ মানবসম্পদ সরবরাহ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে কৃষির সর্বাধিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অধিকতর প্রযুক্তিগত সহযোগিতা।
ফসল উৎপাদনের জন্য সাধারণত সারাবছর অনুকূল কৃষি জলবায়ু, খামার পর্যায়ে প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য গবেষণা সম্প্রসারণ পদ্ধতি, কৃষি গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। প্রধান প্রধান শস্য উৎপাদনের জন্য যুক্তিসংগত প্রযুক্তি, দেশব্যাপী কৃষি উপকরণ সরবরাহ নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহী ও সৃজনশীল কৃষক আমাদের কৃষি খাতের সক্ষমতা। কৃষি কর্মকাণ্ডের জন্য পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি, বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক জীববৈচিত্র্য, সেচের প্রাপ্যতা, বিদ্যমান সহায়তামূলক প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো, সরকারের বিদ্যমান আর্থিক সহায়তা, দেশব্যাপী বিস্তৃত কৃষি ব্যবস্থাপনা মনিটরিং নেটওয়ার্ক, বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলের মাঠ পর্যায়ের সরকারি অফিস, ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদের ব্যবহার উপযোগী নির্দেশিকা আমাদের দেশের কৃষকের পারদর্শিতা হিসেবে চিহ্নিত।
দুর্বল কৃষি বিপণন ব্যবস্থাপনা, ফসল কাটার পর অধিক ক্ষতি, অনেক সময় ফসল কাটার সময় প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে মাঠ থেকে ফসল ঘরে আনা যায় না। ফলে জমিতে অরক্ষিত অবস্থায় ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় কৃষকদের কিছুই করার থাকে না বিধায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কৃষি কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কৃষকের নিজস্ব মূলধনের অভাব, সীমিত সরকারি কৃষিঋণ, কৃষক সংগঠনের সক্রিয়তার অভাব, উপকরণ ব্যবহারের সীমিত দক্ষতা– এগুলো আমাদের কৃষি খাতের অক্ষমতা। রপ্তানি বাজারের চাহিদা পূরণে মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির অভাব, প্রতিকূল পরিবেশে উপযোগী প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততা রয়েছে। অগ্রসরমাণ কৃষিবিজ্ঞানে প্রশিক্ষিত গবেষক, অবকাঠামোমূলক অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা কৃষি খাতের দুর্বল দিক। কৃষিতে বছরে বহুমুখী ফসল ফলানোসহ কৃষি উপকরণের মান নিয়ন্ত্রণে দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আমাদের কৃষি খাতকে ক্ষীণ করে তুলছে। এ ছাড়া কৃষিজাত পণ্যের সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কৃষি গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কৃষি উন্নয়নের জন্য একটি সুসমন্বিত গবেষণা পরিকল্পনা অপরিহার্য। গবেষণার মাধ্যমে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা সম্ভব। এতে কৃষিকে চাহিদাভিত্তিক করা সম্ভব হবে। এ জন্য উৎপাদন মাত্রার চেয়ে বেশি প্রয়োজন উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি করা। কৃষি ফার্মগুলোতে উৎপাদনশীলতা ও কৃষকের আয় বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারকে কৃষি সম্প্রসারণকে একটি সেবা প্রদানকারী ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যা বর্ধিত কৃষি উৎপাদনের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি ও আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে কৃষককে উপযুক্ত কারিগরি ও ফার্ম ব্যবস্থাপনাবিষয়ক তথ্য সরবরাহ, পরামর্শ প্রদানসহ নতুন প্রযুক্তির সহযোগিতা উন্নত ফার্ম পদ্ধতি এবং কৌশলগত বিষয়ে সহযোগিতা দেবে।
অতএব, কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদে কৃষি সম্প্রসারণ সেবাকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা বেশি। সে প্রেক্ষাপটে গবেষণা ও সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনে কৃষকের সঙ্গে মতবিনিময়সহ সমস্যা সমাধান এবং কৃষকের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কৃষকদের কার্যকর সহযোগিতা দেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সুযোগ না থাকলে কৃষি উন্নয়ন অনেকটা তলানিতে ঠেকে যাবে। তাই কৃষি উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
ড. বি এম শহীদুল ইসলাম: শিক্ষাবিদ ও গবেষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য প ব যবহ র ক ষকদ র সরক র র সরবর হ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’