রাজধানীর আলোকি কনভেনশন হলে চলছে ‘রিশকা ফেস্ট-১৪৩২’। উদ্যোক্তা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান রিশকা কানেক্টস। পহেলা বৈশাখ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমাজের বর্ষবরণ ‘বৈসাবি উৎসব’ উদযাপনে এমন আয়োজন। ক্রিয়েটিভ সহযোগী ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান দেশাল।
তরুণদের সামনে বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের বর্ণিল আয়োজনে দেশীয় শিল্প ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া। তরুণ উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বে আয়োজিত ভিন্ন ধারার উৎসবে থাকছে দেশীয় শিল্প ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনী ও উপস্থাপনা।
উদ্যোক্তার স্টলের সংখ্যা ৬৬টি। দেশীয় ঐতিহ্যের বিভিন্ন হস্ত ও কারুশিল্পের স্টল ছাড়াও রয়েছে দেমি খাবারের স্টল। নববর্ষকে ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপনে মেলায় স্থান পেয়েছে দেশের বিভিন্ন চিত্রশিল্প হতে শুরু করে চলচ্চিত্র। বৈসাবি উৎসবের অংশ হিসেবে রয়েছে পাহাড়ি গান ও নৃত্য।
উৎসব আয়োজনে থাকছে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চারটি ব্যান্ডের সলো কনসার্ট ও প্রাচ্যনাটের উদ্যোগে নাটক, মাইমাট শো, সারদ সঙ্গীত পরিবেশন করবে ফুলঝুরি সিস্টার্স। একক সংগীত পরিবেশনে থাকবে তপেশ চক্রবর্তী-অর্জুন কর ও ডিজে একে এস।
দর্শনার্থীর জন্য রয়েছে আলপনা, অরিগামি ও ইকেবেনা নিয়ে কর্মশালা ও প্রদর্শনী। দর্শকের জন্য মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে দিনভর চলবে পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, জাদু প্রদর্শন আর আমিন হান্নান চৌধুরীর স্ট্যান্ডআপ কমেডি শো।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে থাকবে লালসালু,পথের পাঁচালী, বেদের মেয়ে জোৎস্না আর মাটির ময়না। চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর সঙ্গে চলবে প্যানেল আলোচনা। এতে অংশ নেবেন চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর আহসান, অনলাইনে অংশ নেন লালসালু চলচ্চিত্রের পরিচালক তানভির মোকাম্মেল। ফ্যাশনে একাল আর সেকাল নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবে দেশাল কর্ণধার কনক আদিত্য ও ইসরাত জাহান।
উৎসবের তরুণ উদ্যোক্তা আয়ান জানালেন, বাংলাদেশ রূপ বৈচিত্র্যের দেশ। মানুষ স্বভাবতই সৃজনশীল। চিত্রশিল্প, হস্তশিল্প কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, কণ্ঠীশিল্প, অভিনয় শিল্প- সব মিলিয়ে অসাধারণ শিল্প সংস্কৃতি রয়েছে আমাদের। প্রতিটি শিল্পেরই রয়েছে আলাদা স্বকীয়তা। যেমন রিশকা আর্ট- এমন চিত্র কর্মের কথাই যদি বলি, তাহলে বলব, দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে পরিচিত একটি চিত্রশিল্প এটি। যথার্থ মূল্যায়নের অভাবে এমন অনেক শিল্পই হারিয়ে যাচ্ছে। আবার আমাদের দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নৃ-গোষ্ঠীদের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি।
সব শিল্প, শিল্পী ও শিল্প পণ্যের সঙ্গে দেশের মানুষের আত্মার সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে আমাদের এমন উদ্যোগ। মূলত রিশকা ফেস্ট সব শিল্পের সঙ্গে মানুষের যোগসূত্র তৈরির বিশেষ প্লাটফর্ম। যেখানে শিল্প ও শিল্প পণ্য প্রদশনী ছাড়াও থাকছে কর্মশালা, যেখানে মানুষ হাতে-কলমে শিল্পকে ছুঁয়ে অনুভব করতে পারবে বলে উদ্যোক্তারা জানান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ খ উৎসব চলচ চ ত র প
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।