রাজশাহীতে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হত্যা, বাবার লাশ রেখে মেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে
Published: 17th, April 2025 GMT
রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার ১৬ বছরের কিশোরী রাকিয়া আলফি। নগরীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার্থী সে। এলাকার কিছু বখাটে মাঝেমধ্যেই তাকে বিরক্ত করছিল। গত বুধবার উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বখাটেরা তার বাবা আকরাম আলীকে (৫২) পিটিয়ে হত্যা করে। আজ বৃহস্পতিবার ছিল আলফির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। বাবার নিথর দেহ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষায় বসেছে আলফি।
হত্যার ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী আলফির বড় ভাই ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় আসামিরা হলেন– তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে নান্টু, বিশাল, খোকন মিয়া, তাসিন হোসেন, অমি, নাহিদ ও শিশির। প্রধান অভিযুক্ত নান্টু আকরামের স্ত্রীর মামাতো ভাই।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, আলফিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল নান্টু ও তার সহযোগীরা। গত বুধবার বিকেলে আলফি কোচিং করে বাসায় ফেরার পথে নান্টু আবার তাকে উত্ত্যক্ত করে। এ ব্যাপারে বাসায় এসে ঘটনা বাবাকে জানায় আলফি। পরে আকরাম নান্টুর বাসায় বিচার দেয়। এতে ক্ষুব্ধ নান্টু ও তার সহযোগীরা রাতেই লোহার রড, লাঠি, ইট নিয়ে আলফির বড় ভাই ইমাম হাসানের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় ছেলেকে বাঁচাতে আকরাম এগিয়ে যান। এক পর্যায়ে ইট দিয়ে আকরামের মাথার পেছনে আঘাত করা হয়। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টিকাপাড়া গোরস্তানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
আলফি বলে, ‘বখাটেরা অনেকদিন ধরেই আমাকে উত্ত্যক্ত করছিল। নান্টুর বাসায় আমার পরিবারের পক্ষ থেকে বিচার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের পরিবার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
বাসচালক আকরামের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, ‘মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা চলছে। সারারাত বাবার জন্য কান্না করেছে। বাবার লাশ রেখে মেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে চায়নি। স্বজনরা অনেক বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠায়। আমরা স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলফি ভালো ছাত্রী। তাদের পরীক্ষা শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুনেছি উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার বাবাকে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক হোসেন বলেন, হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
এদিকে আকরাম আলীর খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তাঁর লাশ সামনে রেখে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধন থেকে এলাকাবাসী জানান, দোষীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র পর ক ষ আকর ম নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫