ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে এক কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। অথচ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হলে এ রোগের চিকিৎসা করা সহজে সম্ভব হয়। পাশাপাশি এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনাও অনেকাংশে বেড়ে যায়। ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গের ব্যাপারে সবাই একটু সচেতন হলে এর চিকিৎসা অনেক সহজ হয়ে যায়। ক্যান্সারের সাধারণত যেসব উপসর্গ আছে, সেগুলোর ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষই সচেতন নন, এমনকি অবগতও নন।
অনেক সময় দেখা যায়, একজন ব্যক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ক্যান্সার ধরা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ রোগের প্রাথমিক উপসর্গ আগেই দেখা দিয়েছিল, কিন্তু তিনি সেগুলো গুরুত্ব দেননি। পরে দেখা গেল, ক্যান্সার ইতোমধ্যে তাঁর শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে তখন আর রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সুতরাং এসব প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
গলাব্যথা (চিকিৎসার পরও ভালো হচ্ছে না), গলার স্বর পরিবর্তন হওয়া।
কোনো অস্বাভাবিক রক্তপাত (টয়লেটের সঙ্গে, বমির সঙ্গে, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত)।
শরীরের যে কোনো জায়গায় ব্যথা বা ফোলা।
প্রস্রাব বা পায়খানার পরিবর্তন।
দীর্ঘমেয়াদি কাশি (দুই-তিন সপ্তাহ কাশি, যা চিকিৎসার পরও ভালো হয় না)।
খাবার হজমে সমস্যা বা খাবার গিলতে সমস্যা হয়।
শরীরে যদি কোনো তিল বা ক্ষত হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়ে যায়।
অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস।
মুখের পরিবর্তন, যেমন– ঘা, রক্তপাত, ব্যথা বা অসাড়তা।
ঘন ঘন জ্বর, রাতে ঘাম।
অতিরিক্ত ক্লান্তি লাগা, যা বিশ্রাম নিলেও কাটে না।
দেখা বা শুনতে সমস্যা।
খাদ্যে অরুচি, খিদে না পাওয়া।
ত্বকে পরিবর্তন, যেমন– ত্বক কালো হয়ে যাওয়া, ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি ইত্যাদি।
এসব ছাড়াও ক্যান্সারের আরও অনেক অস্পষ্ট উপসর্গ আছে, যেগুলো থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। এ কারণে শরীরে যদি বড় কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, বিশেষ করে এটি যদি দীর্ঘ সময় ধরে হয় বা খারাপ হতে থাকে, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।