ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা বন্ধের পেছনে যে প্রতিবেশী দেশের কিছু ঘটনা রয়েছে, ভারত তা স্পষ্ট করে দিল। আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এসংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ওই সিদ্ধান্তের আগের কিছু ঘটনা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাহলে ছবিটা পূর্ণ ও স্পষ্ট হবে।

কোন ‘ঘটনাবলি’ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন সে বিষয়টি মুখপাত্র অবশ্য উহ্য রাখেন।

ভারতের সরকারি সূত্র অনুযায়ী, গত মার্চ মাসেই বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করার সুপারিশ করেছিল। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল অবকাঠামোজনিত সমস্যা। যদিও সেই সিদ্ধান্ত রূপায়িত হয় ভারত তার স্থলবন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর। ওই সিদ্ধান্তের কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ গত মার্চ মাসে গৃহীত সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করে।

সরকারি সূত্রের মতে, যাতে সমুদ্রবন্দর দিয়ে পাকিস্তানি সুতা আমদানি করা সম্ভব হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল অন্য এক প্রশ্ন প্রসঙ্গে আজ মনে করিয়ে দেন, ভারতের ওই সিদ্ধান্তের আওতায় অবশ্য নেপাল ও ভুটানের মতো স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র পড়ছে না। ওই দুই দেশে বাংলাদেশি পণ্য যথারীতি সরবরাহ হবে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় এর কোনো প্রভাব পড়বে না।

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে জয়সোয়াল মনে করিয়ে দেন, ভারত বারবার বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে এক ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ সম্পর্ক চায়। ‘গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বাংলাদেশ দেখতে ভারত আগ্রহী।

আজ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবার দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টায় এই সফর।

চলতি মাসেই বাংলাদেশে আসবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এ বিষয়টি ভারত কোন চোখে দেখছে জানতে চাওয়া হলে মুখপাত্র বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে।’ এর বাইরে তিনি অন্য কোনো মন্তব্য করেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই স দ ধ ন ত র পরর ষ ট র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে গেল ১ হাজার ১৯২ কেজি ইলিশ
  • আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ